পাওয়া না পাওয়া
কী হলে, কী হবে সে সব জানে না নাজিয়া। পুলিশ এলে সে-ই দেখিয়ে দিয়েছে কোথায় পড়ে গিয়েছিলেন মা। একরত্তি মেয়েটি টানা বলে চলেছে, “মা পড়ে গেল। কত ঠেললাম, আর উঠল না!”
এইরকম একটা ঘটনা খুব মন দিয়ে পড়ছি।এমন
সময় ছাদে বিড়ালের খুব ঝগড়ায় মনটা অন্যমনস্ক হয়ে যায়।ভাবছি এইতো দুধপাউরুটি
খেতে দিয়ে এলাম।কি নিয়ে মায়েতে মেয়েতে ঝগড়া বাঁধলো। দুই মাসের মেয়ের এতো জোর গর্জন।ছেলে নীচে আসতেই বললাম দেখতো ছাদে
গিয়ে কি নিয়ে ওদের ঝগড়া। ছেলে প্রথমে এড়িয়ে যায়।বলল কালকে ওদের
এভাবেই ঝগড়া করতে দেখেছে। শুনে
অবাক,তবুও কেমন সন্দেহ হওয়ায় বললাম তাও
একবার ছাদে গিয়ে দেখ।
আমি আবার খবরের কাগজে ডুবে গেলাম।
ডাক্তার দেখিয়ে মায়ের হাত ধরে হেঁটে ফিরছিল নাজিয়া। আচমকা ছুটে আসা গুলি লাগল মায়ের বুকে। রক্তাক্ত মাকে টলে পড়তে দেখে কান্না জুড়ে দেয় মেয়ে। রাস্তায় বসে মাকে জড়িয়ে ধরে ডাকাডাকিও করেও সাড়া পায়নি। জনতা আহত মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারদের কিছু করার ছিল না।
ওদিকে ছেলে তিনতলার ছাদ থেকে পুচকি পুচকি
করে ডেকে সাড়া। কোথাও পুচকি নেই।হন হন
করে নীচে এসে বলল হুলোটার সাথে ঝগড়া
করছিল মা বিড়ালটা।মনে হয় হুলোটা ভেতরে
আসতে চাইছিল। ওদের ঝগড়ায় পুচকি ভয় পেয়ে
লাফালাফি করে ছাদ থেকে হয়তো পড়ে গেছে।
বলেই পুচকিকে খুঁজতে বেড়িয়ে যায় বাড়ির আসেপাশে।
পুচকি যে এই দুইমাস ওই তিন তলার
ঘর আর ছাদ ছাড়া কিছুই চেনে না। ওকে বোধ
হয় আর পাওয়া যাবে না। ছোট্ট নাজিয়ার কথাও ভাবছি সে আজ মাতৃহারা প্রকাশ্য রাস্তায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে।
এদিকে মা বিড়াল মিয়াও মিয়াও করে বাড়ি তোলপার করছে।কখনো আমার মুখের দিকে
করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর ভাষায় জিজ্ঞেস করছে
আমার মেয়েকে দেখেছো? কি আশ্চর্য অনুভূতি এই অবলা জীবের।প্রায় একঘন্টা মা বিড়াল ও আমরা পুচকিকে খুঁজতে ছটফট করেছি ঠিক নাজিয়া ও তার চটকল কর্মী বাবা নাসরিনাকে হারিয়ে যেভাবে ছটফট করেছে।
ছেলে বাইরে খুঁজে চলেছে পুচকিকে আর আমিও
বাড়ির সব ঘরে খুঁজে পেলাম না তাকে।ভাবলাম
মা বিড়ালের গলার শব্দ শুনে ও চলে আসবে।আমি খুঁজতে থাকি নাসরিনার মৃত্যু রহস্য।
কয়েকজন দুষ্কৃতী ওই এলাকার প্রোমোটার কালাম উদ্দিনকে খুন করতে এসেছিল। ঘটনার সময়ে তিনি নাসরিনার খুব কাছাকাছি হাঁটছিলেন
বলেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নাসরিনার বুকে লাগে।
দুষ্কৃতীরা কেন ওই প্রোমোটারকে লক্ষ করে খোলা রাস্তায় গুলি চালাল, গোয়েন্দাদের মতো আমিও তা ভাবছিলাম। ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশের শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা
উচিত।
নাসরিনার স্বামী নিজামুদ্দিন বলেন, “সকালে ডাক্তার দেখিয়ে বোনদের সঙ্গে দেখা করে বিকেলে বাড়ি ফিরবে বলেছিল স্ত্রী। কী করে, কী হল বুঝতে পারছি না!”
আমিও কি করে হুলো ছাদে গেলো আর পুচকি কোথায় গেল কিছুই বুঝতে পারিনি। সেই ফাঁকে আমি ছাদের ঘরে গিয়ে দেখি
খাবারের ডিসটা একেবারে ফাঁকা।দুষ্কৃতি হুলো সবটা খেয়ে ছাদেই ঘুরছে।আমায় দেখে তখন লাফিয়ে অন্য ছাদে পালিয়ে গেল। তখনও
পুচকিকে পাওয়া যায়নি।
মা বিড়ালকে বাইরে বের করে দিতেই
মিয়াও মিয়াও করে জোরে ডাকতে থাকে।
মায়ের চেনা ডাকে ক্ষীণ স্বরে পুচকির মিয়াও শব্দ ছেলের কানে আসে। তাকিয়ে দেখে পাশের বাড়ির পাঁচিলে বসে পুচকি কাঁপছে। দৌড়ে গিয়ে পুচকিকে কোলে নিয়ে দেখল আহত হয়েছে কিনা।দেখল হাঁটা চলা করতে পারছে।চোট লাগেনি শুধু ভয়ে কুঁকড়ে কাঁপছিল। মায়ের কাছে দিতেই মা তাকে খুব চুমু খেল আর মিয়াও স্বরে পুচকিকে শাসনও করল।কি সুন্দর দু বাহুতে বাচ্ছাটিকে জড়িয়ে ধরে আদর করল আমাদের মতো।
মা বিড়াল ফিরে পেল তার সন্তানকে কিন্তু নাজিয়া
ফিরে পেল না তার মাকে।