মনে করি ভাল বাসব |
শপথ করি এ জীবন হবে প্রেমের তপস্যা |
প্রভাতের আলোকে চোখ থেকে বুকে নিমন্ত্রণ করি |
মানুষের কোলাহল চলাচল ভালো লাগে |
—দূর আকাশে চিলগুলি অদ়ৃশ্য বৃত্ত রচনা করে,
ছোট নদীটির ঘোলাটে জল তার অজস্র জঞ্জাল নিয়ে বয়ে যায়,
গরু ও মোষের গাড়ীগুলি মন্থর ভাবে যাতায়াত করে ;
কাকের কোলাহল, ফেরিওয়ালার হাঁক, দুটি দুরন্ত ছেলের ঝগড়া,
পাখীর ডানার শব্দ শুনতে পাই |
আমায় ঘিরে জীবনের স্রোত বয় এবং আমি সেই
স্রোতের স্পর্শ হৃদয়ে সানন্দে অনুভব করি |
আসুক দুর্দ্দিন, মনে করি শপথ রক্ষা হবে |
প্রিয়ার দৃষ্টি আছে সম্বল, আছে বন্ধুর প্রেম,
কত জননীর অযাচিত স্নেহ !
কত দেশে কত অজানা মানুষের চোখে যে দেবতাকে দেখলাম |
বিদ্রোহ আমি করব না, জীবনকে আমি তিক্তমুখে
অভিশাপ দেব না,
যে শেষ নিশ্বাসটি পৃথিবীকে দিয়ে যাব তাতে বিষ থাকবে না,
থাকবে শুধু চিরকালের নব সূর্য্যোদয়ের জন্যে চিরন্তন প্রণতি,
ভ্রূণ ভবিষ্যতের জন্যে শ্বাশত আশীর্ব্বাদ |
তারপর একদিন জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে দেখি
আকাশ অন্ধ হয়ে গেছে ;
মত্যু-পথ-যাত্রী প্রিয়া শীর্ণ দুর্ব্বল শিথিল বাহু দিয়ে
আঁকড়ে ধরবার
চেষ্টা করে বলে, “আমি তোমায় ছেড়ে যাব না, আমায় রাখ |”
অসহায় বন্ধু বলে, “অন্ধকারে তোমার হাত খুঁজে পাচ্ছি না বন্ধু |
ভাঙ্গা দেওয়ালের ফাটলে একটি ঘাসের গুছি
অনেক দিন জীবনের জন্য যুঝেছিল—
প্রতিদিন দেখতাম কী তার প্রাণান্ত প্রয়াস
একটি পুষ্পিত প্রশাখা প্রসারিত করবার জন্যে,
একদিন বুঝি একটি ফিকে বেগুনি রঙের ছোট্ট ফুল ফুটেছিল,
কিন্তু মূল তখন দেউলে হয়ে গেছে ;–
সব শুকিয়ে হলুদ হয়ে গেল |
পথ দিয়ে আসতে আসতে দেখি নির্ম্মল শিশুর দল
ক’টা ইঁদুরছানা ধরে
তাদের বলি দিয়ে উল্লাস করছে—কি সরল পৈশাচিকতা !
সৃষ্টির মূলেই যে নির্ব্বিকার নির্ম্মমতা |
দেখি মৃত্যুর শিয়রে নেওয়া চিত্র-বিলাপের শপথ শাপ হয়ে ওঠে,
শুনি বৃদ্ধ তার যৌবনের প্রেম নিয়ে পরিহাস করছে |
–জীবনকে কি ঘিরে আছে একটি বিপুল প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ ?