ছন্দ তোকে খুঁজতে আকাশ-পাতাল এক করেছি
তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে তুই;
জীবনটাই তো ছন্দহীন ছন্দছাড়া••
বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
নেই বললেই কি চলে?
নৃত্য,গীত-ধুর্ সবেতেই তো ছন্দ আছে-
জীবন ছন্দছাড়া –
হ্যাঁ আমার জীবন ছন্দছাড়া,
সেই সেবছরে মহালয়ার ভোরে••
রেডিও নেই, টিভি নেই ঘরে
তাই দাদা নিয়ে গেল বোসবাড়ীতে,
ঐখানেই ছন্দটা জীবনের গেল কেটে–
বোস বাড়ীর আগের যে অন্ধকার গলি
সেখান থেকে হাতবদল হলাম আমি,
দাদার হাতে টাকার গোছা••
‘ছিঃ ছিঃ,আমি না তোর ছোট বোন!’
আর বলতে পারিনি,মুখ বন্ধ করে গাড়িতে তুলেছিল ওরা।
গাড়িতে উঠতে উঠতে দাদার হিসহিসে হুঙ্কার ভেসে এলো;-
‘বোন,ছোঃ, বাজারে চাকরি নেই,
এখন এই টাকায় ব্যবসা করব।’
শুনতে পাই দাদা এখনও ব্যবসা করে,
মেয়ে পাচারের ব্যবসা।
ছোট বোন রিনির কিন্তু বিয়ে দিয়েছে দাদা,
শুধু আমার জীবনের ছন্দ কেড়ে নিয়ে-
ব্যবসায় হাত পাকিয়েছিল দাদা!
তাই কি? আমার আগে আর কোনো বোনের এমন–
আশ্চর্য!সেই দাদা এখন বিয়ে করেছে,
ছেলের বাপ হয়েছে।
গত রবিবার নিউ মার্কেটে সপরিবারে পূজোর কেনাকাটা করতে এসেছিল,
বোরখার আড়ালে আমার সজাগ দৃষ্টি-
ওরা মা,বাবা,রিনি,রিনির বর,
এমনকি নিজেদের জন্যেও কিনল।
বুকের মধ্যে জ্বালাটা থামাতে পারছিলাম না,
বোরখা থেকে মুখটা বার করে একদৃষ্টে তাকালাম-
হ্যাঁ,দাদার দিকে,
হতে পারি পিঠোপিঠি ভাই বোন,
অনেক ঝগড়া করেছি, কিন্তু রক্তের বন্ধন!
আচমকা বিল মেটাতে মেটাতে দাদার চোখ পড়ল আমার দিকে,
প্রথমে চমকে উঠল, তারপর মুখটা কঠিন করে বৌকে বলল;-“তাড়াতাড়ি কর,একটা বাজে দোকানে এসেছো।
বৌ কিছু বলতে যাচ্ছিল-থামিয়ে দিয়ে দাদা বলল;-‘যত রাস্তার মেয়েছেলে গুলো আসে এই দোকানে,চলো।’
সেদিনও কিছু বলতে পারিনি,
আজও নির্বাক বিস্ময়ে –
ওদের ছন্দোবদ্ধ চলে যাওয়া দেখলাম,
দেখলাম বুকে জলন্ত অগ্নিপিণ্ড নিয়ে–
কিন্তু ছন্দহীন ছন্নছাড়া এ জীবন-
আজ আর সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ।।