Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলের পূজো || Suchandra Basu

নীলের পূজো || Suchandra Basu

নীলের পূজো

ছোটবেলায় অতো বুঝতাম না, কেন এই পুজোটা করা হয়, মা কেন উপোস করে। আমি আর বাবা নিরামিষ ভাত তরকারি খেতাম। মা ঠাকুমা চৈত্রের গরমে সারাটা দিন জলস্পর্শ না করে সংসারের সব কাজ করতো, আমাদের জন্য রান্নাবান্না করতো। তাও হাসিটি লেগে থাকতো তাদের মুখে।
কেন এই ব্রত তারা করেন? ঠাকুমার মুখে শুনেছিলাম, একদেশে এক বামুন আর বামুনী বাস করতো।তারা অতি ভক্তি করে সমস্ত বার –ব্রত করতো,কিন্তু তবুও তাদের ছেলে মেয়ে হয়ে একটাও বাঁচেনা।তাদের মনে এই ধারণা হল যে এই সব বার –ব্রত করে কিস্যু লাভ নেই।আসলে সমস্তটাই মিথ্যে।এই বলে তারা সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে দু’জনে কাশী চলে গেল।
একদিন কাশীতে গঙ্গায় দুজনে চান করে উঠে ঘাটের ওপর বসে মনের দুঃখে দুজনে কাঁদতে লাগলো।তাই দেখে মা ষষ্ঠী বুড়ি বামনীর বেশ ধরে এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন, “হ্যাঁগা,তোরা কাঁদছিস কেন?”
বামুনী বললে, “সে কথা তোমায় বলে কি হবে মা! আমরা বড় মনের জ্বালায় জ্বলছি, আমাদের পাঁচটি ছেলে আর একটি মেয়ে হয়েছিল,কিন্তু সব ক’টাই মরে গেল।তাই ভাবছি যে, সব বার–ব্রত, ঠাকুর দেবতা মিথ্যে।আমরা তো কোন বার –ব্রত বাদ দিইনি,তবে কেন আমাদের সব মরে গেল?”
মা ষষ্ঠী বললেন,“দেখ বাছা, তোমরা সব বার-ব্রত কর বলে মনে বড় অহঙ্কার ছিল, সেইজন্যে সব মরে গেছে।শুধু কি আর বার-ব্রত করলেই হয়।ভগবানের ওপর বিশ্বাস থাকা চাই, মন পবিত্র থাকা চাই, সবার কাছে নিচু হওয়া চাই,একমনে মা ষষ্ঠীকে ডাকা চাই,তবে হয়।”
তখন বামনী বললে, “তাহলে আমাদের উপায় কি হবে মা?”মা ষষ্ঠী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠী করেছিস?” বামনী বললে, “সে কি মা?কই ও ব্রত তো আমরা জানি না।”
তখন মা ষষ্ঠী বললেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস করে শিব পুজো করবে,তারপর সংক্রান্তির আগের দিন,সমস্ত দিন উপোষ করে সন্ধ্যার সময় নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে,মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে তবে জল খাবে।”ঐ দিনকে ষষ্ঠীর দিন বলে।যারা নীলষষ্ঠী করে তাদের ছেলে মেয়ে কখনও অল্প বয়সে মরে না।” এই কথা বলে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
তারপর বামুন-বামনী দেশে ফিরে গিয়ে খুব ভাল করে নীল ষষ্ঠীর পুজো আরম্ভ করল।এরপর তাদের যতগুলো ছেলেমেয়ে হল,সবাই দিব্যি বেঁচে রইল।
পাড়ার সকলে বামনীর সুখ দেখে আর ঐ নীলষষ্ঠীর ব্রত জানতে পেরে সবাই নীলষষ্ঠীর ব্রত করতে লাগ্ল।এই ব্রত করে সবারই ছেলেপুলে নীরোগ হয়ে বেঁচে রইল।
বাঙালি গৃহিণীরা নিজের সন্তান এর মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে নীলষষ্ঠীর ব্রত পালন করে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন। (শিবঠাকুরের নীলকণ্ঠ হওয়ার দিন অর্থাৎ শিব-পার্বতীর মহামিলনই হলো নীলপুজোর তিথি)
তাই আমাদের ঘরে ঘরে মায়েরা চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল ষষ্ঠী পালন করেন। সারাটা দিন উপোস করে শিবঠাকুরের মাথায় জল ঢালেন, মা ষষ্ঠীর কাছে সন্তানের জন্য মঙ্গলকামনা করেন।
বিকালের দিকে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে মা ঠাকুমা যেতো বারোশিব মন্দিরে। সেই মন্দিরে ছিল শিবঠাকুরের বারোখানা বিগ্রহ, আলাদা আলাদা ঘরের মধ্যে। আবার মা দূর্গার বিশাল বড়ো একখানা প্রতিমাও আছে।আমার ভীষণ ভালো লাগতো ওদের সঙ্গে যেতে। মন্দিরের ভেতরটা কি সুন্দর ঠান্ডা!
আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট মতো হেঁটে যেতে হতো সেখানে। কাঠফাটা রোদ্দুর, ওরা আবার জলও খেত না। আমি ওদের সাথে বকবক করতে করতে, চলেছি।
মন্দিরে পৌঁছে ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলে নিয়ে মা ও ঠাকুমা দুজনেই ঘুরে ঘুরে শিবের বারোখানা বিগ্রহের মাথায় একে একে জল ঢালতো, আর আমিও হাতজোড় করে প্রণাম করতাম।
বাড়ি ফিরে এবার খাওয়ার পালা। সকাল থেকে মুগডাল ভিজিয়ে রাখা থাকতো। খাওয়ার সময় মা ডাল ছেঁকে জলটা ফেলে দিয়ে একটা পাকা কলা চটকে নিতো আর সাথে একটু চিনি। কি যে অপূর্ব তার স্বাদ! গলা অবধি ভাত তরকারি খাওয়া হয়ে গেলেও মায়ের থেকে একটু ডালমাখা না খেলে যেন মন ভরতো না।
এখন আমি নিজেই সন্তানের মা, বছর বছর নীল ষষ্ঠী পালন করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress