Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাংলা কবিতায় মানবিক দিক || Sankar Brahma

বাংলা কবিতায় মানবিক দিক || Sankar Brahma

বাংলা কবিতায় মানবিক দিক

মানুষ এখন নানা কারণে দিশেহারা।
যে আদর্শ ও বিশ্বাসের হাত ধরে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল , তার থেকে আমরা নানা কারণেই বিচ্যুত হয়ে পড়েছি, কি আর্থিক, কি সামাজিক ভাবে। পুরনো বিশ্বাসকে হারিয়ে, নতুন কোন বিশ্বাস বা আদর্শের উপরও আস্থা রাখা যাচ্ছে না এখন আর।
একটা স্থির লক্ষ্য, নিজেকে সমর্পণ করার মতো কোন স্থির বিশ্বাস আমাদের থাকা অবশ্যই উচিৎ, সে বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছবার পদ্ধতি কি হওয়া উচিৎ এ নিয়েই যত সংশয়, সন্দেহ।
কবিরাও সাধারণ মানুষের মতো কালের
এই সঙ্কটময় সময়ের শরিক। তার উপলব্ধিতে মানুষের অসহয়তা প্রকাশ আরও বেশী গভীর ও মর্মস্পর্শী।
মানুষের সপক্ষে, মানবিক মূল্যবোধের
উচ্চারণে , বিবেকবান কবি মাত্রই সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না। কবি মাত্রই মূলত মানব অভিজ্ঞতার লিপিকার। সে কারণেই, কোথাও কখনও মানবতার খর্ব দেখলে , তিনি চুপ করে থাকতে পারেন না।
শান্তি-স্বাধীনতা-প্রগতির পক্ষে কোন অন্তরায় মূলক ঘটনা ঘটলে ,তার হৃদয় মথিত হতে থাকে।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন –
” সেই শিল্পই খাঁটি শিল্প, যার দর্পণে জীবন প্রতিফলিত। তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে, যা কিছু সংঘাত সংগ্রাম আর প্রেরণা, জয়, পরাজয় আর জীবনের ভালোবাসা,
খুঁজে পাওয়া যাবে একটি মানুষের সব কটি দিক।
সেই হচ্ছে খাঁটি শিল্প যা জীবন সম্পর্কে মানুষকে মিথ্যা ধারণা দেয় না।
কবিতার গদ্যের আর কথা বলবার ভাষার বিভিন্নতা নতুন কবি স্বীকার করেন না। এমন এক ভাষায় তিনি লেখেন – যা বানানো নয়, কৃত্রিম নয়, সহজ, প্রাণবন্ত, বিচিত্র গভীর, একান্ত জটিল – অর্থাৎ অনাড়ম্বর সেই ভাষা।”
এ রকম ঘটনার প্রতিরোধ করার জন্য ,কবিমন ছটফট করতে থাকে। যথাসময়েই তিনি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন অন্যয়ের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠে ভর্ৎসনাবাণী উচ্চারণ করতে।
এ’ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ , নজরুল আমাদের কাছে পথপ্রদর্শক।
পরবর্তীকালের কবিরাও পিছিয়ে থাকেননি তার থেকে। জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ মুখেপাধ্যায় ,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তরসূরী।
” মন্বন্তর শেষ হ’লে পুনরায় নব মন্বন্তর ;
যুদ্ধ শেষ হ’য়ে গেলে নতুন যুদ্ধের নান্দীরোল ;
মানুষের লালসার শেষ নেই ;
উত্তেজনা ছাড়া কোন দিন ঋতু ক্ষণ
অবৈধ্য সংগ্রাম ছাড়া সুখ
অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেওয়া ছাড়া
প্রিয় সাধ নেই।”
(এই সব দিন রাত্রি/ জীবনানন্দ দাশ)।
” ফাটা ডিমে তা দিয়ে কী ফল পাবে?
মনস্তাপেও লাগবে লাগবে না ওতে জোড়া।
অখিল ক্ষুধার শেষে কি নিজেকে খাবে?
কেবল শূন্যে চলবে না আগাগোড়া।”
(উটপাখী/ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)।
” আমরা যে প্রাণ পাব মেটাব যে বুভূক্ষুর ক্ষুধা
কখনও ভুলি কি সেই দিন?
তোমাদের আমাদের লেনিনের একই বসুধা
অগ্রজ তো একই স্ট্যালিন”
(আত্মীয় সওগাত/বিষ্ণু দে)।
” একটু চোখে চোখে রাখো –
দিনগুলো ভারি দামালো;
দেখো
যেন আমাদের সাবধানে
এই দামালো দিনগুলো
গড়াতে গড়াতে
গড়াতে গড়াতে
আগুনের মধ্যে না পড়ে।”
( এখন ভাবনা/ সুভাষ মুখোপাধ্যায়)।
” পথ চলতে চলতে হঠাৎ দেখলাম
ফুটপাথে এক মরা চিল !
চমকে উঠলাম ওর করুণ বীভৎস মূর্তি দেখে।
অনেক উঁচু থেকে যে এই পৃথিবীটাকে দেখেছে
লুন্ঠনের অবাধ উপনিবেশ,
যার শ্যেন-দৃষ্টিতে কেবল ছিল
তীব্র লোভ আর ছোঁ মারার দস্যু প্রবৃত্তি -“
(চিল/ সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়)।
” মানুষের সব গিয়ে এখন রয়েছে হিংসা বুকে
প্রেম-পরিনয় গিয়ে এখন সে রক্তের অসুখে
মোহ্যমান,প্রাণ নিতে পারে
নিশ্চিত কোথাও কোন ভুল থেকে গেছে ব্যবহারে।
মানুষের সঙ্গে আর মেলামেশা সঙ্গতও নয়
মনে হয় এর চেয়ে কুকুরের শ্লেষ্মাও মধুর।”
(ভুল থেকে গেছে/ শক্তি চট্টোপাধ্যায়)।
শক্তি অন্যত্র আবার বলেছেন, —
” মানুষ বড়ো কাঁদছে,তুমি মানুষের পাশে এসে
দাঁড়াও।”
“একদিন কেউ এসে বলবে,
তোমার ভাতের থালা থেকে আমি তিন গ্রাস তুলে নেব
কারণ,আমার কোন থালাই নেই
আমার অনাহার একঘেয়েমির মত ধিকধিক করে জ্বলছে
আর আমার ভাল্লাগে না”
(আমার ভাল্লাগে না/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)।
আর একটি কবিতা –
“চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে,
বুকের ভিতরটা ফাঁকা….
আমারও কথা ছিল হাতিয়ার নিয়ে তোমার পাশে দাঁড়াবার।…….
কিন্তু আমার অনবরত দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
(চে গুয়েভারার প্রতি/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়)।
এছাড়াও যাদের কবিতায় মানবিক উচ্চারণ ধ্বনিত হয়েছে,তাদের মধ্যে রয়েছেন — প্রেমেন্দ্র মিত্র ,সমর সেন , অরুন মিত্র ,বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ,কামাক্ষ্যা প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় , সিদ্ধেশ্বর সেন , রাম বসু, অরুণ ভট্টাচার্য , শংকরানন্দ মুখোপাধ্যায় , কিরণ শংকর সেনগুপ্ত ,কৃষ্ণ ধর ,দীনেশ দাস ,শঙ্খ ঘোষ , তরুণ সন্যাল ,মোহিত চট্টোপাধ্যায় , যুগান্তর চক্রবর্তী, আল মাহমুদ ,শামসুর রহমান ,অমিতাভ দাশগুপ্ত, মণিভূষণ ভট্টাচার্য ,হুমায়ুন আজাদ,রফিক আজাদ,নির্মলেন্দু গুণ,মহাদেব সাহা, তুলসী মুখোপাধ্যায় , পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, নবারুণ ভট্টাচার্য, সব্যসাচী দেব, ফণিভূষণ আচার্য , জিয়া হায়দার, পবিত্র মুখোপাধ্যায় , রুদ্র মহম্মদ , অসীম সাহা,,জয় গোস্বামী , শ্রীজাত প্রমুখ।
এই সল্প পরিসরে সকলের কবিতার উদাহরণ তুলে ধরে আলোচনা করা সম্ভব হলো না। ভবিষ্যতে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress