Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কে কাকে টানছে || Sunil Gangopadhyay

কে কাকে টানছে || Sunil Gangopadhyay

সিমলে পাড়ার ছেলে নরেন যাচ্ছে দক্ষিণেশ্বরে
হাটখোলার মোড়ে দুই নাটুকে মাতালের সঙ্গে তার দেখা
অমৃতলাল আর গিরিশ, রাত কাটিয়েছে বিনোদিনীর বাড়িতে
নিদ্রাহীনতায় ও নেশায় এখন চারটি চোখ লাল
বীয়ার পান করতে করতে গিরিশের ঠাণ্ডা লেগে গেছে, তাই
স্যাঙাৎকে দিয়ে ঝট করে আনিয়ে নিয়েছিল বী-হাইভ ব্র্যান্ডি
তখন হুইস্কি ছিল ঘোড়ার ওষুধ, বনেদী মদ্যপায়ীরা ছুঁতে না
রাজনারায়ণ দত্তর ছেলে, কেরেস্তান কবি মাইকেল মধুর দেখাদেখি
সিগারেট টানা ইদানীং ফেসিয়ান হয়েছে
অমৃতলালের মুখে সেই আগুন, গিরিশের ঠোঁটে পান
নরেনকে দেখে হৈ হৈ করে উঠলো দুজন
গিরিশ খপ করে তার হাত চেপে ধরে বললো, আরে আরে অত হনহনিয়ে
কোথায় চললে ভায়া, ড়ুমুরের ফুলটি হয়েচো, দেখাই পাই না।
আজ পেয়েছি, আর ছাড়চিনিকো, চলো যাই, বিনির বাড়িতে ফিরি,
তোমার গান শুনবো, দেবেন ঠাকুরের ছোট ছেলের গানও নাকি তুমি গাইচো
কেমন সে গান, রসে টইটম্বুর না ধর্মে মাখো-মাখো?
.
নরেন একটুক্ষণ হাস্য-পরিহাসের পর বললো, হাত ছাড়, গিরি, যাচ্ছি
দক্ষিণেশ্বর, এখন সময় নেই
গিরিশ ঠোঁট উল্টে অবজ্ঞার সঙ্গে বললো, সেই পাগলা ঠাকুরটার কাছে?
সে তোকে কী দেয়?
চাকরি দেবে? সংসারের অনটন, জ্বালা-যন্ত্রণা ঘুচোবে?
ওসব বুজরুকি ঢের দেকিচি ভায়া, ওসব ছাড়ো, সুসময় অযথা বয়ে যেতে
দিও না। নরেন রাগ করে বললো, তুই শালা স্টেজে মাগী নাচাস,
তুই এসবের কী বুঝবি?
গিরিশও প্রমত্ত কণ্ঠে বললো, কী, আমি বুঝি না?
চৈতন্যদেবের নামে পালা নামাচ্ছি, দেখবি কেমন ফাটাবো
ভক্তির বন্যা বইবে, অডিয়েন্স কান্নার সমুদ্রে ভাসবে!
চল, মহলা দেখবি, আজই তোকে আমরা চাই!
নরেন বললো, তুই চল দক্ষিণেশ্বর, তোকেও আমরা চাই!
গিরিশ নরেনকে টানছে বিনোদিনীর দিকে, মঞ্চের ফুটলাইটের দিকে
নরেন গিরিশকে টানছে গঙ্গার উত্তর কূলে, পঞ্চবটীর প্রাঙ্গণে,
দিনের আলোর উৎসবে
কেউ কারুর হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছে না,
তবু বিপরীত দিকে সমান টান
হঠাৎ গজিয়ে-ওঠা নগর কলকাতা একাগ্র হয়ে দেখছে এই দৃশ্য
একদিকে মোহময় প্রমোদ, অন্যদিকে রসে-বশে মুক্তি
একদিকে শিল্প ও আত্মক্ষয়, অন্যদিকে ত্যাগ ও পরার্থপ্রিয়তা
খুবই মৃদু ও অসম্ভব জোরালো এই পারস্পরিক আকর্ষণ
কেউ জিতবে না, কেউ হারবে না
এক সময় হ্যাঁচকা টানে এ ওকে বুকে জড়িয়ে নেবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress