জামাই ষষ্টী
বাইরে করোনা আর ঘরে হাঁড়ির হাল। রিক্সা চালক বিমলের ঘরে- বাইরে মিলিয়ে বেহাল অবস্থা। মাস পাঁচেক আগে গোটা পঞ্চাশেক আত্মীয় – কুটুম নিয়ে বড়ো মেয়েটির বিয়ে দেয়। এতে অবশ্য বিমলের লাভই হয়েছিল। নিম্নবৃত্ত হওয়ায় তার সামর্থ্যের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে যায়।
কিন্তু তারপর আবার রোগের প্রকোপ বাড়ল। লোকজন আবারও ঘরবন্দী হল। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর বাইরে বেরোয় না। সাইকেলে বা মোটর সাইকেল নিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। যা কিছু টাকা জমানো ছিল তাও শেষ হয়ে এলো। কোনো মতে স্ত্রী আর ছোটো দুই মেয়েকে নিয়ে মাঠের শাক পাতা খেয়েই দিন চলছে তাদের। এরমধ্যে আবার স্ত্রীর কথায় জামাই বাড়ি গিয়ে জামাই ষষ্টীর নিমন্ত্রণও করে আসতে হয়েছে ।
আগামীকাল সেই ষষ্টী । সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই মেয়ের ফোন। শ্বাশুড়ি মার দাবি তার ছেলে আর বৌমাকে যেন নতুন শাড়ি আর ধুতি পাঞ্জাবি পড়িয়ে ষষ্টীর বরণ করা হয়। বৃষ্টি ছাড়াই বিমল বাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জামাই আসবে তাই কিছু ভালো মন্দ তো খাওয়াতেই হবে সেই কথা মাথায় রেখে গতকাল কত লোকের দোরে দোরে ঘুরে কোনরকমে কিছু টাকা সুদে ধার করে এনেছিল। এখন জামা কাপড়ের টাকা সে কোথা থেকেই বা জোগাড় করবে? এদিকে শ্বাশুড়ির কথার অন্যথা হলে যদি তার মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিয়ে যায় চিরদিনের মত।
হাজার খুঁজেও অন্য কোনো উপায় তার মাথায় এলো না। বিমলের চোখের সামনে ভেসে উঠলো – বাটি হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে যেন ভিক্ষা করছে।