গান্ধীজি বললেন, পানি পিলা দেও
স্কুল বালক আমরা খাকি হাফ প্যান্ট ও সাদা শার্ট পরে
সারবদ্ধ হয়ে গেছি বেলেঘাটা
শহরের এখানে ওখানে পোড়া ক্ষত, বাজার লুট, জানলা ভাঙা বাড়ি
রাস্তা থেকে লাশগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, দুর্গন্ধ যায়নি
এখনো কান পাতলে বাতাসে শোনা যায় কাপুরুষ খুনিদের চিৎকার
এরই মধ্যে এই গোরুর গাড়ির দেশে বিমানে চেপে হুড়মুড়িয়ে চলে এসেছে স্বাধীনতা
বেলেঘাটায় মুসলমান বসতির পাশে এক বাড়ির উঠোনে
খাঁটিয়া পেতে শুয়ে আছেন গান্ধীজি
তাঁর চোখের নীচে শুকনো অশ্রুর রেখা
দূরে ব্যান্ড বাজছে, পতপত করে উড়ছে অসংখ্য তেরঙ্গা ঝাণ্ডা
রঙিন কাগজের শিকলি ঝুলছে অনেক বারান্দায়
যারা দেশকে মা বলে ডেকেছিল, তারা দেখছে সেই মাকে
কুচিয়ে কুচিয়ে কাটছে র্যাডক্লিফের ছুরি
ফিনকি দিয়ে উঠছে রক্ত, সেই রক্ত গায়ে মেখে কত মানুষ
মেতে উঠেছে স্বাধীনতার উৎসবে
ভাড়াবাড়ির স্যাঁতসেঁতে একতলার ঘরে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন বাবা
প্রায় অন্ধ ঠাকুমা কিছুই বুঝছেন না, ব্যাকুল ভাবে একে ওকে
জিজ্ঞেস করছেন, কী হল, অ্যাঁ? আমরা আর
বাড়িতে ফিরতে পারব না? আম গাছগুলো, আমার
নিজের পোঁতা তুলসী গাছ,..পুকুর ঘাটে কে
বসে আছে?
গান্ধীজি ভাঙা ভাঙা গলায় মুসলমান ছেলেদের বললেন, হিন্দু ভাই লোগোঁকো
পানি পিলা দেও
আমরা ছুটে গিয়ে তাদের হাতের গেলাস থেকে জল খেলাম, কী অপূর্ব স্বাদ,
যেন অমৃত, কত হর্ষময় কোলাকুলি হল
তবু ভাগ হয়ে গেল নদীগুলো, শূন্যে তারকাঁটা, এক পাশে পানি
আর এক পাশে জল!