Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঘড়ি || Sunil Gangopadhyay

ঘড়ি || Sunil Gangopadhyay

আমার হাত ঘড়িটা কে চুরি করেছে, আমি জানি না। বেশি রাত্তিরে বাড়ি ফিরছিলাম চোখে একটু ঘোর ছিল, দোতলা বাসে জানালার পাশে বসতে পাওয়া তো বিরাট সৌভাগ্য, সেইসঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া—ঘুম আসবে, তাতে আশ্চর্য কী! তা ছাড়া, বাসে ঘড়ি পরে ঘুমানো তো অন্যায় নয়।

ঘুম ভাঙল যখন অন্ধকার, বাস ডিপোতে এসেছে। খারাপ লাগল না, একটা সিগারেট ধরালাম। বাসে বসে সিগারেট টানাও তো বেশ মজার। সময় দেখতে গিয়ে টের পেলাম আমার কবজিতে কোনও বন্ধন নেই। ঘড়িটা কেউ খুলে নিয়ে গ্যাছে।

নেমে এলাম, কিছু কিছু কন্ডাকটর, ডিপোর ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড বিভাগের লোক কিছু ছিল, বেশ চেঁচামেচি করলাম, পৃথিবীর সবাইকে চোর বললাম। একজন বলল, আমার হাতে কোনও ঘড়িই ছিল না, ওটা আমার ভুল ধারণা। কিন্তু আমার লোমশ হাতে ঘড়ি পরার ফলে একটা দাগ হয়ে আছে, সেই হাত ওদের মুখের সামনে তুলে ধরলাম।—আপনার ঘড়ির নাম কী?

—ঘড়ির আবার নাম থাকে নাকি?

—থাকে না? কোন কোম্পানির ঘড়ি?

আশ্চর্য, কোনও ঘড়ির কোম্পানির নাম সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়ল না। নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নামও আমার মনে আছে, কিন্তু ঘড়ির নাম মনে নেই। নতমুখে চলে এলাম।

ঘড়িটা হারিয়ে আমি খুশিই হয়েছিলাম বলা যায়। আমি একধরনের সময়ের বিড়ম্বনা থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছি। শরীর মন সবই এখন হালকা। তবে রাস্তাঘাটে অন্য কারুর হাতে ঘড়ি দেখলেই আমি আড়চোখে তাকাই। এদের যে কেউ একজন আমার হাতঘড়িটা পরেছে হয়তো। হয়তো সবাই চোর নয়, কিন্তু চোরাই জিনিস, সেকেন্ড হ্যান্ড কিনতে তো কারুর আটকায় না। আমি মনে-মনে বলি, বুঝবে মজা, আমার ঘড়ি হাতে দেওয়ার ফলে সময় তোমাকে চরকি বাজিতে ঘোরাবে!

তারপর, একদিন, একটা রেস্তোরাঁয় ঘণ্টাখানেক বসার পর বাথরুমে গেছি, ঢুকেই দেখি মাটিতে একটা ঘড়ি পড়ে আছে। কী সাংঘাতিক সেটা, সবুজ ডায়াল, লেখাগুলো জ্বলজ্বল করছে, ব্যান্ডটা মনে হয় সোনার। একটা দুর্লভ মূল্যবান টোপ। ঘড়িটা যেন সাপের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের মধ্যে টিপটিপ করছে আমার, বন্ধু বাথরুমের মধ্যে আমাকে কেউ দেখবে না, কোনও সাক্ষী নেই। কিন্তু ওইটুকু ছোট্ট বন্ধ ঘরে নিজেকে বিষম দেখা যায়, আমি দারুণ ভয় পেয়ে গেলাম, পেচ্ছাপ না করেই দৌড়ে পালিয়ে এলাম! সঙ্গিনী জিগ্যেস করল, কী হয়েছে কী?

-বুক কাঁপছে?

-কেন?

বুকের দোষ।

বেয়ারাকে বিল আনতে বলেছি, ট্রেতে করে সে নিয়ে এল সেই ঘড়ি। জিগ্যেস করল, সাব, ইয়ে আপকা হ্যায়? বাথরুমমে—

সবুজ সাপের মতন সেই ঘড়িটা দেখছে আমাকে। এখানে অনেক মানুষ আমাকে দেখছে। আমি নিজেকে নিজে দেখতে পাচ্ছি না। গম্ভীরভাবে বললাম হ্যাঁ, এটা আমার। সঙ্গে-সঙ্গে সেটা তুলে নিয়ে বেয়ারাকে প্রচুর বকশিশ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেখান থেকে। সঙ্গিনী কুদ্ধভাবে জিগ্যেস করল, এর মানে কী, আমি আগে জানতে চাই। যা তোমার নয়—

—হ্যাঁ, এটা আমারই।

—তোমার হাতে ঘড়ি ছিল না।

—এই ঘড়িটা আমার নয়! কিন্তু এ আমার জন্য দুঃসময় নিয়ে এসেছে। সেই দুঃসময়কে আমি…ঘড়িটা আমি অত্যন্ত জোরে ফুটপাতে আছড়ে ফেললাম। টুকরো-টুকরো হয়ে সেটা ছিটকে ছড়িয়ে গেল। এখন থেকে সময় আমার কাছে স্থিরমুহূর্ত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *