নদী ট্যাঁড়ের কাব্য
বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন॥আগুনের হলকা ছড়ানো সকাল॥বেলা একটু গড়াতে না গড়াতেই সূর্যদেব রক্তচক্ষু দেখাচ্ছেন! সুবর্ণরেখার আদিগন্ত টাঁড় বালুচরে কটামাত্র মাছধরার নৌকা॥ দন্ডছত্রী মাঝি ”মা সাঁতাইবুড়ির” নাম নিয়ে নৌকা ভাসালো জলে,,,,,,,,মাছের খোঁজে॥গত দুদিনে মা বিমুখ হয়েছেন॥জলের ফসলের বড় অনটন॥ আজ তাই অভিমন্যু ও তার ছেলে লখীন্দর গলবস্ত্র হয়ে মাকে দন্ডবত করে মানত করে,,,”মাগো,ডৌল উপচে পড়া মীনফসল দাও মা!ছানাপোনা নিয়ে খেয়ে বাঁচি॥তোমায় কুকড়াবলি দিয়ে পূজা দেব মা!নতুন ছলনে সাজিয়ে দেব বেদী॥সদয় হও মা,মুখ তুলে চাও!”অন্তরের আকুল আর্তি বুঝি মায়ের কানে গেলো॥ প্রথম ক্ষেপেই রূপোরমত চকচকে মাছের ঝাঁকে নৌকার গলুই ভরে উঠলো,,,,চ্যালা,চঁাদা,খলসে,পাবদা, চিংড়া,,,,,,,,কালবোশ???,,,, এযে স্বপ্নের অতীত॥
বাপব্যাটার শ্যামলামুখে কুন্দশুভ্র হাসি,,,,,,!মন ভরে গেছে॥মা দু হাত উপচে দিয়েছে,ডালি ভরে॥ অভিমন্যু ছেলে লখীন্দরকে বলে,,,,”মার মানত ঠিক শোধ দিবি,,,এই শনিবারেই॥ভুলিস নি বাপ, বেটী বড় রাগী॥”
আবার জাল ফেলে দুজনে!এবারও ভালই ওঠে মাছ॥কিছুক্ষণের মধ্যেই গলুই ভরে ওঠে মীনফসলে॥নৌকো নিয়ে ডাহির ঘাটে ফিরে আসে॥আড়তে মাছ দিয়ে,সওদা করে দুজনে ঘরমুখোহয়॥
মাঠ থেকে গরুর পালকে গোয়ালে তুলতে চলেছে রাখাল॥ গো,,,ধূলিতে সারা আকাশ ঢেকে গেছে॥ সূর্য পাটে বসতে চলেছে॥রাস্তায় রতনমাঝির সাথে দেখা॥অভিমন্যুর সাথে সুখদুঃখের কথা জুড়ে দেয় সে॥লখীন্দরের আর দেরী সয় না, ঘরে যে নবপরিণীতা কিশোরী বধূ অপেক্ষা করে আছে॥বাবাকে লুকিয়ে একছড়া পুঁতির মালা কিনেছে ও॥উপহার দেবার আগ্রহে ও বলে,,,,,”বাবা,আমি এগোই,তুমি কাকার সাথে আস্তে আস্তে এসো॥”
রাঙা পথের বাঁকে এগিয়ে যায় নওজোয়ান দন্ডছত্রী লখীন্দর,,,,,,যেন পাথরকেটে তৈরী করা কোন মূর্তি,,,,বাবা অভিমন্যুর মুগ্ধদৃষ্টির আশীর্বাদ ঝরে পড়ে ওর মাথায়,,,,,,,নদীতীরের পাকুড়গাছ,অস্তমিত দিবাকরের শেষ রাঙা রশ্মি সাক্ষী থাকে তার॥একটা দমকা হাওয়ার ঘূর্ণি ওঠে, বালি,শুকনোপাতাকে নিয়ে পাক খেতে খেতে এগিয়ে চলে নদীচরের দিকে॥রতনমাঝি দুহাত তুলে
প্রণাম করে বলে,,,”সবার মঙ্গল করো মা!তোমার সন্তান দের দুধে ভাতে রেখো॥”এই চিরন্তনী কামনা নদীচরায়,মাঠে,প্রান্তরে ভেসে ভেসে ছড়িয়ে পড়ে দিগন্তের তটে॥ঘটে চলে মানব জীবন রঙ্গ,,,,,নব,নব রূপে॥