Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কালিন্দী -কেলেঘাই || Manisha Palmal

কালিন্দী -কেলেঘাই || Manisha Palmal

রাত গভীর! মধ্য নিশির গভীর নীরবতায় আবিল চরাচর। হৈমন্তী মায়াবী রাত পরান কথায় বোনা। প্রকৃতির নিশিযাপন কাব্যের নীরব দর্শক আমি। দৃষ্টি এখন শ্রবণ। চরাচরের প্রাণচাঞ্চল্য এখন দেখা যায় না অনুভব করা যায় শ্রবণে। দূরে —–অনেক দূরে ঝিলের পারে রাতজাগা মানুষের আবছা স্বর ভেসে আসছে। মাঠ পাহারার দল— ফসল পাহারা দিচ্ছে। হিজলি ফরেস্টের দিক থেকে ভেসে আসছে প্যাঁচাদের রাতজাগানি মজলিসের শব্দ। এই রাতের প্রকৃতি আমায় নিয়ে চলে সেই ফেলে আসা সময়ে—- মনে পড়ে কেলেঘাই নদীর তীরে সেই প্রান্তিক গ্রামে কাটানো রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা।
” কলসি ভাঙ্গা”— এক শাল ম হুয়ার সোহাগী সবুজে ঢাকা ছোট্ট গ্রাম । জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্রদের আবাসস্থল। এই গ্রামে টাঁড চট্টা নের মাঝ থেকে ঝোরা রূপে এর জন্ম। এ যেন এক আদিবাসী কন্যা। স্বাধীন সুখী উদ্দাম উচ্ছল। সারাবছর ক্ষীণতোয়া- তির তিরে জল বয়ে চলেছে পায়ের পাতা ডোবা ছোট্ট মেয়ের মত।” আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে””! বর্ষায় হড়পা বানে দুকুল ছাপিয়ে সে হয় ভয়ংকরী। জল কমলে আবার স্বখাতে বয়ে চলে । এই নদীর চলন বড় মন ছোঁয়া বড় আবেগী। কংসাবতীর সাথে মিলে হলদি নামে সমুদ্রে মিশেছেএ। কংসাবতীর ডান তীরের উপনদী কেলেঘাই বা কালিয়াঘাই। এর দুকূলে শাল মহুয়া বাঁশ পলাশের হরজাই জঙ্গল। আড়বাঁশি সারিন্দা র সুরে মাদলে র দ্রিম দ্রিম বোলে মুখরিত সারা প্রবাহপথ। মাটির মানুষদের বড়ো আপনজন এ নদী। জীবনের প্রতিটি চরণে এই নদীর সাথে যোগে শিখর ভূমির মানুষদের।
নদী খাতে বোল্ডার চাট্টানের ভাস্কর্য দেখলে অবাক হতে হয়। পাথরের পাশ কাটিয়ে বিলাসী নটিনীর মত এঁকেবেঁকে চলেছে কেলেঘাই— যেন এক লাস্যময়ী ঝুমুর শিল্পী। নদী খাতের ওপরে জঙ্গলে তোলপাড় করে মহাকাল —–দলমার হাতির দল! নদী কুলের চাষ জমি তাদের লীলাক্ষেত্র! ধান সবজি আখ সবক্ষেত তছনছ করে আবার ঢুকে যায় জঙ্গলের গভীরে।
আহিরার উদাসী সুর ঝুমুরের বোলে ভেসে বেড়ায় এই কাহিনী।
” কলসি ভাঙ্গা”— নামটা তেই কেমন পরান কথায় মাখা। কার কলসি? কে ভাঙলো? কেন ভাঙলো? বড্ড কৌতুহল! কেউই কোনো উত্তর দিতে পারে না- মন বাউল উত্তর খুঁজে বেড়ায় খেজরা কেলেঘাই এর ঘাটে! ছকামারা বাগডুবির জঙ্গলে , কলসি ভাঙ্গার মাঠে চট্টানে। শেষে বাগডুবি রএক দেহুরি র অশতিপর বৃদ্ধা মা বলল এর কাহিনী—— সেই আদিম কালে কেলেঘাই ছিল এক
রূপসী আদিবাসী কন্যা কালিন্দী। নাচে-গানে রঙ্গে রসে ভরপুর সবার নয়ন মনি। খরা প্রবণ এ অঞ্চলে পানীয় জলের বড় কষ্ট ছিল তখন। কয়েক ক্রোশ দূর থেকে জল আনতে হতো এদের। তেমনই এক দিনে জল আনার সময় এক সাধুর সাথে মেয়েদের দেখা। তিনি বলেন এই উষর ভূমিতে কেউ আত্ম বলিদান দেয় তাহলে ঝরণা ঝরবে।
ভূমিপুত্রী কালিন্দীর অন্তর ছুঁয়ে যায় সে আবেদন।
এই টাঁড চাট্টানে সে প্রাণ ত্যাগ করে। তার কাঁখের কলসি ভেঙ্গে পড়ে যেখানে সেখান থেকেই উৎপত্তি হয় কেলেঘাই নদীর। আর তখন থেকেই জায়গাটির নাম হয় কলসি ভাঙ্গা।
আমার বাউল মন তূপ্ত হয় কলসি ভাঙ্গার পরান কথায়। কেলেঘাই তীরে টুসুর গানে যেন সেই আদিবাসী কন্যা কালিন্দীর সুর ভেসে বেড়ায়—-” একে তো মা বিয়ে দিছো কাঁসাই নদীর ওপারে
বিষাদে তাই নয়ন ঝরে””—-!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *