Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উপহার || Mrinmoy Samadder

উপহার || Mrinmoy Samadder

রমেশ ওর স্ত্রী রমা আর ছেলে সুজনকে নিয়ে একটা ছোট বাড়িতে থাকে। বাড়িটা রমেশের বাবা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। ওদের সাথে ষাটোর্দ্ধ বিধবা মাও থাকেন। বাড়িটা খুবই ছোট,দুটো ঘর। রমেশ আর রমা একটা ঘরে,আরেকটা ঘরে নাতিকে নিয়ে ঠাকুমা থাকেন। রমেশ ব্যবসা করে। সেই সকাল বেলা বেরিয়ে গিয়ে রাতে ফেরে। রমা সংসারের সব কাজ সামলে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসাও করে।
রমেশ সপ্তাহে একদিন ওর ব্যবসা বন্ধ রাখে। সেদিন ও পুরো সময়টাই পরিবারকে দেয়। সবাই খুশিতেই দিন কাটায়। বয়সের কারণে রমেশের মা সীমাদেবী মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার দেখানো বা ওষুধ পত্র দেওয়া সবটাই রমা করে। মাঝে মাঝে রমা পেরে ওঠে না।
একদিন ব্যবসা বন্ধের দিনে রমেশ ওর মাকে বলল মা শোনো এই বাড়িটা তো খুবই ছোট তোমার পক্ষে চলাফেরা করতে খুবই অসুবিধা হয়। তোমার বৌমা কাল বলছিল তোমার সর্বক্ষণের দেখাশোনা করবার জন্য আর থাকবার জন্য একটা বড় ঘর দেখতে। আর এখানে তো তুমি একা একাই থাকো। আমরাও তোমাকে সময় দিতে পারি না। তারচেয়ে ওই যে বৃদ্ধাশ্রম আছে না, ওখানে তোমাকে রেখে আসছি। ওখানে তোমার চিকিৎসাও চলবে আর কথা বলার মত অনেক লোককেই পাবে।
সীমা দেবী তুই যা বুঝিস তাই করিস। কবে যেতে হবে বলিস। আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে হবে তো। তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবি এই মাসটা তোদের সাথে থেকে যাই। আগামী মাসে না হয় আমাকে রেখে আসিস।
রমেশ বৃদ্ধাশ্রমের সবচাইতে ভালো ঘরটা এখন ফাঁকা রয়েছে। দেরি হয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না। তোমাকে আমি খারাপ ঘরে রাখতে পারব না। তোমাকে ওই বৃদ্ধাশ্রমে কোন কাজই করতে হবে না। কালকেই আমরা যাব ওখানে। তৈরি হয়ে থেকো। অফিস থেকে ফিরেই তোমাকে নিয়ে যাব।
সীমা দেবী বৃদ্ধাশ্রমে তোরা আমাকে দেখতে আসবি তো? অন্ততপক্ষে মাসে একবার।
সেই রাতে সীমা দেবী আর ঘুমাতে পারলেন না। ভাবছিলেন এই সন্তানের জন্যই কি তিনি দিনাতিপাত করেছেন। নাতি সুজনকে ঘুম পাড়িয়ে উনি ওনার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলেন। পরেরদিন ছেলে অফিস থেকে ফিরে ওনাকে নিয়ে যাবে।
পরেরদিন ছেলে অফিস থেকে ফিরল। মাকে ডেকে বলল মা তোমার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়েছো তো? চলো এবার আমরা বেরোবো। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সীমাদেবী ছেলের সাথে বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসলেন। গাড়ি চলছে। কিছুক্ষণ চলার পর একটা তিনতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল গাড়িটা। রমেশ কলিং বেল বাজালো। ভেতর থেকে দরজা খুলে গেল। সীমাদেবী ভেতরে ঢুকলেন। দেখলেন ওনার বৌমা আর নাতি আগে থেকেই ওখানে হাজির । সীমাদেবী কৌতুহল ভরা দৃষ্টিতে রমেশের দিকে চাইলেন। তখন রমেশ বলল মা তুমি সারাজীবন অনেক কষ্ট করেছ। তোমাকে আর কষ্ট করতে দেবো না। তিনতলা এই বাড়িটা এখন থেকে তোমার। তুমি এই বাড়ির মালকিন। তুমি এই বাড়িতে ছড়ি ঘোরাবে। আমরা তোমার পায়ের কাছে থাকবো। তুমি রানী আর আমরা প্রজা।
ছেলের কথা শুনেই সীমাদেবীর ভেতরে চেপে থাকা কান্নাটা তীব্র বেগে বেরিয়ে এলো। তখন বৌমা ও নাতি ওনাকে জড়িয়ে ধরে বলল এত অভিমান,এত কষ্ট জমিয়ে রেখেছিলে? অনেক সময় আমিও তোমাকে অনেক বাজে কথা বলেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার জন্মদিনে তোমাকে আমাদের তলফ থেকে এই উপহার।
সীমাদেবী তোরা এতটা করেছিস কিছু জানাসনি কেন? খুব খুশি হয়েছি এই উপহারে।
সুজন হঠাৎ বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে ঠাম্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress