Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সেই লোকটা || Bani Basu

সেই লোকটা || Bani Basu

লোকটাকে সে প্রথম খেয়াল করে হুগলির ডি, আই অফিসে। আগেও দেখেছে। কিন্তু সে ভাবে লক্ষ করেনি।

বাবা স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন পাঁচ বছর হয়ে গেল। কিছুই হাতে পাননি। না পেনশন, না গ্রাচুয়িটি, না জি. পি. এফ। কোনোটার কাগজপত্র রেডি হয়নি, কোনটার ফাইল হারিয়ে গেছে। কোনোটা আবার ট্রেজারি রিলিজ করছে না। বাবা বললেন, দুটো বর্গের জ-ই আমার খয়ে গেল রে…জুতো আর জীবন। এবার তুই দ্যাখ যদি পারিস।

তা সেই তার বাবার কর্মক্ষেত্রের গোলকধাঁধায় প্রথম প্রবেশ। পাঁচ বছর সময় যতটা কম মনে হয়, ততটা কম নয় দেখা গেল। কেননা বাবার কর্মক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাবার সময়ের হেডমাস্টারমশাই রিটায়ার করেছেন। সেই সময়কার ক্লাক মারা গেছেন। কাগজপত্র সাত বাও জলে। বর্তমান ক্লাকের কাছে বর্তমান হেডমাস্টারমশাই যেদিন তাকে চতুর্থবার পাঠালেন সেদিন ক্লার্ক কাগজ পাকিয়ে কানে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলেন। বললেন, পেন্ডিং কাজ যে করব ইনসেনটিভ কই?

এখন, কাজ কখন পেন্ডিং হয়? যখন তোমরা তাকে পেন্ডিং রাখো, তাই না? তো তার আবার ইনসেনটিভ কী?—সে এইভাবে ভাবল। কিন্তু সে একটু ভীতু প্রকৃতির। উপরন্তু খুব বুঝদার। সবসময়ে অন্যের কথা ভেবে কাজ করার অভ্যাস। তাই সে দ্বিতীয় চিন্তা করল—সত্যিই। এঁদেরও তো বাঁধা সময় আছে। তার বাইরে কাজ করতে গেলে সেটা অন্যত্র হলে ওভারটাইম হত। আগের ক্লার্ক যে কাজ ফেলে রেখে বে-আক্কেলের মতো মারা গেলেন, তার জন্যে বেশি সময় খরচ করার কী দায় এঁর পড়েছে। হলই বা এটা সত্তর বছরের এক বৃদ্ধের গ্রাসাচ্ছাদনের মরণবাঁচনের ব্যাপার।

স্কুল লাভক্ষতির কারবার করে না, সে ইনসেনটিভ দেবে কোত্থেকে? পঞ্চম দিনে সুতরাং সে এক বাক্স নলেন গুড়ের ভালো সন্দেশ নিয়ে গেল। ইনসেনটিভ নয় এটা। কিন্তু তার আগাম খুশি আগাম কৃতজ্ঞতা সত্যিই ভারি কৃতজ্ঞ হয়ে জানিয়ে রাখছে সে–পেনশনেচ্ছু পিতার কৃতজ্ঞ ছেলে।

কাগজপত্র নড়েছে সংবাদ পেয়ে সে যখন বিজয়গর্বে বেরিয়ে আসছে তখন বাবার স্কুলের দরজার পাশ দিয়ে কালোমতো কে একটা যেন সরে গেল। গেল তো গেল, সে খেয়াল করেনি।

তারপর সে জানল তাকে ডি. আই অফিসে ধরনা দিতে হবে। কেননা সতেরো বছর আগের প্রাপ্য একটা ইনক্রিমেন্ট নাকি যোগ করা হয়নি, ভুলভাল হয়ে গেছে।

ডি. আই অফিসের রংচটা বাড়িটাকে মাঠের মাঝখানে হেঁপো রুগির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই তার মনটা দমে গিয়েছিল। করিডর দিয়ে যেতে যেতে সে দু পাশের ঘরে ফাইলের পাহাড় এবং ধুলো লক্ষ করে। এবং সেই লোকটাকে করিডরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। কাজটা তার দু তিনবার হাঁটাহাঁটি করার পর হয়ে যায়। অবশ্য ইনসেনটিভ লাগে।

এইভাবে অবশেষে সে বাবার পেনশন উদ্ধার করে যেদিন বাড়ি ফিরছে, তার মনে হল কে যেন তাকে অনুসরণ করছে। পকেটে পাঁচ টাকা তিরিশ পয়সার খুচরো এবং একঠোঙা কাবুলিমটর—সে খুব ভালোবাসে, পায়ে শুকতলা খয়ে যাওয়া ঝ্যালঝেলে হাওয়াই চটি, দু দিনের বাসি দাড়ি গালে এবং ছোটোভাইয়ের চেকশার্ট আর নিজের ব্লু জিনস তার পরনে, তার ভয় করার কিছু ছিল না, তবু সে নির্জন গলিগুলো এড়িয়ে যায়। একটা রাস্তা বাঁক ফেরবার মুখে কায়দা করে সে পেছনের লোকটাকে দেখেও নেয়। ওহ। তেমন কেউ না। সে আশঙ্কা করেছিল শার্টের কলার-তোলা, চোয়াড়ে-মুখে ব্রণ, মিঠুন-ছাঁটের চুলওয়ালা সাইকেলের চেন হাতে, ভোজালি-পকেটে কোনো মস্তানকে দেখবে। সেসব নয়। সেই লোকটা যে ডি. আই অফিসের করিডরের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল, এবং যে খুব সম্ভব বাবার স্কুলের দরজার পাশ দিয়েও সড়াৎ করে সরে গিয়েছিল।

এবার সে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, একটা নতুন শোনা জীবনমুখী গান ভাঁজতে ভাঁজতে বাকি পথটা দিব্যি হেঁটে মেরে দেয়, হাওয়াই চপ্পলটা মাঝরাস্তায় জবাব দিলেও সে কিছু মনে করে না।

লোকটাকে সে দ্বিতীয়-তৃতীয়বার দেখে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে। তার মায়ের যেবার অ্যাকসিডেন্ট হল সেই বার। তাদের আসলে একটা বাড়ি আছে। দেড়কাঠা জমিতে ঠাকুর্দা একতলা করেছিলেন। বাবা উদয়াস্ত কোচিং করে করে সারাজীবন ধরে দোতলাটা তোলেন, কিন্তু ছাদের পাঁচিলটা আর শেষ করতে পারেননি। তিন ইঞ্চি হঁটের যে নীচু গাঁথনিটা পাঁচিলের জায়গায় ছিল, পলেস্তারা পড়েনি বলেও বটে, সিমেন্টে মাটি মেশানো ছিল বলেও বটে, সে গাঁথনিটা কমজোরি হয়ে গিয়েছিল, ভেতরে ভেতরে আলগা হয়ে গিয়েছিল। যেমন হয় আর কি। হবি তোহ, তার মা আলসে থেকে তার একটা উড়ে-পড়ে-যাওয়া গোলাপি ব্লাউজ ঝুঁকে তুলতে যান। তার মতো অতবড়ো বেকার ছেলের মায়ের গোলাপি ব্লাউজের ওপর ঝোঁকের বে-আক্কেলেমিতেই হোক আর যা-ই হোক, পাঁচিলটি ধসে যায়, ফলে মা পড়ে যান, যে ঘটনাটুকু নিয়ে একটা গল্প লিখে ফেলা যায়, একটি গোলাপি ব্লাউজের জন্যে নাম দিয়ে।

মাকে সে হাসপাতালে ভরতি করতে পারছিল না। ডাক্তারবাবুরা, বেশ ইয়ং ছেলে সব, এই বয়সেই এত অ্যাকসিডেন্ট আর মৃত্যু দেখেছেন যে কারও রক্তাক্ত থেঁতলানো দেহ নিয়ে তাঁরা খুব ব্যস্ত না হয়ে প্রচুর কাজের ফাঁকে একটু মৃদু ফষ্টিনষ্টি করে নিচ্ছিলেন, এবং যে নার্সটির সঙ্গে করছিলেন না তার মেজাজ খাট্টা হয়ে গিয়েছিল। এমন সময়ে সেই লোকটাকে নজর করে সে। একদম অপরিচিত প্রাণীদের চিড়িয়াখানায় একটিমাত্র চেনা মুখ দেখে সে হয়তো অসহায় চোখে তাকিয়েছিল, লোকটি এগিয়ে আসে। হাত পাতে, সে তার কাছে যা ছিল দিয়ে দেয় এবং তার মা ভরতি হয়ে যান।

তবে তারপরে হয় আর এক ফ্যাচাং। দেখা যায় কম্মো কাবার। মা এতটা ধৈর্য ধরেননি, বিরক্ত হয়েই হয়তো বালতিতে লাথি মেরেছেন। ডাক্তারবাবুরা ভীষণ নিয়ম মানেন, তাঁরা জানেন একটা লাশকে এনে যদি কেউ চিকিৎসার দাবি করে, সেই দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখা ডাক্তারবাবুদের কর্তব্য। আগে লাশ বানিয়ে তারপর তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে কি না এ সন্দেহ নিরসন করতে ময়নাতদন্ত করতে হবে।

মা আর মা রইলেন না, ঝামেলায়-ফাঁসানো এক লাশ হয়ে গেলেন, তো সেই লাশ ছাড়াতে যখন সে ডোমেদের সঙ্গে দরাদরি করতে থাকে, সে এসব জানে না বলে বন্ধুজনদের তার বোকামিতে মজা পাওয়া হাসি শুনতে শুনতে, তখন সেই লোকটাকে তৃতীয়-চতুর্থবার সে দেখতে পায় এবং বুঝতে পারে মুশকিল আসান। হয়ে যাবে। ঠিক তাই। চারশো থেকে দুশোয় নেমে যায় ডোম। তার মড়াখেকো চেহারা দেখেই হয়তো এবং সেই দুশো টাকা বন্ধুবান্ধবের পকেট থেকে আপাতত উধার পাওয়া যায়।

এখন এই লোকটিকে যদি সে দেবদূত বলে মনের মধ্যে ভয়-মিশ্রিত শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রাখে তাকে কি দোষ দেওয়া যায়? যাদের বাবারা এই রকম পেনশন পান না, ঠাকুরদারা বাড়ি শেষ করে যেতে পারেন না, মায়েরা গোলাপি ব্লাউজ তুলতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা যান এবং মর্গে চালান হয়ে যান তাদের জীবনে একটা দেবদূতের কি দরকার হয় না? একটা দেবদূত কত কাজে লাগে বলুন তো? সাহস দিতে, মুশকিল আসান করতে, ভরসা জাগাতে জীবনটা সবটাই বরবাদ নয়—তার ভেতর কিছু একটা নেই-নেই করেও আছে এই বোধ উসকে দিতে একটা দেবদূত বড্ড কাজে লাগে। তারও লেগেছিল।

কিন্তু মানুষের ধর্মবিশ্বাস বড়ই প্রয়োজননির্ভর। তাই এত কাণ্ডের পরেও সে দেবদূতকে ভুলে যায়। দেবদূতের প্রয়োজনটা পর্যন্ত ভুলে যায়। কেন না তার ভাববার সময় ছিল না। মা মারা যাওয়ার ফলে সে রান্না করতে এবং তার ছোটো ভাই কাপড় কাচতে বাধ্য হওয়ায়, বাবা শোকগ্রস্ত জরাগ্রস্ত ভূতগ্রস্ত হয়ে পড়ায়, জামাইবাবুর সঙ্গে দিদির বনিবনা না হওয়ায়, একটি মেয়ে সুষ্ঠু দিদি এসে পড়ায়, দিদির খোরপোশের জন্য মামলা করতে টিউশানির সব টাকাগুলি উকিলকে গাঁটগচ্চা দিতে হওয়ায়, একটি রামবোকা ছাত্রী তার প্রেমে পড়ার কারণে ছাত্রীর দাদার ভাড়া করা গুন্ডাদের হাতে ঠ্যাঙানি খাওয়ায় সে ডাইনে বাঁয়ে তাকাবার অবসর পায়নি। কোনো কল্পনা, কোনও স্বপ্ন, আশা-নিরাশার দোদুলদোলা এসব তার অভিধান থেকে বেমালুম লোপাট হয়ে যায়।

