আধুনিকা
পড়াশোনায় খুব একটা ভালো নয় মৌটুসী, শুধু এদিক ওদিক মন চলে যায় । বাবার কথা ভাবতে থাকে, যখন ছুটি পেত জাহাজ থেকে ওর জন্য কতকিছু খেলনা,লজেন্স আরো কত কি আনতেন। মায়ের মনও তখন খুব ভালো থাকত,ঠান্মিও বকাঝকা কদিন কম করতেন। তারপর কি যে হলো হঠাৎ একদিন,মা ,ঠান্মি সবাই কেঁদেই চলেছে,ওরা বলছে বাবা যে জাহাজে ছিলেন তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ।
সময় এগিয়ে চলে,মা, ঠান্মি কেমন যেন হয়ে গেছে!
মা আজকাল বাবার জন্য খোঁজ খবর করতে ব্যস্ত থাকে ,
সাথে সাথে বাড়িতে আচার,বড়ি তৈরী করে আশেপাশে বিক্রি করে। ঠান্মি কথায় কথায় মাকে অপয়া বলে।
মা এখনো সিঁদুর পরে যখন মৌটুসী দেখে মা কাঁদছে। ও ছুটে গিয়ে বলে কেঁদো না মা বাবা ঠিক ফিরে আসবে ।
বছরের পর বছর পার হয়ে মৌটুসী কলেজ এর পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়েছে ছোট ফার্মে, মা কে বলেছে তোমায় আর বেশি কষ্ট করতে হবে না মা,মা হেসে বলেন ধুর বোকা! মৌটুসীর বিয়ের ঠিক হয় অনিন্দের সাথে,মৌটুসী মাকে বলে অনিন্দতো ফ্ল্যাটে একাই থাকে তুমি ঠান্মি চলে চলো। মা বলেন তা হয় না ।
বিয়ের দিন, আত্মীয়রা এসেছেন বাড়িতে, একজন বলে ওঠে প্রমিলা তো বিধবা এত বছর হয়ে গেছে মৌটুসীর বাবা ফেরেনি,ঐ জাহাজ ডুবে গেছিল তাই খোঁজ পাওয়া যায় নি, ও সব বিয়ের কাজ করবে? গুঞ্জন বাড়তে থাকে । প্রমিলা পাথরের মত দাঁড়িয়ে, মৌটুসীর ঠান্মির কানে কথাটা যায়, ঠান্মি বলেন শোনো সবাই বৌমাই এখন আমার ছেলে, আর আমাদের দুর্দিনে তোমরা কোথায় ছিলে? একথা আমি মৌটুসীর শাশুড়ি মা কে ও ফোনে জানিয়েছি,প্রমিলাই মেয়ের সব বিয়ের শুভকাজ করবে ।
মৌটুসী ঠান্মিকে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,বলে তুমি সত্যি আধুনিকা ঠান্মি । ঠান্মি বলে কি প্রমিলা ঠিক বললাম তো । আজ একসাথে দুই মা, বিয়ের সানাই বাজতে থাকে ।