সালাম অস্ত-‘রবি’
কাব্য-গীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা, দ্রষ্টা, ঋষি ও ধ্যানী
মহাকবি রবি অস্ত গিয়াছে! বীণা, বেণুকা ও বাণী
নীরব হইল। ধূলির ধরণি জানি না সে কত দিন
রস-যমুনার পরশ পাবে না। প্রকৃতি বাণীহীন
মৌন বিষাদে কাঁদিবে ভুবনে ভবনে ও বনে একা ;
রেখায় রেখায় রূপ দিবে আর কাহার ছন্দ-লেখা?
অপ্রাকৃত মদনে মাধবী চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়া
রূপায়িত রসায়িত করিবে কে লেখনী, তুলিকা নিয়া?
ব্যাস, বাল্মীকি, কালিদাস, খৈয়াম, হাফিজ ও রুমি
আরবের ইমরুল-কায়েস যে ছিলে এক সাথে তুমি!
সকল দেশের সকল কালের সকল কবিরে ভাঙি
তাঁহাদের রূপে রসে রাঙাইয়া, বুঝি কত যুগ জাগি
তোমারে রচিল রসিক বিধাতা, অপরূপ সে বিলাস,
তব রূপে গুণে ছিল যে পরম সুন্দরের আভাস!
এক সে রবির আলোকে তিমির-ভীত এ ভারতবাসী
ভুলেছিল পরাধীনতা-পীড়ন দুঃখ-দৈন্যরাশি।
যেন ঊর্ধ্বের বরাভয় তুমি আল্লার রহমত,
নিত্য দিয়াছ মৃত এ জাতিরে অমৃত শরবত।
সকল দেশের সকল জাতির সকল লোকের তুমি
অর্ঘ্য আনিয়া ধন্য করিলে ভারত-বঙ্গভুমি॥
তোমার মরুতে তোমার আলোকে ছায়া-তরু ফুল-লতা
জন্মিয়া চির-স্নিগ্ধ করিয়া রেখেছিল শত ব্যথা।
অন্তরে আর পাই না যে আলো মানস-গগন-কবি,
বাহিরের রবি হেরিয়া জাগে যে অন্তরে তব ছবি।
গোলাপ ঝরেছে, গোলাবি আতর কাঁদিয়া ফিরিছে, হায়!
আতরে কাতর করে আরও প্রাণ ফলেরে দেখিতে চায়।
ফুলের, পাখির, চাঁদ-সুরুজের নাহিকো যেমন জাতি,
সকলে তাদেরে ভালোবাসে, ছিল তেমনি তোমার খ্যাতি।
রস-লোক হতে রস দেয় যারা বৃষ্টিধারার প্রায়
তাদের নাহিকো ধর্ম ও জাতি, সকলের ঘরে যায়।
অবারিত দ্বার রস-শিল্পীর, হেরেমেও অনায়াসে
যায় তার সুর কবিতা ও ছবি আনন্দে অবকাশে।
ছিল যে তোমার অবারিত দ্বার সকল জাতির গেহে,
তোমারে ভাবিত আকাশের চাঁদ, চাহিত গভীর স্নেহে!
ফুল হারাইয়া আঁচলে রুমালে তোমার সুরভি মাখে
বক্ষে নয়নে বুলায়ে আতর, কেঁদে ঝরাফুল ডাকে।
আপন জীবন নিঙাড়ি যে জন তৃষাতুর জনগণে
দেয় প্রেম-রস, অভয়-শক্তি বসি দূর নির্জনে,
মানুষ তাহারই তরে কাঁদে, কাঁদে তারই তরে আল্লাহ্,
বেহেশ্ত হতে ফেরেশতা কহে তাহারেই বাদশাহ!
শত রূপে রঙে লীলা-নিকেতন আল্লার দুনিয়াকে
রাঙায় যাহারা, আল্লার কৃপা সদা তাঁরে ঘিরে থাকে।
তুমি যেন সেই খোদার রহম এসেছিলে রূপ ধরে,
আরশের ছায়া দেখাইয়া ছিলে রূপের আরশি ভরে।
কালাম ঝরেছে তোমার কলমে, সালাম লইয়া যাও!
ঊর্ধ্বে থাকি এ পাষাণ জাতিরে রসে গলাইয়া দাও॥