সে অথই নদীর জলে পড়ে গেছে। সাঁতারের স জানে না, কিন্তু তাকে বাঁচতেই হবে সুতরাং সে যেমন পারে হাত পা ছোড়ে, ছুঁড়তে ছুঁড়তে ভেসে থাকতে শিখে যায়, শুধু ভেসে থাকা নদীতে জোয়ার আসলে সে একদিকে হড়কে যায়, আবার ভাটার সময়ে আরেক দিকে হড়কে যায়, এই সময়ে আবার ভরা কোটালে বান আসে। তিনতলা সমান উঁচু জলস্তম্ভ তাকে তুঙ্গে তুলে নিয়ে আছড়ে ফেলে দেয়, তারপরে সে অদূরে ঘূর্ণিপাক দেখে, প্রাণপণে বিপরীত দিকে টানতে থাকে। নিজেকে। কাজেই তার দেখা হয় না কোথাও কোনো কেউ দাঁড়িয়ে আছে কি নেই।

তবে এইভাবে আনাড়ি সাঁতার দিতে দিতে সে একটা কুটো পেয়ে যায়। কুটো নয়, কেরোসিন কাঠের টুকরো, কেরোসিন কাঠের টুকরো নয়, ভাঙা নৌকো, আগে থাকতে জেনে শুনেও সে সেই ভাঙা নৌকোয়ই চড়ে, সেটি একটি বোবা মেয়ে যার বুদ্ধি আছে এবং টাকাও কিছু আছে।

এইবারে সে সাবধানে, খুব যত্নে কিছু বিকিকিনি শুরু করে। সস্তায় কেনে, একটু বেশি দামে বেচে। ঘুরে ঘুরে প্রাণপাত করে, কোথায় কোন জিনিস একটু সস্তায় মেলে, কোথায় কোন জিনিসের অগাধ চাহিদা, খোঁজখবর করে সেই খোঁজখবরকে কাজে লাগায়। এদিকে জামাইবাবুর কাছ থেকে দিদি ও তার মেয়ের জন্যে একটা চলনসই খোরপোশ মেলে, বাবা শয্যায় মারা গিয়ে তাকে মুক্তি দেন, ছোটো ভাই এক ইয়ুথ কয়্যার-এ ভিড়ে গিয়ে এখানে ওখানে কল শোতে মেতে থাকে এবং খুব একটা রোজগারপাতি না হলেও ভারি খুশি মেজাজে থাকে। সে বাড়িটা সারায়, বাড়ির পাঁচিল তোলে, স্নো-সেমের রং লাগায় বাড়িতে, তার পরে বিয়ের পাঁচ বছর পরে হনিমুনে যায়। বেশি দূরে কোথাও নয়। দিঘায়।

সমুদ্র দেখবি তা গোয়ায় যা। সুন্দরী সুন্দরী সি বিচ। মিরামার, কলাংগুটে, কোলবা সব একেক জন একেক রকম সেজে বসে আছে। ঘুরে আয় মুম্বই, সমুদ্রটা তেমন কিছু না হলেও, লঞ্চে চেপে এলিফ্যান্টাটা সেরে আসা যায়। কিংবা চলে যা কন্যাকুমারিকায়। তিন দিক থেকে কেমন তিন রঙের সমুদ্র মিশেছে দেখতে পাবি, দেখতে পাবি ওই সিন্ধুর টিপ বিবেকানন্দ দ্বীপ, দেখবি কুমারী দেবী কেমন অনন্ত প্রতীক্ষায় থমকে রয়েছেন। যেতে পারা যায় চেন্নাইয়ের দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভে, পন্ডিচেরির সবুজ সমুদ্রে। শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমটাও দেখা হয়ে যাবে। আচ্ছা অতদূর না-ই হল, গোপালপুর? চাঁদিপুর নিদেনপক্ষে পুরী? পুরীতে তো তামাম বাঙালিস্তানের লোক হনিমুন করতে যাচ্ছে। তা না দিঘা!

