বোধ
হরপ্রসাদবাবুর একমাত্র ছেলে। ছেলেকে নিয়ে বাবা-মায়ের বড় আশা। ছেলেকে তাঁরা
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছের কথা কেউ জানে না।
ছেলে হায়ার সেকেন্ডারী দেয়ারপর, জয়েন্ট দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ চাঞ্চ্ পেল।
এবারে,বেঁধে গেল গোল।ছেলে বলে,সে আর, পড়বে না।তার মা রেগে গিয়ে বলে,কেন পড়বিনে?
ছেলে বলে, যে দেশে অশিক্ষিতরাই দেশ চালায় ,শিক্ষিত মানুষের মাথার ওপরে ছড়ি ঘোরায়, সে দেশে লেখা পড়া শিখে কি হবে? খবর কাগজে সেদিন দেখলে না,
এমএ পাশ ছেলে, পিএইচডি করা ছেলে পর্যন্ত
ঝাড়ুদারের চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছে।
তার চেয়ে দেখ, এইট,নাইন পাশ লোকেরা এমএলএ, এমপি, কিংবা মন্ত্রী হয়ে মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা কামাচ্ছে। এবার হরপ্রসাদবাবু বলেন,সে তো সবাই হতে পারে না বাবা।
ছেলে বলে,চেষ্টা থাকলে অনেকেই পারে।
যে চেষ্টায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারায় হতে হয়, তার চেয়ে অনেক কম চেষ্টায়,ও কম খরচে,এমএল-এ, এমপি হওয়া যায়।
আজকের কাগজ টা পড়ে দেখ,কত কত ক্রিমিনাল কেসের আসামি ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে যাচ্ছে।এরাই একদিন শিক্ষা মন্ত্রী নয়তো,আইন মন্ত্রী হয়ে ভাষণ দেবে,আর সেই ভাষণ শুনে শিক্ষিত লোকেরা হাত তালি দেবে।বড় বড় আইপি এস অফিসারদের,তাদের হুকুম তামিল করতে হবে।
বাবা বলেন এসব ব্যাপারে ,তোর তো ভালোই জ্ঞান দেখছি।তা, তুই এখন কি করতে চাস?
ছেলে বলে দেশ সেবার ব্যবসা।তার মানে?
তার আগে তুমি বলো,আমাকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে যে কয়েক লক্ষ টাকা ও সময় ব্যয় হতো তার অর্ধেক টাকা আমাকে দাও,সেই টাকা অর্ধেক ইনভেস্ট করে
আমি বড় নেতা বনে যাব।
দুর্গত এলাকায় গিয়ে আমি ত্রাণ বিলি করব। শাসকের নামে দুর্নাম রটিয়ে তাদেরকে হাত করব।তখন,মা রেগে বলে উঠলেন,তুই এভাবে টাকা ছড়িয়ে বাপের টাকা ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু হবে না। ছেলে বলে আমার প্রতি ভরসা রেখে দেখ-ই না, এদেশের লোক মিথ্যে আর ধাপ্পায় কত বেশি বিশ্বাস করে দেখবে।ভাত ছড়ালে যেমন কাকের অভাব হয় না, টাকা ছড়ালে তেমনি লোকের অভাব হবে না। কিছু দিনের মধ্যে দেখতে পাবে কত লোক আমার নামে জয়োধ্বনি দিচ্ছে।
আর,আমার কথা যদি তোমরা না শোন, তাহলে কিন্তু আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। হতাশ হয়ে তার বাবা-মা বললেন, যা কিছু করিস একটু ভেবে চিন্তে করিস।