দেবতার জন্ম হ’ল |
দেবতার জন্ম হল সুপবিত্র সুন্দর প্রভাতে
মাটির কোলের পরে—
মার বুকে,
বিধাতার আশীর্ব্বাদ লয়ে |
এমনি আমার ভগবান
বার বার জন্ম ল’ন মার বুকে
সুপবিত্র ধরণীর কোলে |
তার পর চেয়ে দেখি –
কোথা মোর ভগবান ?
জীর্ণ গৃহ, আবর্জ্জনা চারিদিকে,
তার মাঝে আলোহীন বায়ুহীন কক্ষে,
ছিন্ন শয্যা পরে শুয়ে
রোগ-রুক্ষ ক্ষুধা-ক্ষীণ দেহ লয়ে
দেবতা আমার
ফেলে দীর্ঘশ্বাস !
আলোকের দেবতার আলো নাহি মিলে,
মিলে না ক’ বায়ু |
রজনীর লক্ষ্য তারা চেয়ে চেয়ে খোঁজে আর কাঁদে—
দেবতারে খুঁজে নাহি পায় |
কিম্বা দেখি—
চিনিতে না পারি ;
আমার দেবতা এ কি ?
কলুষ-বীভত্স মুখ,
দৃষ্টিভরা পাপে,
অঙ্গে অঙ্গে চিহ্ন কলঙ্কের—
—মার কোলে জন্ম যার
জন্ম যার এ পবিত্র মৃত্তিকার ‘পরে
কার পাপ নিজেরে শুধাই—
মোর ভগবান হল অন্নের কাঙ্গাল,
বিকৃত কুৎসিত আর আত্মায় বামন,
রুদ্ধ-বৃদ্ধি বুভুক্ষিত কদাকার প্রাণ !
কার পাপ ?
এ আমার, এ তোমার, এ যে সর্ব্ব মানবের পাপ
দেবতার আলো করি চুরি,
অন্ন রাখি কেড়ে,
শাস্তি তাই যায় বেড়ে বেড়ে দিনে দিনে |
যত জন্ম ব্যর্থ করি দেবতার,
যত প্রাণ পুষ্টি বিনা মরে,
মানবের যাত্রা পথে,
তত জমে সুবিপুল বাধা আবর্জ্জনা |
দেবতার ব্যর্থ জন্ম !
—সেই অশ্রু জমে আর জমে
বিধাতার নেত্রকোণে ;
যত গ্লানি মানবের হতেছে সঞ্চয়
সেই অশ্রু-প্লাবনের ভাঙ্গন ধারায়
মুছে যাবে কোন্ দিন |
সেই দিন হব শুচি |
আজ
বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে বন্দী মোর ভগবান কাঁদে,
কাঁদে কোটি মার কোলে অন্নহীন ভগবান মোর ;
আর কাঁদে পাতকীর বুকে
ভগবান প্রেমের কাঙ্গাল !
—এক দিন মার কোলে জন্ম লয়ে, শিরে লয়ে মার স্নেহাশিস,
আর দিন সুন্দর আমার
স্বার্থে লোভে ক্রূরতায়, হিংসায় প্রচণ্ড লালসায়
কুৎসিত, জঘন্য, ভয়ঙ্কর মানবের পুরী হতে,
পঙ্কমাখা, শীর্ণ, ক্ষীণ, হিংসায় বিক্ষত,
কদাকার, লালসা-জর্জ্জর,
বিদায় লইয়া যান,
একটি করুণ শুধু রাখি দীর্ঘশ্বাস |