Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » এক মায়ের কিছু কথা || Samarpita Raha

এক মায়ের কিছু কথা || Samarpita Raha

রমার একমাত্র কন্যা রমলার আজ গোধূলি লগ্নে বিবাহ।সানাই এর সুরে রমার মন করুণ হয়ে আছে, তার স্বামী অর্পণের কথা শুধু মনে পড়ছে। রমা আর অর্পণের একমাত্র কন্যায় ছিল রমলা। কত আশা ও স্বপ্ন ছিল দুজনের। কিন্তু সবাইকে ফাঁকি দিয়ে রমার স্বামী পৃথিবীর থেকে ছুটি নিয়েছে, তখন রমলা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।রমলা যখন প্রথম শ্রেণি তে পড়ে তখন অর্পণের হার্টের অপারেশন হয়। কোনো কারণে দুষিত রক্ত হার্টে ঢুকে যায়। তারপর পাগলের লক্ষণ দেখা দেয়। সারাদিন ঘরে চুপ করে বসে থাকত। রেলের চাকরী করত অর্পণ।
মেয়ে মানুষ বরের সেবা করে রমা অফিসে যেত। একটা প্রাইভেট কম্পানি তে কাজ করত রমা।
স্বামীকে খাবার দিতে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিত। দ্বিতীয় বার নিয়ে খাওয়াতে গেলে কিছু বলত না।
কত খাবার নষ্ট করবে। তাই প্রথমবার জল দিত। এমনভাবে জলটা ছুঁড়ত অর্পণ,রমা স্নান করে যেত।
অনেকেই বলেছিল পাগলা গারদে দিতে।রমা কোন কথায় কান দেয় নি। কারণ ডঃ জবাব দিয়ে দিয়েছিল।যখন মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে তখন অর্পন মারা যায়।তারপর থেকে মেয়েকে পড়াশুনা করানো,গান শেখানো সবই একা হাতে রমা করেছে।
মেয়ে কম্পিউটার নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিবাহ হচ্ছে আজ।মেয়ে ও জামাই একই অফিসে কাজ করে।রমার মেয়ে রমলার সম্প্রদান মেসো করছে।মাসী,মেসো,মাসীর ছেলে বিয়ের সব কাজেই আছে। ওরা ছিল বলে রমা কিছুটা চাপ কম হয়েছে।
গোধূলি লগ্নে মেয়ের বিয়ে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এখন রাত একটা। মেয়ের বাসর রাত।অফিসের ছেলে মেয়েদের হা হা হি হি শব্দ। কেন জানি না,মেয়ে ছাড়া একা ঘরে শুতেও রমার কান্না পাচ্ছিল।ওরা গান গাইছিল।
আমিও করছিলাম।

চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে,উছলে পড়ে আলো..
ও. রজনীগন্ধা তোমার,গন্ধসুধা ঢাল।

রমাও তো মানুষ। কত ছোট থেকে কষ্ট করেছে।
তারপর মেয়ে জামাই গান শুনে ওদের ঘরে থাকার জন্য জোড়জাার করছিল।রমলার মা কখনো মেয়ের বাসর ঘরে যেতে পারে।।তারপর প্রায় জোড় করেই বাসর ঘরে নিয়ে যায়। বেশ কয়েকটা গান গেয়ে নিজের ঘরে চলে আসে রমা।
তারপর নিস্তব্ধতা, চাপা কান্নার আওয়াজ।মেয়ে কাঁদছে,কিন্তু কেন?রমা ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে উঠেছে,মেয়ে জামাই পাশের ঘরে তবুও পৌঁছতে পারছে না।
রোমি রোমি চিৎকার করতে করতে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে ওঠে। হায় রে সারা রাত কি স্বপ্ন দেখেছে রমা। ঘুম থেকে ওঠে নানান বিয়ের বাড়ির কাজকর্মে মেতে ওঠে।
মেয়ে মা কে কনকাঞ্জলি হাসতে হাসতে দিল,বলল মা রোজ দুজনে আসব,রাতের খাবার খেয়েই বাড়ি যাব।
সত্যি ই এইভাবে চলছিল।
তারপর মেয়ে জামাই হুস করে প্যারিস চলে গেল। সঙ্গে জামাই এর বাবা মা গেল। কিন্তু রমাকে একবার ও বলে নি। মেয়েটাও কেমন স্বার্থপর মনে হল। মেয়ে মা কে বলল তোমার তো অল্প বয়স,চাকরি করো,তুমি চালাতে পারবে। মা কে বলে গেল বেশি হুটোপুটি করে শরীর খারাপ করে আমায় বিভ্রান্ত করো না।এতদূর থাকি আসতেও পারব না।
একটা কাজের মহিলা নিয়ে রমা একাই থাকে।
মেয়ে ও জামাই প্যারিসে ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছে।মা কে ফোন করে কিন্তু যাবার কথা বলে না। অভিমানী মা ও বলে না যাবার।
অসুখ করলেও জানায় না।মেয়ের সাথে প্রায় আট বছর দেখা নেয়।
রমা ভুলে থাকার জন্য গানের স্কুল খোলে।কাজ থেকে অবসরর ও নিয়েছে।
মেয়ে তো পরের বাড়ির জন্য,এই বলে নিজেকে স্বান্ত্বনা দেয়।।
রমার বেয়ান ও বেয়াই গত হয়েছেন। এবার মেয়ের বাচ্চাকে কে দেখবে।তখন মেয়ে মা কে বলে মা তুমি চলে এস।নাহলে আমার চাকরি ছাড়তে হবে।তোমার নাতনির জন্য চলে এস।
রমা ভাবে বিয়ের বারো বছর পর মা কে দরকার ,কেননা নাতনিকে কে দেখবে।
রমা খুব ভেবে মেয়েকে লিখল,মা আমি যেতে পারব না।তুমি যে কাজে বহাল করে আমায় নিয়ে যাচ্ছ।তা বয়স হয়েছে তো পারব না।
ঐ রমা গান শেখাচ্ছে বাচ্চাদের.. কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে…বাচ্চারা ও বেশ গাইছিল।
এমনি করেই যাই যদি দিন যাক না। রমা আজ খুব ভাল আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress