১
মাগো, আমার মা—
তুমি আমার দৃষ্টি ছেড়ে কোথাও যেয়ো না।
এই যে ভালো ধুলোয় ধুলোয় জড়িয়ে আছে দুয়ারহারা পথ
এই যে স্নেহের সুরে—আলোয় বাতাস আমার ঘর দিলরে দিল—
আকাশ দুটি কাঁকন বাঁধে, বলে, আমার সন্ধ্যা আমার ভোর
সোনায় বাঁধা—ভুলে যা তুই ভুলে যা তোর মৃত্যু মনোরথ।
সেই কথা এই গাছ বলেছে, সেই কথা এই জলের বুকে ছিল,
সেই কথা এই তৃণের ঠোঁটে —ভুলে যা তুই, দুঃখরে ভোল তোর,
ধুলোতে তুই লগ্ন হলে আনন্দে এই শূন্য খোলে জট।
তুমি, আমার মা—
শান্তি তোমার ঘট ভরেছে, দুঃখ তোমার পল্লবে কি গাঁথা
তুমি আমার চক্ষু ছেড়ে কোথাও যেয়োও না।
২
আকাশ বলে বাতাস বলে ব্যথা।
ব্যথার তুলি পলাশলাল মেঘে।
ভাঙলে তুমি প্রেমের নীরবতা
দুঃখ আমার টলবে বুকে লেগে।
দুঃখ আমার বুকের টলোমলো
জলের বুকে সন্ধ্যা দিল এঁকে –
ব্যথায় লেগে বন-বনানী হলো
আমার মতো, আমার মতো কে কে ?
আমার মতো বাতাস জানে ডানা,
আমার মতো সূর্য জানে ফুল,
তোমার চোখে নিদ্রা হলো টানা
মরণমুখী সূর্য আর জাগনলোভী চাঁদে
আকাশ পরে স্নিগ্ধ দুটি দুল।
৩
মাগো, আমার মা—
তুমি আমার এ ঘর ছেড়ে কোথাও যেয়ো না।
মৃত্যু তোমায় ভয় পেয়েছে, রাত্রি এল অন্তদীঘির পারে,
যেখানে এই চোখ মেলেছে সেই খানে কার শান্তি কেঁদে মরে ?
নিশুতি রাত ঝুমঝুমিয়ে আর্তনাদের বর্শা এল ছুটে—
যেখানে যাও সেখানে নেই শান্তি তোমার সেখানে নেই আর।
দিন ছুটেছে রৌদ্ররথে শহরগ্রামে সাগরে বন্দরে
যেখানে যাও সেখানে চাপরক্ত পাবে শীর্ণ করপুটে—
আকাশ-ডাঙা বন-বনানী শান্তি বাঁধে শান্তি বাঁধে কার !
তুমি আমার মা—
শান্তি তোমার ঘট ভরেছে, রক্তে ঘটের সিঁদুর হবে টানা
তুমি আমার ঘর ছেড়ে মা কোথাও যেয়ো না।
৪
বাজনা বাজে, চৌকিদার, বাজনা বাজে কেন ?
নীলদুয়ারে ঘা দিল ভাই মেঘের সেনাগুলো।
বাজনা বাজে, চৌকিদার, বাজনা বাজে কেন ?
ভয়ের দুয়ার-বন্ধ ঘর কাঁপছে জড়োসড়ো—
বাজনা বাজে, চৌকিদার, বাজনা বাজে বড়ো।
মাগো, আমার মা—
ঝড় ন্মেছে দুয়ারে তার ঝঞ্ঝা লাগো-লাগো
তুমি আমার বাজনা শুনে শঙ্কা মেনো না।
বাজনা বাজুক, ভয় পেয়ো না, বাজনা বাজুক মা।