Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মজার কলহ || Samarpita Raha

মজার কলহ || Samarpita Raha

একদিকে সাংসারিক ব্যাটিং চলছে, অন্যদিকে টেলিভিশনে ক্রিকেটখেলা চলছে। আমি হলাম প্রতিবেশি,আমার হল বাড়ি ,আর পাশে সবই ফ্ল্যাট।
শুনতে পাচ্ছিলাম কাকু কাকীমার সাংসারিক দাম্পত্য কলহ।জানালা খুলে পেপার পড়ছিলাম,এরকম মিষ্টি ঝগড়া শুনতে কিযে ভাল লাগছিল।পেপার হাতে,মন নেই পড়ায় আমার,ভাবুন কি পচা প্রতিবেশী।পরের বাড়ি ঝগড়া উপভোগ করছে।
কাকীমাকে দেখতেও পাচ্ছিলাম,খুন্তি নেড়ে রান্না করছেন।কাকীমা তরকারি নাড়ছেন আর বলছেন একটা মেয়ে থাকত,তাহলে তুমি মেয়েদের কষ্টটা বুঝতে,একটা ছেলে সেও বিদেশ থাকে।

হঠাৎ কাকীমার চিৎকার, আরে কোথায় তুমি?কাকু পাশে বেডরুমে শুয়ে ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন ,কাকীমা ডাকতেই কাকু হাজির,তাড়াতাড়ি বলো গিন্নী তোমার সমস্যাটা কি?
কাকীমা ,কাকুর সামনে দাঁড়িয়ে ,তাও উচ্চস্বরে বললেন আমার আবার কিসের সমস্যা। তাড়াতাড়ি বলো গিন্নী ,সাত বলে নয় রান দরকার।কাকী বললেন ও তুমি ব্যাটিং করছ। মাউপুষি গিন্নী রাগলে তোমায় কি মিষ্টি লাগেনা,ছোট করে চা দেবে,আর পকোড়া,খেলা জমে গেছেগো।এবার কাকা ও কাকীর ব্যাটিং শুরু হল…
আমি কি তোমার চাকর,কোথা থেকে এলেন নবাবপুত্র।আরে গিন্নী নবাবের কি মিল দেখলে। তুমিতো নবাব বাড়ির মত পরোটা,কাবাব বানাওনি।
আর শোন নবাবদেরতো অনেক বউ ছিল।
তাহলে একটা অন্তত বিয়ে করতে হয়।
কাকী বলছেন ঘাটেরমড়া.,অন্তর্জলিযাত্রায় যে বুড়ো পাঠ করেছিল তারমত বুড়ো।শখের বলিহারি।ছেলে আসুক বলব তোর বাবার আরেকটা বৌ চায়।
ওহো আমি নবাব হলে,তুমিতো বেগম।

আচ্ছা গিন্নি তুমি হাঁপিয়ে যাও না।হাঁপাব কেন বলত?শোন আমাদের বংশে কোন কাউর হাঁপানি ছিল না।আরে সকালে বাজার আনলাম।একবার চন্ডী পাঠ করে বললে আমি নাকি বাজারে যায় পোঁকা কাটা বেগুন আনতে,গরুতে খাওয়া মূলো,কুকুরের লেজের মত পুঁইশাক,মরা মাছ কিনতে।যখন ব‍্যাগ থেকে ইলিশটা বার করে বললাম।সত্যি গো গামছাটা নিয়ে নদীর ঘাটে গেছিলাম।একটা ইলিশ দেখলেই গামছা পরে নদীর জলে ঝাঁপ দেব।হল না গো,অগত্যা স্টল থেকে কিনে আনলাম।জান্ত তো ছিল না তাও বললে কি টাটকা গো।কত বড় মাছ কিনেছ।বাবা একদিন ইলিশ খাইয়ে শোনাচ্ছে।আচ্ছা বেগুন পুড়িয়েছ দেখছি।পোকা ছিল না তো।না ছিল না,আমি দেখে নিয়েছি।আসলে পোকায় কাটা বলেছিলে তো।শোনো সোমের বাবা রাতে মুলো সিদ্ধ খাবে?আরে গরুতে খাওয়া মূলো খাব।না গো গরুটা শেষ পর্যন্ত খায় নি।ভাবল এই সরু মূলোগুলি সোমের বাবার জন্য থাক।এত কষ্ট করে বাজারে আসবে।পুঁইশাক,মূলো ও ইলিশের মাথা দিয়ে রাঁধবে।কাকু ও কাকিমার এই মিষ্টি ঝগড়া কোন লিংক পাচ্ছিলাম না।হেসেই যাচ্ছিলাম।
যা ইন্ডিয়া হেরে গেল,খেলাটাও দেখছিলাম তোমার সহ্য হচ্ছিলনা।
হ্যাঁ বেগম কি বলছ বলো।উমার মা কাজে আসছে না, তোমার তো উচিৎ আমার আঙ্গুল কেটে গেছে,একটু বাসনগুলো ধুঁয়ে দেওয়া। বাপু কিনা দুপুরে ইলিশ খেয়ে বিকেলে পকোড়া খাবেন। এই বুড়ো বয়সে নোলা কমে নি।
কাকু বাসন মাজছিলেন আবার টিপ্পনী দিলেন ,
ইস নবাব হলে বেশ কটা বৌ হত,আমার বাসনগুলো মেজে দিত।
কাকীমা বলছেন একপাল ছেলে নিয়ে খেলা দেখতে।তাদের নামও মনে রাখতে পারতে না।আরে যে বৌয়ের যে বাচ্চা,তার নাম ধরে ডাকতাম।
কাকু বললেন একটা বাটি বেসিনে ছিল,তার জন্য আমার খেলাটা দেখতে পেলামনা।
হঠাৎ ফোন ছেলের,কাকুকে সড়িয়ে দিয়ে মোটা গলায় বললেন কাকিমা সরোনা,খাটে গিয়ে বসো তো,শুধু পায়ের কাছে ঘুড়ঘুড় করো।
হ্যালো …সোনু,বাবা ভাল আছিস,কি মধু গলা।আমিতো ফোনের ওপ্রান্তের ছেলের গলা শুনতে পারিনি,কাকীমা যা বলছিলেন,তাতেই বুঝেছি। হ্যাঁহ্যাঁ তোর বাবা মন দিয়ে খেলা দেখছে।এইতো আমি আর তোর বাবা গল্পই করছিলাম,একটু চা করতে গেছিলাম সোনা। তোর বাবার আবার বায়না করল পকোড়া খাবে।না না বেশি দেবনা।মুখ ফুটে চাইল ।দেখ না হাত কেটে গেছে বাবা ছুট্টে এসে বাসন মেজে দিল।
এই শুনছ তোমার এই বেগমের ছেলে ফোন করেছে,কাকুর হাতে ফোন,কাকু বলছেন ছেলেকে, না না তুই ভুল শুনলি, মা বলল বেগুনী ভাজব।

আমি জানলায় বসে হাহা করে হাসছিলাম।কাকু ফোন রেখে বললেন এ আমাদের ঝগড়া নয় মা।তুমি বুঝবে আমাদের মত বয়স হও ,এ হল বার্ধক্যের কলহ। কাকীমা বলল এই পাঁজি মেয়ে আমাদের ঝগড়া শুনে ফেললি।আমি বললাম তোমরা বেগুনি খাবে,তোমাদের জামাই বা ছেলে যা ডাকো,একটু হাতটা বাড়াও আমি বেগুনি দিচ্ছি। হাহাহা।
পরের বাড়ির ঝগড়া শুনতে নেই কিন্তু , কি বলেন এরকম মিষ্টি ঝগড়া চলবে।আসল কথা সবার ছেলে ,মেয়েরা বড় হয়ে গেলে একটু একাকিত্ব লাগে।একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বাঁচতে চেষ্টা করেন।ওমা কাকু আর কাকিমা চা আর বেগুনি খাচ্ছেন, হেসেহেসে গল্পও করছেন। আমরা তো ঝগড়া করলে টানা সাত দিন কথা বন্ধ থাকে।এই মিষ্ট কলহ এই মিষ্টি মিষ্টি কথা।কাকিমা আমায় ডেকে বললেন জানিস আমার ছেলে আর সাতদিন বাদে আসছে ।আমরা একবছর তিনমাস এগারদিনের মাথায় ছেলেকে দেখব।দুজনের চোখে আনন্দাশ্রু।
আজ পয়লা জানুয়ারি পাশের বাড়ির কাকু,কাকিমা,ভাই এর উচ্চ হাসি শুনতে পাচ্ছি।কিছুক্ষণ বাদে দরজায় কলিং বেলের শব্দ।কাকু,কাকিমা ও তাদের ছেলে কুশল মিষ্টিমুখ করাতে এসেছেন।আজ নতুন বছরে একটা ভাই পেলাম।ভাইকে বললাম তোমার বাবা ও মা কে দেখব ,তুমি নিশ্চিন্ত থেকো।তবে বছরে দু বার অন্তত এসো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *