নদী কথায় সুবর্ণরেখা
সুবর্ণরেখা,,,,, নদী তো নয় , যেন এক কাহার কন্যার মহাকাব্য,,,,এই ভালোবাসায় ডগোমগো তো এই রাগে চন্ডালিনী,,,,,দুকূল প্লাবী বন্যায় ভাসিয়ে দেয় !,,,,তারপর আবার শান্ত হয়ে গুন গুন করে কাঁদতে থাকে,,,তখন তার মূর্তি দেখে কে বলবে সে এত ভয়ংকরী।
এই নদীর বাঁকে বাঁকে রয়েছে পরানকথার আকর ,,,,,,কত না কাহিনী ,,,,পুরাণ থেকে আধুনিক যুগ ,,,,সে বয়ে চলেছে একই গতিতে,,,,, মাঝে মাঝে গতিপথ বদলালেও আসল চরিত্র একই আছে।
এই নদীর ঘাট ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘুরে বেড়া ই আমি,,,,, কখনও দলমা ,,দোমোহানী,,,,কখনও কুঠীঘাট,,,, ক খনও রামেশ্বর ॥”সুবর্ণরেখা”,,,,,,, এর বালিতে নাকি সোনার কণা পাওয়া যায় !এই নদী সত্যিই স্বর্ণপ্রসবিনী,,,,,মীন ফসলে সমৃদ্ধ! চিংড়ি ,পাবদা,খলসে, ট্যাংরা,পুঁটি ছাড়া ও বড় চিংড়ি , , , চিংড়া ও কালবোশ এর প্রধান ফসল॥নদীর বালি ও নুড়ি , , , , তাও সংগ্রহ করে জীবিকা চলে অনেক মানুষের॥
নদী যখন ছোটনাগপুর মালভূমি ও ঝাড়খণ্ড দিয়ে বয়ে চলে তখন এক রূপআবার পলল সমতল পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা তে আর একরকম ॥
ঝাড়খন্ডের ডুঙ্গরি টিলা ,টাড় চাট্টানে,জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদী যেন আদিবাসীকন্যা ,,,কোন ভয় ডর নেই॥ স্বাধীন ,,,,,,,!নদীর দু কূলে জঙ্গল আর তার বাসিন্দা দের পরানকথা! মাদলের দ্রিম দ্রিম আর আড় বাঁশি সারিন্দার মধুর সুরে ভেসে যায় সারা জঙ্গল পাহাড়!খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার এই অঞ্চল !মানভূম,সিংভূম ,ধলভূম গড়ে র ভাঙ্গা প্রাকার ,মিনার ছুঁয়ে বয়ে চলা নদী শোনায় অতীত কাহিনী!
রাত নামে ক্লান্ত বকের পাখায় ভর করে!শুরু হয় নিশিজাগর কাব্য!রাতচরা পাখিদের ডাকে বুক হিম হয়ে আসে।পরিযায়ী পাখির ডানায় লাগে উড়ান কাঁপন॥ উস খুশ করে উঠে ,,,,’,,,।
রাত কাটে পাখির কলকাকলি তে,,,,রবিবন্দনায়, দিনমণিকে আহ্বান জানিয়ে। দলমা র দামাল হাতির দল জল কেলি করে॥জঙ্গলে নদীর ঘাটে সে এক উৎসব! শুঁড়ে র ফোয়ারার জল ছুঁড়ে নদী তোলপাড় । তার পর এক সময় একে একে সবাই চলে যায় জঙ্গলের গভীরে! নদী ঘাট আবার নিঃ শব্দ হয়ে যায় ॥
নদী যখন পলল সমতল পশ্চিমবাংলায় তখন তার কি অপরূপ রূপ॥দিগন্ত ছোঁয়া বিশাল বিস্তার!প্রায় দেড় কিমি! মাঝে মাঝে চর জেগেছে! সেখানে কাশ ,বেনা ঘাসের বন!গাঙ শালিখ ও তেলি মুনিয়ার ঝাঁক সেখানে শোরগোল তুলেছে॥ ছোট্ট জেলে ডিঙ্গি বেয়ে মাছ ধরছে দন্ডছত্রী মাঝি॥ দূরে বড় নৌকা মাল বোঝাই ভেসে চলেছে উজানে॥
দূরে,,,,,অনেক দূরে ,,,,,নদীখাত থেকে ওপরে রামেশ্বরের দেব দেউল ॥ আউল বাতাসে ভেসে আসে তার আরতির ঘণ্টা ধ্বনি॥ নদীচরার বাউল বাতাস ঘাটের পাকুড় গাছ ছুঁয়ে বয়ে চলে জঙ্গলের দিকে॥ একা বক এক পা এক পা করে তির তিরে বালি ছোঁয়া জলে হেঁটে চলে ,,,,,, বড় গ্রামভারী চেহারা তার । জল ফড়িং জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে চলে॥ দূর থেকে ভেসে আসে গাং চিলের তীক্ষ্ণ স্বর! দূরে দিকচক্রবালে আবছাসবুজের আভাস,,,,,, ওই দিক থেকে আসে দলমার দামাল দল ॥ সূর্য ডোবার রাক্ষসীবেলা আসলেই শোনা যায় তাদের পদ ধ্বনি॥নদীকুলের আখের খেত,সবজি,ধান,,,সব তছনছ করে,,,,,।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামে,,,,,
নামে সন্ধ্যা তন্দ্রালসা,
সোনার আঁচল খসা,
হাতে দীপশিখা॥
এক অপার্থিব মায়ায় জড়িয়ে যায় জল জঙ্গল॥ ধীরে ধীরে আকাশে ফুটে ওঠেসন্ধ্যাতারা! যেন তামসী তপ স্বিনীর একাগ্রতা,,,,,,।দূরে গ্রাম থেকে ভেসে আসে শঙ্খ ধ্বনি! সেই স্বর ভেসে চলে বাউলবাতাসে ভর করে,,,নদীচরায়, জলজঙ্গল, দেবদেউলের ধ্বজা ছুঁয়ে সেই অনন্তের পানে,,,,,,॥