বৃষ্টি এলো
বৃষ্টি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে ওঠে–আজ অনেক দিন পরে আমরা এদিকটাতে ঘুরতে এলাম তাইনা?
বাদল মিষ্টি হাসে–ঠিক তাই,আসলে ,অফিসে কাজের চাপ এতো বেড়েছে যে তোমায় নিয়ে বেড়ানোর সময় পাইনে।
বৃষ্টি ও হাসে-ওসব কথা থাক্।দ্যাখো ,দ্যাখো , কি সুন্দর দু’টো পাপিহারা ,ওইযে বকুল গাছের ডালে,দেখলে?আহা!কি সুন্দর !ওরা নিশ্চয় প্রেমিক যুগল হবেই।
বাদল বৃষ্টির দৃষ্টিকে অনুসরন করে দেখেই উল্লসিত–সত্যি !পাখিদুটো ভারী সুন্দর ! আচ্ছা,তুমি কি করে বুঝলে ওরা প্রেমিক?
বৃষ্টি মুচকি হাসে–ওমা!শোনো কথা,বুঝবোনা কেন?দেখছো না ,দু’টিতে বসে চঞ্চুতে চঞ্চুতে —এমা! কি কান্ড!পাখিরাও!
বাদল- সকৌতুকে পাখিদের লক্ষ্য করে বলে–
কেন? আমরা পারিতো ,পাখিরা কেন পারবেনা শুনি?
শুনে হাসির লহরে বেতসলতার মতন দুলছিল বৃষ্টি — যাই বলো ,দারুণ লাগছে জানো?
বাদল এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে– আজ বড্ড ঘোরাঘুরি হয়ে গেছে ,চলো কোথাও একটু বসিগে’—
বৃষ্টি মাথায় নাড়ে–হ্যাঁ ,সেই ভালো গো,আমার জানো ,বড্ড তেষ্টা পেয়েছে —
বাদল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে–এ্যাইরে,তোমার তেষ্টা পেয়েছে শুনে বরুণ আর সইতে পারলো না গো,বড্ড ভালবাসে কিনা,তাই তড়িঘড়ি করে একমুঠো
,তিরতির্ ঝিরঝির পাঠিয়েই দিলো —
বৃষ্টি দারন উৎফুল্ল–ওমা!কি মজা!তাইতো ! এইতো মজা পাহাড়ে বেড়ানোর, এতোক্ষণ দিব্যি সোনারোদ খেলছিলো,আর দ্যাখো,হঠাৎ কেমন পুষ্পবৃষ্টি শুরু –
বাদল বৃষ্টির দিকে চেয়ে বলে ওঠে–তাহলে,ছাতাটা বন্ধ করছো কেন ?টিপটিপ্ তো পড়ছে,বাড়তেও পারে–
বৃষ্টি চপলা তন্বীর মতো খুশিতে ছেলেমানুষের মতো মেতে ওঠে, মনের আনন্দে একপাক নেচেও নেয় ,হাত মেলে বৃষ্টি হীরের কুচি বিন্দুগুলোকে ধরে গুনগুনিয়ে ওঠে–
বাদল অপার মুগ্ধতায় বৃষ্টিকেই নিরীক্ষণ করে–আহা!গলা ছেড়েই গাও না ,বরুণ ব্যাটার কপাল ভালো,দু’চামচে ঢেলেই আমার
একমাত্র বৌটাকে পটিয়ে নিলো ?
বৃষ্টি ভ্রুভঙ্গি করে–ইস্ কথার কি ছিরি!মাগো!
বাদল মুচকি হাসে–বেশ বলবো না,তাহলে গানটা ভালো করে গাইতে হবে–
বৃষ্টি চারপাশের মায়াবী পরিবেশের দিকে মুগ্ধতায় চেয়ে শুরু করে —
— “আহা!বৃষ্টি ! বৃষ্টি ,বৃষ্টি
তুমি কি অপরূপ সৃষ্টি
তাইতো এতো মিষ্টি”—
বাদল প্রশংসায় হাততালি দেয়–বাঃ দারুণ!শোনো,তোমার ওই গানটা–যেটা গৌহাটিতে গেয়েছিলে–ওটা গাওনা
শুনি!
বৃষ্টি আহ্লাদে বৃষ্টিফোঁটা মুখে,কপালে
মাখছিলো,বাদলের কথায় হেসে গাইতে শুরু করে-
” রিমঝিম রিমঝিম বরহুণ পড়িছিল্
তার মাঝে মাঝে বিজুলিয়ে নাচিছিল
এনেহে লাগিছিল ,যেন ,মঈ এটি
পঙ্খি হুই তাত উড়ি যাও” –
বাদল মাথায় ,মুখে বৃষ্টি পড়তেই সোল্লাসে বৃষ্টির হাত ধরে একটা ঝাঁকড়া বটগাছের নীচে দাঁড়ায়–এসো,এসো- বাঃ দারুণ!বৃষ্টির গান যেই শুরু অমনি বৃষ্টি ,শুরু হয়ে গেলো, বেশ জোরেই বৃষ্টি এলো যে, ইস্ ও বৃষ্টি ,কুইক্–ছুটতে হবে—
বৃষ্টি আঁচলটা মাথায় দেয়-হ্যাঁগো,তাইতো —
বাদল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়া শুরু হতেই পাঁজাকোলা করে বৃষ্টিকে তুলে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটতে থাকে