তা তা-ই সই। পুকুরের মতো নিথর টাইপের সেই সমুদ্দুরে লম্বা ফেনার গুড়িমারা বেঁটে ব্রেকার দেখেই তার বোবা স্ত্রী আনন্দে নাচতে থাকে। তার চোখ ভরে যায়। মন ভরে যায়। গলার কাছে একটা ব্যথা ডেলা পাকায়। আহা, বাবা দেখতে পেল না, মা-টা গোলাপি ব্লাউজ তুলতে গিয়ে খামোখা মারা গেল! আহা দিদিটা? দিদিটার মধুযামিনীর সুখ হল না জীবনে। দিদির মেয়েটার হবে তো? হবে হবে নিশ্চয়ই হবে। সে তো চেষ্টা করছে প্রাণপণে। বোবা বউ তার বড়ো লক্ষ্মী! এই শান্ত দিঘায় মধুযামিনীকেই সে আনজুনার জৌলুসের জোয়ার দেবে।

গা ভরতি শান্তি মেখে সে ফিরে আসে। দিদি দরজা খুলে দেয়, ভাই হাত থেকে সুটকেস নেয়, হাঁড়ি ভরতি মিষ্টি সে দিদির মেয়ের পিতৃহীন হাতদুটিতে তুলে দিতে পেরে বড্ড আরাম অনুভব করে। দিদি বলে, তোর সঙ্গে এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন। আর এক দিনও ঘুরে গেছেন। বোধহয় খুব দরকার…।

তার তথাকথিত বৈঠকখানায় ঢোকে সে। বাবার পুরোনো তক্তপোশের পাশে তার নতুন কেনা সোফায় বসে আছে—সেই লোকটা। এতদিনে সে লক্ষ করে লোকটা ঠিক কালো নয়, কেমন কালিময়, ঠিক মোটা নয় কেমন ফোলা ফোলা, জুলফি বেয়ে কাঁচা কলপ ঘামে গলে নেমে এসেছে। সিনথেটিকের জামায় আটকে পড়া ঘামের দুর্গন্ধে সমস্ত ঘরটা নাক কুঁচকে ছোটো হয়ে আছে, তব সে টের পাচ্ছে না। লোকটা বলল, আমি বুঝলেন, আয়কর অফিসে আছি। আপনার যা কাগজপত্র দেখলুম ওরা ইচ্ছে করলেই কেসে ফাঁসাতে পারে। না, না তেমন কিছু না। আমি তো রয়েছি। বিজনেস ব্যাপারটা আসলে…না না সেসব কিছু নয়… বলতে বলতে তার বাঁ পকেটের পাশ থেকে লোকটা ছোট্ট করে হাত বাড়াল।

এখন সে কী করবে? কী করতে পারে সে? খুব বেশি ভাববার সময় নেই। প্রচণ্ড রাগের মধ্যেও দ্রুত চিন্তা করতে হচ্ছে। তিনটে বিকল্প আছে মোট। এক লোকটাকে খুন করা। সে ক্ষেত্রে তার ফ্যামিলি ভেসে যাবে, দুই নিজেকে খুন করা, সে ক্ষেত্রেও তার ফ্যামিলি ভেসে যাবে। সে অতএব তৃতীয় বিকল্পটা নিল।

হেঁটে হেঁটে হেঁটে হেঁটে সে
লোকটার ভেতর
ঢুকে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress