আমরা কথা বলি (গভীর রাতের ট্রাঙ্ককল)
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।
আমরা বলি
শাক সবজির মতো সরল সাদামাঠা কথাবার্তা।
যে-সব রাজবাড়ি ভেঙে পড়ছে
তার ইটগুলো কারা কিনবে,
পুরনো বন্ধুরা মারা যাওয়ার আগে
কে স্বপ্ন দেখেছিল কেমন,
কাঁকড়া বিছে এবং মাকড়শার মধ্যে
কে বেশি বিষাক্ত,
পৃথিবীর সমস্ত বসন্তকালকেই
শীত ঠেলে ঠেলে আসতে হয় কেন
এইরকম সব পাতলা ঝিরঝিরে
ঝাউপাতার মতো কথাবার্তা।
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।
যে কবিতা ভালোবাসে
সে মনের মেঘ-বৃষ্টি নিয়ে কথা বলে।
যে হাসপাতাল ভালোবাসে
সে মৃত্যুর দক্ষিণ দিকের জানলা নিয়ে কথা বলে।
যে ্লেক-লুডো ভালোবাসে
সে নানারকম সন্ত্রাসের কথা।
কথার মধ্যে জেগে ওঠে আমাদের হারানো ছেলেবেলা
গোল আয়নার মতো ঝকঝকে যার চিবুক,
আর সেইসব পুরনো ঘন্টার ধ্বনি
যার শব্দে নুয়ে পড়ে মহানিমের ডাল,
আর সেইসব ময়লা ফটোগ্রাফের মতো ভালোবাসা
যার গল্প শুনতে
এখনো সমুদ্রের জল ছুটে আসে তটরেখায়।
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।
কথার মধ্যে
রঙিন মলাটে ঝলসে ওঠে
আমাদের সমস্ত না ছাপা বই
কথার মধ্যে
আমরা রিপু করে নিই
গত বছরের জামা পাজামার ফাটল।
কথার মধ্যে
ভুলে যাই আমাদের ছেড়া জুতোর পেরেক
শোবার ঘরের ভাঙা বালব।
আর কথার মধ্যেই
পৌছে যাই এমন সব জঙ্গলে
গত রাত্রেও নরবলি হয়েছে যেখানে।
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।
একটা চিয়ারে তিনজন
এক চিলতে ঘরে একশো হয়ে যাই আমরা
কথা বলতে বলতে।
তখন আমাদের তোবড়ানো গালের খোঁদলগুলো
ভরে যায় জলোচ্ছ্বাসে, জ্যোৎস্নায়।
নক্ষত্র ফোটাতে ফোটাতে মরচে-পড়া আকাশ
এক গাল হাসি নিয়ে
নেমে আসে জানলার কাছে।
তখন আমাদের মাথা উসকো খুসকো চুলগুলো
এমন সব শিকড়
জল হাওয়া পেলে এখুনি হয়ে উঠবে
হিজলের ঝাঁকড়া বন।
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।
আমরা কথা বলছি
আর গর্ভকেশরগুরো ফেটে পড়ছে বনে বনে
হাওয়ার ভিতরে পাখির মতো ওড়াউড়ি করছে
নতুন নতুন বীজকোষ।
আমরা কথা বলছি
আর ঘা পড়ছে সমস্ত ভেজানো সিংদরোজায়
সাত শতাব্দীর অন্ধকার ঝিনুকের ডালা
একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে
ইস্পাতের চাড়ে।
আমরা কথা বলছি
খুবই আসে-, ধীরে, মোমবাতির মতো জ্বলে,
গাছপাতার মতো সংযমে।
অথচ পাহাড় থেকে পাহাড়ে
আকাশের এপার ওপার ছুয়ে,
আদিম কোনো দৈববানীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে তারা,
মর্মানি-ক আর প্রতিধ্বনিময়।
আমরা কথা বলি
ভিতরে ঢুকে পড়ে কার যেন ঠাণ্ডা হাত।