বিশ্ব কেনো ধরা দেয়
আমাদের বাড়ির একতলায় একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভাড়া থাকতেন,
তখন এ – বাড়িতে তাঁর থাকার প্রায় দু – বছর অতিক্রান্ত, কিন্তু জানতাম না উনি একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, শুধু জানতাম একজন স্বল্পবাক মানুষ আমাদের বাড়ির একতলায় ওনার আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে ভাড়া থাকেন যিনি টাটাস্টিলে চাকরি করেন,শুধু এইটুকু,
জানলাম একটা অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে দিয়ে,
আমাদের বাড়ির পেছনের নর্দমাটি দিন পনেরো অন্তর পরিষ্কার করতে আসতো একটি লোক, তার সুরাপানের মাত্রা সীমা ছাড়ালে বেমালুম কাজে ডুব দিয়ে দিতো, ভুলে যেত কবে কোন বাড়িতে যেতে হবে,
সেই রকমই অবস্থা হলো একবার, তার কাছে গিয়ে যে আসার জন্য খবর দিয়ে আসবো সেটাও বেশ সমস্যার, কারণ তার ঠিকানা কারুর কাছেই পুরোপুরি জ্ঞাত নয়,
ভাসাভাসা যা জানতে পারলাম তা হচ্ছে আমাদের এলাকা কেষ্টপুরের পরের এলাকা দমদমপার্কে প্রবেশের মুখে যে কালভার্টটি আছে তার পাশের বস্তিতে,
খোঁজ করতে করতে গেলাম এবং জানলাম বাগুইআটি থেকে নিয়ম মাফিক সুরাপান করে ভি আই পি রোড ধরে ফেরার সময় মোটরবাইকের ধাক্কায় হাঁটু ভেঙে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি, কবে ছাড়া পাবে কেউ জানেনা,
খবরটা পেয়ে আমার মানবদরদী মন খুব একটা বিচলিত হলো না, বিচলিত হলো পেছনের নর্দমাটি নিয়ে, কোন জাদুকর আসবে ঐ পাঁক পরিষ্কার করতে?
বিকল্প লোক খোঁজার অনেক চেষ্টা করলাম, বেশি অপেক্ষা করতে পারছিনা, নোংরার পরিমাণ বাড়ছে, এবার জল সামনের দিকে না গিয়ে পেছন দিকে বইবে, মানে বাড়ির ভেতরে ঢুকবে,
অনেক ভাবনাচিন্তার পরে জানতে পারলাম ঐ জাদুকরটি আমি, আমাকেই সমাধান করতে হবে এই সমস্যার,
এক রবিবার সকালে খালিগায় বারমুডা পরে হাতে একটা সরু বাঁশ নিয়ে আমি নর্দমার ধারে, পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের শেষতম সৈনিক, চোখের ওপরে পাঁক ভাসছে আর মনে মনে বলছি কোনো কাজই ছোট নয়, কর্মই ধর্ম, কাজ ভালোই এগোতে থাকলো, বুঝলাম মানুষ যতক্ষণ বিপদে না পড়ে ততক্ষন ভয় পায়, পড়ে গেলে আর পায়না,
কাজ প্রায় অর্ধেকটা হয়ে গেছে, পেছন থেকে একটি কন্ঠ ভেসে এলো,
পেছনে তাকাতে দেখলাম নীচের তলায় যারা ভাড়া থাকেন তাঁদের মধ্যে তীর্থদা বলে যাঁকে চিনি তিনি দাঁড়িয়ে,
ঠোঁটে স্মিত হাসি, এবার আপনি চলে আসুন বাদবাকিটা আমি করে দিচ্ছি,
আমি হেসে বললাম,সে কি আপনি পরিষ্কার করবেন কি!
কেনো!
আমি বাড়িওলা এ ব্যাপারগুলোতো আমার দেখার কথা…..
উনি হেসে বললেন, তার মানে আমি ভাড়াটে হয়ে আপনার কাজটা যদি করি তবে ভাড়ার টাকা থেকে পয়সা কেটে নিতে পারি বলুন,
আমি হেসে ফেললাম, আমি সে কথা বলেছি,
বলছেন না, কিন্তু ভয় পাচ্ছেন
ভয় পাবো কেনো!
ভয় যদি না পান তবে হাতের বাঁশটা আমায় দিন, আর ঘামে তো চান করে গেছেন, হাত – পা ধুয়ে আমার ঘরে গিয়ে ফ্যানের নীচে দাঁড়ান, যখন জল ঢালতে হবে আমি ডাকবো,
কোনো প্রস্তাব নয়, যেন একটা আদেশ এলো তীর্থদার দিক থেকে, আমি চলে না এসে পারিনি,
তীর্থদার ঘরে ফ্যানের নীচে দাঁড়িয়ে আছি, ওনার খাটের ওপরে একটা ফাইলের পাতা নিজের খেয়ালে ফ্যানের হাওয়ায় উল্টোচ্ছে,
কৌতূহল দৃষ্টিকে টেনে নিয়ে গেলো, এক চামচ গরম রক্ত নামলো ঘাড় বেয়ে পিঠের দিকে,
ফাইলের পাতাগুলোয় বিভিন্ন সময়ের সংবাদপত্রের খবরের ক্লিপিংস আঠা দিয়ে সাটানো, খবর পড়ার আগে খবরের ওপরের ছবিতে চোখ পড়েছে,
প্রতিটি ছবিতে তীর্থদা, ভিকট্রি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে পদক নিচ্ছেন, খবরগুলো পড়তে থাকলাম,
ইভেন্টির নাম ‘আল্ট্রা ম্যারাথন ‘, এই প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট কোনো দূরত্ব থাকেনা, মানে একশো, দুশো, চারশো মিটার রিলে, বা হার্ডেল, ম্যারাথনের মতো নয়, প্রতিযোগীরা দৌড় শুরু করবে, দূরত্ব বা সময়ের মাপ কোনোটাই নেই, শেষ পর্যন্ত যে দৌড় জারি রাখবে সেই হবে বিজয়ী, পরের বারের ইভেন্টে একজন তাকে চ্যালেঞ্জ করবে সে তার টাইটেল ডিফেন্ড করবে,
১৯৯৮তে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত এই ইভেন্টে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন তীর্থদা, তীর্থ কুমার ফনি,
আরও কয়েক চামচ গরম রক্ত ঘাড় বেয়ে নামলো পিঠের দিকে, কয়েক ফুট দূরে দেখছি সেই মানুষটাই বাঁশ দিয়ে পরিষ্কার করছে আমাদের বাড়ির নর্দমা,
দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি, ছুটে গিয়ে কেড়ে নিয়েছিলাম হাতের বাঁশটা,
তীর্থদা অবাক, কি হলো !
আপনি তো বলেননি আপনি একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন !
ধুস
গায়ের ওপরে মাছি বসলে মানুষ যেভাবে উড়িয়ে দেয় সেই ভাব ভেসে উঠেছিলো সমস্ত মুখটায়, বুঝে ছিলাম বিশ্ব একজনের কাছে কেনো ধরা দেয়
রুসি মোদী ডেকে চাকরি দিয়েছিলেন
প্র্যাকটিস যাতে ঠিক মতো করতে না পারেন তার জন্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে তাঁর চোখে লঙ্কাগুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল,
ঐ ঘটনার পরে তীর্থদা আমায় বলেছিলেন আপনার গাঁড়ে যদি কেউ না লাগে আপনি বেশি দূর দৌড়তে পারবেন না,
বছরটা মনে নেই, রূপকদা, রূপক সাহা, ‘অল স্পোর্টস ‘ পত্রিকার বাঙলা ভার্সানের জন্য গল্প চেয়ে ছিলেন, তীর্থদাকে নিয়ে একটা গল্প লিখে ছিলাম, ‘ উদ্দীপনা ‘