সেই সব হারানো পথ আমাকে টানে ;—-
কেরমানের নোনা মরুর উপর দিয়ে,
খোরাশান থেকে বাদক্ শান,
পামিরের তুষার-পৃষ্ঠ ডিঙিয়ে ইয়ারকন্দ থেকে খোটান |
শ্রান্ত উটের পায়ে-পায়ে যেখানে উড়ছে মরুর বালি,
চমরীর খুরে লেগেছে বরফ-গলা কাদা !
বাদক্ শানের চুনি আর খোটানের নীলার নিষ্ঠুর ঝিলিক-দেওয়া,
ভেঙে-পড়া ক্যারাভানের কঙ্কালে আকীর্ণ,
লুব্ধ বণিক আর দুরন্ত দুঃসাহসীর পথ—
লাদকের কস্তুরীর গন্ধ যেখানে আজো আছে লেগে পুরানো স্মৃতির মতো |
সেই সব মধুর পথের কথা ভাবি ;–
আকাশের প্রচণ্ড সূর্যকে আড়াল-করা
দু-ধারের দীর্ঘ দেওয়ালের
শ্যাওলাগন্ধ ছায়ায়-ছায়ায় সংকীর্ণ সর্পিল পথ,
সাপের মতো ঠাণ্ডা পাথরে বাঁধানো |
ভাঙা ধাপ দিয়ে উঠে-যাওয়া
ঝিলমিল-দেওয়া বাতায়নের নিচে থমকে-থামা,
ধূপের গন্ধে সুরভি, দেবায়তনের দ্বারে ভূমিষ্ঠ-হওয়া পথ |
ভয়ে ভয়ে স্মরণ করি সে পথ ;—
ঘন ঘাসের বনে, শিকার ও শ্বাপদের নিঃসব্দ সঞ্চরণের ‘ঠৌরি’ ;–
যুগযুগান্ত ধ’রে দুর্বল ও ভীত, হিংস্র ও নির্মম পায়ে মাড়ানো |
যে-পথে তৃষ্ণার টানে চলে ভয়চকিত মৃগ ;
অন্ধকারে শাণিত চোখ চমকায় |
যে-পথ কুরুবর্ষ থেকে বেরিয়ে এল রক্তাক্ত,
দুর্বার তাতার বাহিনীর অশ্বখুর-বিক্ষত ;
করোটি-কঠিন যে-পথে
তৈমুরের খোঁড়া পায়ের দাগ |
স্বপ্ন দেখি সে-পথের,
অস্তাচল উত্তীর্ণ হয়ে আগামী কালের পানে—
স্বপ্ন যেখানে নির্ভীক,
বৃদ্ধের চোখে শিশুর বিস্ময়,
পৃথিবীতে উদ্দাম দুরন্ত শান্তি ||