Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » যতীন দাস || Kazi Nazrul Islam

যতীন দাস || Kazi Nazrul Islam

আসিল শরৎ সৌরাশ্বিন
দেবদেবী যবে ঘুমায়ে রয়
পাষাণ-স্বর্গ হিমালয়-চূড়ে
শুভ্র মৌলি তুষারময়।
ধরার অশ্রু – সাত সাগরের
লোনা জল উঠি রাত্রিদিন
ধোঁয়াইয়া ওঠে স্বর্গের পানে,
অভিমানে জমে হয় তু্হিন।
পাষাণ স্বর্গ, পাষাণ দেবতা,
কোথা দুর্গতিনাশিনী মা,
বলির রক্তে রাঙিয়া উঠেছে
যুগে যুগে দশ দিক-সীমা।
খড়ের মাটির দুর্গা গড়িয়া
দুর্গে বন্দি পূজারিদল
করে অভিনয়! দেবী-বিগ্রহ
জড় গতিহীন চির-অচল।
দেবতা ঘুমান, ঘুমায় মানুষ,
এরই মাঝে নিজ তপোবলে
জোর করে নেয় দেবতার বর
দৈত্য-দানব দলে দলে।
মোরা পূজা করি, পূজা শেষে চাই
পায়ের পদ্ম শুভ-আশিস,
ওরা চেয়ে নেয় কালীর খড়গ,
বিষ্ণুর গদা, শিবের বিষ।
তপস্যা নাই, ঢাকঢোল পিটে
দেবতা জাগাতে করি পূজা,
দশপ্রহরণধারিণী এল না
দশশো বছরে দশভুজা।….
এমনই শরৎ সৌরাশ্বিনে
অকাল-বোধনে মহামায়ার
যে পূজা করিল লঙ্কেশ্বরে
বধিতে ত্রেতায় রাম-অবতার,
আজিও আমরা সে দেবীপূজার
অভিনয় করে চলিয়াছি,
লঙ্কা-সায়রি রাবণ মোদেরে
ধরিয়া গলায় দেয় কাছি!
দুঃসাহসীরা দুর্গা বলিয়া
হয়তো কাছিতে পড়ে ঝুলে,
দেবীর আসন তেমনই অটল,
শুধু নিমেষের তরে দুলে।
বলি দিয়া মোরা পূজেছি দেবীরে
নব-ভারতের পূজারিদল
গিয়াছিনু ভুলি – দেবীরে জাগাতে
দিতে হল আঁখি-নীলোৎপল।
মহিষ-অসুর-মর্দিনী মা গো,
জাগো এইবার, খড়গ ধরো।
দিয়াছি ‘যতীন’ অঞ্জলি নব –
ভারতের আঁখি-ইন্দিবর।

টুটে তপস্যা, ওঠে জাগি ওই
পূজারত অভিনব ভারত,
ভারত-সিন্ধু গর্জি উঠিল
নিযুত শঙ্খ মন্ত্রবৎ।
‘উলু উলু’ বোলে পুরনারী, দোলে
হিম-কৈলাস টালমাটাল,
কারাগারে টুটে অর্গল, ওঠে
রাঙিয়া আশার পূর্বভাল।

ছুটে বিমুক্ত-পিঞ্জর, পায়ে
লুটে শৃঙ্খল ছিন্ন ওই,
নাচে ভৈরব, ভৈরবী নাচে
ছিন্নমস্তা তাথই থই।
আকাশে আকাশে বৃংহিত – নাদ
করে কোটি মেঘ ঐরাবত,
সাগর শুষিয়া ছিটাইছে বারি,
ও কী ফুল হানে পুষ্পরথ।
এ কী এ শ্মশান-উল্লাস নাচে
ধূর্জটি-শিরে ভাগীরথী,
অকূল তিমিরে সহসা ভাতিল
নব-উদিচীর নব জ্যোতি।
বিস্ময়ে আঁখি মেলিয়া চাহিনু,
দেখা যায় শুধু দেবীচরণ,
মৃত্যুঞ্জয় মহাকাল শিব
যে চরণ-তলে মাগে মরণ!
ভৈরব নাচে ঊর্ধ্বে, নিম্নে
খণ্ডিত শির মহিষাসুর,
দুলিছে রক্ত-সিক্ত খড়গ,
কাঁপিছে তরাসে অসুর-পুর।
চিৎকারি ওঠে উল্লাসে
নব-ভারতের নব-পূজারিদল,
‘চাই না মা তোর শুভদ আশিস,
চাই শুধু ওই চরণতল –
যে চরণে তোর বাহন সিংহ,
মহিষ-অসুর মথিয়া যাস।
যদি বর দিস, দিয়ে যা বরদা,
দিয়ে যা শক্তি দৈত্য-ত্রাস’ ।

শুধু দেখা যায় দেবীর রক্ত –
চরণ, খড়গ, মহিষাসুর, –
ওকে ও চরণ-নিম্নে ঘুমায়
সমর-শয়নে বিজয়ী শূর?
কে যতী-ইন্দ্র তরুণ তাপস
দিয়া গেলে তুমি এ কী এ দান?
শবে শবে গেলে প্রাণ সঞ্চারি –
কেশব, বিলায়ে তোমার প্রাণ!
তিলে তিলে ক্ষয় করি আপনারে
তিলোত্তমারে সৃজিলে, হায়!
সুন্দ ও উপসুন্দ অসুর
বিনাশিতে তব তপ-প্রভায়!
হাতে ছিল তব চক্র ও গদা,
গ্রহণ করনি হেলায়, বীর!
বুকে ছিল প্রাণ, তাই দিয়ে রণ
জিনে গেলে প্রাণহীন জাতির।
তোমার হাতের শ্বেত-শতদল,
শুভ্র মহাপ্রাণ তোমার,
দিয়া গেলে তব জাতিরে আশিস,
তোমার হাতের নমস্কার!

লইবে কে বীর উন্নত-শির
দেবতার দান সে শতদল,
টলিয়া উঠেছে বিস্ময়ে ত্রাসে
বিন্ধ্য হইতে হিম-অচল।
নামিয়া আসিল এতদিনে বুঝি
হিমগিরি হতে পাষাণী মা,
কে জানে কাঘার রক্তে রাঙিয়া
উঠিতেছে দশদিক-সীমা!
দেখালে মায়ের রক্তচরণ,
কে দেখাবি দেবীমূর্তি মা-র,
ভারত চাহিয়া আছে তার পানে,
কে করিবে প্রতি-নমস্কার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress