স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে
শঙ্করবাবু ও শর্মিলা বৌদির একমাত্র ছেলে শুভম ।ও বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট থেকে স্কুল জীবন শেষ করে যাদবপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পডছে় । শেষ বর্ষ।
সেই সময় হার্ট অ্যাটাকে শর্মিলা বৌদি মারা যান।
শঙ্করবাবু তখন ভাবেন কি করে সংসার চালাবেন।রাঁধুনি, ঝি,মেথর,ডাইভারের হাতে সব দায়িত্ব দেন।চাল,ডাল,আনাজ এই কিনছেন ,দুদিন বাদে সব শেষ।সব কাজের লোক চুড়ি করে শেষ করে দিচ্ছে।বউ না থাকাতে নাকানিচুবানি দশা।বাবা আর ছেলে সারাক্ষণ মায়ের অভাব অনুভব করে।
আত্মীয়েরা বলেন একটা বিয়ে করতে,উনি শুভমকে বলে তুমি বি.টেক করে বিয়ে কর,নাহলে অগত্যা আমায় করতে হবে।চব্বিশ বছরের ছেলে বাবা বিয়ে করলে লোকে কি বলবে,তাই নিজের পরিচিত বান্ধবী কে বিবাহ করে।
এবার দুজনেই চাকরী ও পড়াশুনা শুরু করে।
হায়রে শঙ্করবাবু দেখলেন ,আরো চাপ বাড়ল।এখন তিনজনেই বাইরে কাজ।অগত্যা তিনি ছয় মাস আগেই চাকুরি থেকে অবসর নিলেন।
পুরুষমানুষ এত কাজ পারেন কি।ঘরের ও বাইরের সব কাজ সামলাতে সামলাতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন।ছেলে ও বৌমা এম.বি.এ পড়া শেষ করে।অবসরের পর প্রায় তিন বছর এইভাবে চলে যায়।
একদিন রবিবার ছুটির দিনে শঙ্করবাবু বৌমা ও ছেলেকে নাতি বা নাতনি আনার কথা বলেন,একাকিত্ব জীবন ভাল লাগছে না।বৌমা বলে বাবা এখনো পড়া বাকি আছে,একটু পরে । ব্যস শঙ্করবাবু এমন চিৎকার করে উঠেন ,ছেলে আর বৌমা ভয়ে কেঁদেই ফেলে।
শুভম সাতাশ বছর বয়স অবধি বাবাকে কখনোই কোন কারণেই রাগতে দেখে নি।
আসলে উনি ও প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন।এই তিন .চার বছর কাজ ,সংসার সামলাতে গিয়ে শর্মিলার কথা একান্তে ভাববেন ,সেটা পারেন নি।তাদের এত সুন্দর মনের মিল ছিল,কোন ঝগড়া ,অশান্তি কিছুই ছিল না।আজকের দিনে শর্মিলা কে প্রথম দেখেছিল ঊনত্রিশ বছর আগে, তারপর একটু ঘোরাঘুরি, ভাল চাকরি পাওয়া, তাররপর বৌয়ের সাথে দীর্ঘ চব্বিশ বছর এক সাথে থাকা।এইভাবে তার শঙ্কর কে একা সব দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে চলে গিয়ে শর্মিলা ভাল করেনি।আজ ভোর বেলায় এসে বলল আমি নাকি তাকে ভুলেই গেছি।আজকের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি শর্মিলাই মনে করাল। আর বলল ছেলে ও বৌমাকে সংসার বুঝিয়ে দাও।আসলে সবই স্বপ্ন ছিল।হয়তনিজের অবচেতন মনে চিন্তা করেছেন,তাই একটু ক্ষিপ্ত ও অন্যমনষ্ক ছিলেন।
ছেলে বেশ কিছুক্ষণ বাদে গুটি গুটি পায়ে বাবার ঘরে ঢোকে।বাবা ছেলেকে বলে আমার জন্য ভাল বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্হা কর।আমি কয়দিন নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে যাই।বাকি কটা দিন তোমার মায়ের স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে চাই।বেশী দূরে খুঁজিস না।তোমাদের ও দেখতে চাই।
ছেলে আর বৌমা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দিয়ে হাঁপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে।বৌমায় ব্যাগ.বই.ঔষধ সব গুছিয়ে দেয়।
ফোনে টাকা শেষ হলেই বাবা বলো,আমি ভরিয়ে দেব।এই কাজটা চাকরি অবসরের পর বৌমায় করত। বাবা বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া পর্যন্ত গম্ভীর ছিলেন।কিন্তু ছেলে ও বৌমার উচ্চস্বরে কান্না দেখে শঙ্করবাবু ও কেঁদে ফেলেন।
বৃদ্ধাশ্রমের সবাই বলেন আপনি স্বেচ্ছায় এসেছেন তা আপনার ছেলে ও বৌমার কান্না দেখে বোঝা যাচ্ছে।আসলে যারা দিয়ে যায় তাদের মুখে একটা শান্তির প্রলেপ. থাকে।ঠিক আছে কয়দিন থাকুন,ভাল না লাগলে বাড়ি ফিরে যাবেন।
সত্যি একজন বউ স্বামী ছাড়া থাকতে পারেন।কিন্তু একজন স্বামীর স্ত্রী ছাড়া থাকাটা বড়ই কষ্টকর।
বাড়ি গিয়ে শুভম ও ওর বউ ঠিক করে বাবাকে ফিরিয়ে আনতে হলে সন্তান আনতেই হবে।বাবা ছাড়া বাড়িতে কি করে থাকবে।