Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রণাঙ্গনে শাশুড়ি ও বৌমা || Samarpita Raha

রণাঙ্গনে শাশুড়ি ও বৌমা || Samarpita Raha

পর্ব.১

অমলকাকুও মনাকাকিমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।তিনি রত্নগর্ভা।পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই রত্নের মত সন্তান পেয়েছেন।এমন চ্যাটার্ড অ্যাকাউট্যান্ট বড় ছেলে,তিনি বিয়ের পর বৌ কে নিয়ে আলাদা থাকতেন।দুই মেয়ে নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করেছেন। ছোট ছেলে এম.কম ,এল এল .বি করে রেলে চাকরি করে।এবার ছোট ছেলে সুমনের সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে। হাওড়ায় মেয়ের খোঁজ পান।পৃথিবীর সব শাশুড়ির মত ভাবী পুত্রবধূকে বলেন আমার বড় ছেলে চাকরিসূত্রে বৌমা ও নাতি নিয়ে বাইরে থাকে আর দুই মেয়ের বিবাহ হয়ে গেছে,তুমি কিন্তু আমার মেয়ে হয়ে যাবে।বিয়েতে কোন কিছু দিতে লাগবে না।
তবে তোমার সঙ্গে যা যাবে সব তোমার ই থাকবে।
ভাবী বৌমাকে একটু আড়ালে বলেন শোনো মা তোমার গায়ে যে গহনা থাকবে না,সেটা আমরা বানিয়ে দেব।সরল সিধা হবু বৌমাও বলে বাবা তো বালা,বারোটা চূড়ি,গলা
সীতাহার,কানের.আঙ্গুলের সবই গড়িয়েছেন ।আচ্ছা আমার ছেলের জন্য হার না বোতাম দেবে তুমি জান।না না দুটোয় দেওয়া হবে।গদগদ করে হবু শাশুড়ি বলেন ,ও ঠিক আছে।আসলে কি জান,একই জিনিষ দুটো হলে লাভ তো নেই।বিবাহের দিন ঠিক হয় ২২শে এপ্রিল।

পর্ব…২

মহা ধুমধাম করে বিবাহ হয়। মধুচন্দ্রিমা তে পুরী যাচ্ছে নবদম্পতি।যাবার দিন শাশুড়ির চোখে জল,বৌমার প্রনাম নিলেন না।যাও যাও বেড়াতে যাও।এত কষ্ট করে ছেলে মানুষ করলাম,পরের মেয়ে কে আনন্দ দিতে যাচ্ছে। বিয়ের আগে উনি বলেছিলেন বৌমা নাকি মেয়ের জায়গা নেবে?কি বলছেন।হানিমুনে তো স্বামী ,স্ত্রী উভয়কে চেনে জানে।বর বলে দিল এই বাড়িতে থাকতে গেলে মায়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলবে।মা যদি বলে সূর্য পশ্চিমে ওঠে ,তাই মেনে নিও।
ভাল বৌ হতে গেলে উত্তর দিও না।নুতন এসেছ,সব লক্ষ্য করো।মাকে খুশী করো।রমা বলে ঠিক আছে আমার দাদা ও বৌদি তো মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।আমিও করব না।
মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে বর সুমন বৌকে সুন্দর শাড়ি কিনে দিল।বৌ রমা এত বারণ করল তাও জোর করে কিনে দিল।আনন্দ করে নবদম্পতি সময় কাটাল।
রমা ,যাবার আগের দিন সুমন যখন ঘুমাচ্ছিল একাই দোকানে গিয়ে শাশুড়ির জন্য,নিজের মায়েরও দুই বিবাহিত ননদের জন্য কটকি সিল্ক কিনে এনে বাক্স ভরে রাখল।
হানিমুন সেড়ে বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আনন্দে হইহই করে ওঠল।সুমন মা কে প্রসাদ টা দিয়ে বলে এই নাও মা তোমার ও বাবার নামে পূজা দিয়েছি।মা খুব খুশী হয়ে বলেন,দেখো বৌমা হানিমুনে গিয়েও আমার ছেলের মন নষ্ট করতে পারো নি।রমা বলে কি যে মা বলেন,সাতদিনে আপনার ছেলের মাথা ঘুরিয়ে দেব।তখন বলে তোমরা সব পারো,বড় ছেলের মাথাটা মুড়িয়ে বড় বৌমা অন্যত্র থাকে।সেটা তো আপনার উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হয় নি বড় ছেলেকে, তিনি কেন বৌয়ের কথায় চলেন।
চুপ করো,বড় ভাসুরের নামে বাজে কথা বলতে তোমার লজ্জা করে না।অবস্থা বেগতিক, সেই সময় সুমন এসে বলে কি গো রমা তোমায় আমি যে শাড়িটা কিনে দিলাম মা ,দিদিদের দেখিয়েছ।রমা বলে তুমি একটু দেখাও,আমি পড়োটা বানাচ্ছি।সুমন মাকে দেখায় শাড়িটা।বা বা খুব সুন্দর।মা সুমন কে বলে আমি ভেবেছিলাম তুই আমার জন্য একটা কটকি চাদর আনবি।
রমা সবাই কে সন্ধ্যার জলখাবার দেয়।হঠাৎ শাশুড়ি বলে,একটু সংযমী হও,এইতো বিয়েতে এত শাড়ি পেয়েছ,তা শাড়ি না কিনলে চলছিল না।সুমন বলে না না মা,ওকে আমি জোড় করে দিয়েছি।ও তোমার কথা বলেছিল,আমিই বললাম ব্যাগে বেশী টাকা নেয়।শাশুড়ি বলে
জান রমা এই তিন তলা বাড়িটা দেখছ ,আমার গায়ের সব গহনা চলে গেছে।তিলে তিলে পয়সা জমিয়ে বাড়ি করেছি,ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছি।
আরে মা রাগ করছ কেন?
রমা শ্বাশুড়ি,দুই ননদকে শাড়ি দেয়,বলে আমার বিয়ের আগের টিউশনির টাকায় কেনা।বাবা পরেরবার আপনার জন্য আনব।সবাই কি যে খুশী।সুমন রমাকে বলে কখন কিনলে।ওই আসার আগের দিন তুমি ঘুমাচ্ছিলে।

পর্ব..৩

এই পাঁচ বছরেও রমা শাশুড়ির মেয়ে হয়ে ওঠতে পারি নি।তাঁর সারাক্ষণ ভয় ছোটছেলেকে নিয়ে বৌমা আলাদা হয়ে যায়।বৌমা হাবে ভাবে শাশুড়িকে বুঝিয়েছে,এক হাতে তালি বাজে না।সংসারটা বাঁচাতে গেলে সবাইকে ভাল ব্যবহার করতে হয়।কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হয়।বাড়ির বৌয়ের ক্ষিধা পায় না,বাড়ির বৌ টেলিভিশন দেখে না,জোড়ে হাসে না,কাঁদে না,পাশের বাড়ির সাথে কথা বলে না..ইত্যাদি বানি শুনতে শুনতে একটা নাতিও উপহার দেয় বৌমা। নাতি হওয়ার পর বাচ্চার কাঁথা কাচা সব রমাকে করতে হয়।যদি কোনদিন সুমন কেচে দিত,তাহলে শাশুড়ি ননদের গলা উঁচু করে বলত,কি কপাল তোর ভায়ের।অফিস যায়,ছেলের কাঁথা কেচে।বোনরা তো নিজের ভাই ও দাদার প্রসংশা করতে থাকে তাদের বরদের কাছে।রমা ভাবে এতবছর যতবার মুখ খুলেছে তার দুই হাতা ও খুন্তি ননদ একতরফা মায়ের কথা শুনে কটু কথা শুনিয়ে গেছে।এই তো জীবন। শ্বশুর মারা গেলে শ্বাশুড়ির খিটখিটানি বৃদ্ধি পেতে লাগল। সত্যি তো স্বামী মারা গেলে সবার কষ্ট হয়। শাশুড়ির থেকে কত রান্না শিখেছে রমা। রমা দেখেছে শাশুড়ি তার যাবতীয় পূজার কাজকর্ম মেয়েদের নিয়ে করতে ভালবাসেন। রমা ভেবেছে ভালই হয়েছে ,তাকে তো খাটতে হয় না।
এবার ছোটছেলের বিলাসপুরে বদলি হল।রমা ও তার ছেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে গেল।দিদিদের ,মায়ের সে কি কান্না।রমা ভাবে কবে বরের কাছে যেতে পারব।আদৌ যেতে পারব কিনা।এরমধ্যে শাশুড়ি হার্টের অসুখ হয়,রমার সেবায় খুব খুশি।সবাইকে ডেকে বলেন আমার সোনা বৌমা।

পর্ব..৪

সুমন বিলাসপুরে গিয়ে ফোন খুব কম করে।কেমন উদাস ভাব।বাড়িতে টাকা পাঠায় না।শাশুড়ি বলে চলো তোমাকে বিলাসপুরে রেখে আসি।না বৌমা তোমার বারণ শুনব না। শাশুড়ি রমা ও নাতিকে নিয়ে বিলাসপুরে হঠাৎ পৌঁছে যায়। বৌমা ও নাতিকে ছেলের কাছে দিয়ে দিন দশেক ছেলের কাছে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।ছেলেকে বলে আসেন এরকম ভাল বৌমা হয় না,কষ্ট দিবি না। গলা জড়িয়ে শাশুড়ি ও বৌমার কি কান্না।
ঠিক দুমাস বাদে শাশুড়ি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যান।রণাঙ্গনে শাশুড়ি ও বৌমার যুদ্ধটা সবাই দেখে,ভালবাসাটা কারর চোখে পড়ে না।রমা শাশুড়ির ফটোতে মালা দেয় আর বলে মা যেখানেই থাকো পরম শান্তিতে থেকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress