আত্মপ্রকাশ উপন্যাসখানা লিখতে তোকে কে মাথার দিব্যি
দিয়েছিল, সুনীল?
হারামজাদা ছেলে, কবিতা লিখছিলি, হঠাৎ গদ্যের দিকে ঢলাঢলি
করতে গেলি কেন?
ওরে লোভী পামর, তুই দু কূল খোয়ালি?
—কে তুমি, কে তুমি কেন আমাকে এমন বকুনি দিচ্ছো, মুখ দেখাও
জানো তো আমি আমি নিয়তিবাদ মানি না
রক্ত মাংসের না হলে গ্রাহ্য করি না দেবী সরস্বতীকেও!
–কৃত্তিবাসের পৃষ্ঠা ছেড়ে কেন গেলি খবরের কাগজের গদ্যের দিকে
খুব টাকার আহিঙ্কে হয়েছিল, তাই না?
—টাকা নয়, দু মুঠো ভাত, তখন প্রায় খেতে পেতাম না
বিদেশ ফেরত এক কাঠ-বেকার
ট্রামবাস ভাড়াও থাকতো না, ওয়েলিংটনের মোড় থেকে শ্যামবাজার
পর্যন্ত যেতাম পায়ে হেঁটে
গদ্য তবু মজুরি দেয়, কবিতা যে কিছুই দেয়নি
–কবিতা কিছুই দেয় না?
—কে তুমি, কে তুমি, মুখ দেখাও!
বিশ্বাসঘাতক! গদ্যের বর্ম পরেছিস বলে আজ
উচ্চারণ করতে পারলি, কবিতা কিছুই দেয় না
রক্ত মাংসের সরস্বতীর টুকরো দেয়নি?
স্বর্গের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, মাধুর্য-নিশানের ছোঁয়া পাসনি তখন?
–ন্যাকামি করো না, ওহে অশরীরী, ওহে মধ্যরাত্রির কণ্ঠস্বর
সরস্বতীর টুকরো, স্বর্গের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এসব ঢপ কথা
বাঁচতে চেয়েছিলাম, শূন্য পকেট, জীবনভরা শূন্যতা, তবু
বাঁচতে চেয়েছিলাম, তুমি কী জানো আমার দুঃখ!
—এগুলোর নাম গদ্য? লক্ষ্মীছাড়া আঙুল পুড়ে যায়নি কেন তোর?
—পুড়েছে, আঙুল নেই, রক্তাভ নোখ নেই, আছে শুধু কলম
—আর?
–সাদা পৃষ্ঠাকে কালো করার প্রতিজ্ঞা
অন্ধের মতন এক সুদীর্ঘ সফর, প্রতিটি দিন অসমাপ্ত
—পেয়েছো কি মধ্য যামে যা ছিল পাবার?
—বেলাভূমিতে লাল লাল কাঁকড়াগুলো কি সমুদ্রকে পায়
নাকি সমুদ্র শুনতে পায় তার বন্দনাকারীদের ভাঙা গলা?
জীবন এ রকম
–কবিতা তোমাকে কিছুই দেয়নি? কয়েকটি দীর্ঘশ্বাস, কিছু চিঠি
পাটভাঙা জামা, না-ছেড়া টেকসই জুতো?
—কেন গদ্য ভাষায় কথা বলছো, ওহে অদৃশ্য যাত্রা দলের বিবেক?
ট্রাম লাইনের কর্কশ শব্দের মতন গদ্যে ঝঙ্কৃত হচ্ছে প্রেম
সব দিকে গদ্য, কবিতাকে আক্রমণ করছে গদ্য, টিনের চালে
অগভীর চোখ ধাঁধানো রোদ্দুরের মতন গদ্য, তবু তুমি কবিতাকে
আঁকড়ে ধরতে চাও, কে তুমি?
—আমি রাস্তার একটা বাঁক, তোমার জামার একটা হারানো
বোতাম, সুনীল!
—এখন আমি, রাত একটা চল্লিশে এই যা লিখছি
তা কবিতা না গদ্য?