শেষ টা বেশ
আমি আজকে সুন্দর ভাবে সেজে পাত্রপক্ষের সামনে বসেছিলাম।গলায় মোটা চেন,হাতে মোটা বালা,ঝোলা দুল।যাতে গয়না দেখে পাত্রপক্ষের পছন্দ হয়। আমার কাকিমা পিছন থেকে টিপ্পনি
দিলেন পুরো দাঁড়কাক লাগছে। বিধবা মা বললেন জানেন আমার মেয়ে এমকম পাশ করার আগেই ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়ে গেছে। পড়াশোনাতে ভীষণ ভালো।গান জানে।গৃহকর্মে নিপুণা।সেলাই জানে।জানেন আমিতো বিয়েতে প্রচুর গহনা দেব।ও একটাই মেয়ে আমার সব কিছু ওর প্রাপ্য। আমার মেয়ে খুব গুছানো। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে একটা ফ্ল্যাট বুক করেছে। পাত্রপক্ষ কোনো খাবারে হাত দিলেন না।বলে গেলেন আসি।
এতক্ষণ ধরে মা এত কিছু বললেন তাতে ওদের মন গলে নি।
পাত্রপক্ষ আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন কি নাম?
আমি বলি শ্বেতা
তখন ছেলেপক্ষ বলে কৃষ্ণকলি হলে ভাল হতো।ওরা বলে যায় আমরা রূপ দেখে বিয়ে দিতে চায়। গহনা, টাকা, দেখে কালো মেয়ে চায় না।
সবার তাচ্ছিল্যের কথা শুনে আপনাদের হয়তো খারাপ লাগে না।আমি তো রক্ত মা়ংসের মানুষ।তাই তো খুব কষ্ট পাই। আবার কেউ বলেছে তাদের গ্রামের বাড়িতে শ্যামলির মতো দেখতে।শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। আমার মতো কেউ তো আছে।পরে বুঝি শ্যামলি ওনাদের কালো গরু।দুধ কিন্তু খুব মিষ্টি।মোটা সর পড়ে। আবার অনেক পাত্রপক্ষ বলেছেন আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী।মনে মনে ভাবছিলাম মরে গেলেই ভাল হয়।
মন ভালো করার জন্য আমি গভীর রাতে লঙ ড্রাইভে যাই। ভাবতে থাকি জোরে গাড়ি চালিয়ে #একটু একটু করে নিজের জীবন তৈরি করেছি তা আজ গাড়ি ছুটিয়ে দুর্ঘটনায ঘটিয়ে নিজেকে শেষ করে দেব। হঠাৎ একটা ছেলে গাড়ির সামনে এসে পড়ে।ভেবে নিয়ে ছিলাম এবার জনতার মার খেতে হবে।তবে গভীর রাত।পথে কোন লোক নেই। ছেলেটি এসে বলে আমাকে পিষে দিলেন না কেন? আমার মতো বেকার ছেলে পরিবারের কাছে অপাংক্তেয়। আমি মরতে ভয় পায় না। আমি এম এস সি পাশ। চাকরি জন্য গ্রুপ ডি পরীক্ষা দিচ্ছি।ব্রাহ্মণের ছেলে হয়ে ড্রেন পরিষ্কার করতে,ডোমের কাজ করতে রাজি। সেখানে আমার সুদর্শন চেহারা দেখে চাকরি দেয় না।কেউ বলেছে কার্তিক ঠাকুর হয়ে জ্যান্ত মডেল হয়ে যেতে।আপনি বলুন ম্যাডাম রূপ দিয়ে কি হয়। আমার গাড়ির ভিতর অন্ধকার।তাই ছেলেটা আমার কুৎসিত রূপ দেখে নি। ছেলেটি বলে আপনার কাছে কিছু তুলো,ব্যান্ডেড আছে। আমার হাতটা ছড়ে গেছে। আচ্ছা ম্যাডাম আপনারা খুব বড়লোক তাই না!কি সুন্দর গাড়ি।নিজে ড্রাইভ করছেন। আমি বলি আসলে আপনি যা পাশ মিষ্টার। আমি ও তাই পাশ।তবে আপনি এম এস সি আর আমি এম কম। আমি ব্যাঙ্কে চাকরি করি।এই গাড়িটা আমার।ফ্ল্যাট কিনেছি,পৈতৃক বাড়িও আছে। শুধু একটা জিনিষ নেই।
সেটি আমতা আমতা করে বলি আমার রূপ।
ম্যাডাম আপনার হাত পা নেই!
না মিষ্টার সব ঠিক আছে।তবে!
আপনি নিজেকে কুৎসিত কেন বলছেন?
আমি আলো জ্বালিয়ে বলি।দেখুন কৃষ্ণকলিকে। খিলখিলিয়ে হাসতে থাকি।
কি ভয় পেয়ে গেলেন তো!
মিষ্টার বলে আপনার হাসিটা তাজমহল পূর্ণিমার আলোতে যেমন ঝলমল করে। ঠিক তেমন সুন্দর।
আমি বলি আপনি সুইসাইড করতে বেরিয়ে বীভৎস মিথ্যা কথা বলছেন?
না না শুনুন আমি আমার পৈতে ছুঁয়ে বলছি। একটু একটু করে আলাপ হতে হতে সারা রাত কেটে যায়
আমি বলি আমাকে বিয়ে করবেন । ছেলেটি বলে আমিতো চাকরি করি না। খাওয়াব কি!
আমি বলি তাতে কি আছে!!!
পরিবার তো যৌথ ভাবে হয়।।
আপনি ঘর সামলাবেন আর আমি বাইরের কাজ করব।চলুন দুজনে বাঁচি। আমাদের আর কেউ ব্যাঙ্গ করবে না।তবে সুজিৎ তুমি চাকরি পেয়ে গেলে আমার রূপের জন্য ছেড়ে যাবে না তো!
সুজিৎ বলে তাহলে চাকরির আর চেষ্টা করব না। হাহাহা করে হাসতে থাকি। অবশ্য সুজিৎ বিয়ের পর স্কুলে চাকরি পায়। আমরা ভালো আছি।তবে বাচ্চা নিতে চাই না।যদি আমার মতো দেখতে হয়।আগে নাকি দর্শনধারী পরে গুণবিচারী।এখন অকারণে হাসি পাই।ওই সুজিৎ বলেছে আমার দাঁতটা খুব সুন্দর।
এমনি করে যাক না দিন যাক না।