Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বুদ্ধদেবের চিঠি || Shamsur Rahaman

বুদ্ধদেবের চিঠি || Shamsur Rahaman

দুপুর ঝুঁকে পড়ছে বিকেলের দিকে, ফেরিঅলা
হাওয়ায় আমন্ত্রণী ডাক মিশিয়ে
দাঁড়ায় মধ্যবিত্ত দরজার কাছে আর উড়নচণ্ডী এক কিশোর
লগি হাতে ছোটে কাটা ঘুড়ির পেছনে পেছনে,
কলতলায় আস্তে সুস্থে বাড়ে জটলা। ভাঙা দেয়ালে
রাঙা এক পাখি হিন্দি ফিল্মের নায়কের মতো শিস দ্যায়।
ড্রেনের ধারে কান্তিমান কুকুর
সোহাগ কুড়ায় সঙ্গিনীর।
ঢাকা, হে শহর আমার, তখন সেই মুহূর্তে,
অনেক বছর আগে একজন সদ্য যুবক
কায়েৎটুলীর রৌদ্রছায়ার আস্তানাময় গলির এক দোতলা বাড়িতে
প্রথম দেখলো তোমার পুরানো নন্দিত প্রেমিককে।
তাঁর সত্তায় তুমি ঝরিয়ে দিচ্ছিলে তোমার আলোর আদর,
তাঁর চোখে-মুখে তোমার নিঃশ্বাস আর তিনি
কেন স্বপ্ন-বিহবল সৃষ্টিতে
তাকাচ্ছিলেন আশপাশে, কী যেন খুঁজছেন। বহুকাল উজিয়ে
তিনি এসেছেন দেখতে তুমি কেমন আছো। বারবার
তাঁর চোখ একটা রুপালি জাল ছুঁড়ে দিচ্ছিলো
বাইরে, হয়তো তোমার অতীতের
কিছু শালিক কি চড়ুই ধরার জন্যে।

এবং সেই সদ্য যুবক দেখছিল তাঁকে, যেমন কোনো
পরাক্রান্ত বিদ্রোহের প্রতি তাকায় ভক্ত।
যুবক জানতো, কাব্যবলায় তিনি চূড়াস্পর্শী পারদর্শী আর
গদ্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। খ্যাতি ধীমান সেই পুরুষের
পায়ে পায়ে ঘোরে শীয়ামিজ বেড়ালের মতো । পেশাদার সমালোচক,
উঠতি কবি, তুখোড় বুদ্ধিজীবী, লাস্যময়ী মহিলা,
সবাই বেজায় ভন্‌ ভন্‌ করছিলেন তাঁকে ঘিরে; তিনি
সেই মৌচাকের কেন্দ্রবিন্দু হয়েও যেন সেখানে ছিলেন গরহাজির।

তিনি সেই সদ্য যুবার দিকে তাকালেন একবার, এরকম দৃষ্টিতে
স্নেহপরায়ণ পিতাই তাকান তাঁর সন্তানের দিকে,
আর এ-ও এক বিস্ময়, বহুজনের মধ্য থেকে সদ্য যুবকেই
নির্বাচিত করলেন
একটি দায়িত্ব পালনের জন্যে। ধবধবে কবুতরের মতো
একটা খাম ওর হাতে দিয়ে
বললেন, ‘এটা পৌঁছে দিও’। তারপর ধরালেন
সিগারেট; ছন্দমিল, মনে হলো এক ঝাঁক
আগুনে রঙের ফড়িং আর প্রজাপতি হ’য়ে তাঁর
চারপাশে ওড়াউড়ি করছিল।

সভা যখন ভাঙলো,ফিকে রক্তজবার মতো রঙ
যখন পশ্চিম আকাশে,
তখন সেই সদ্য যুবক কায়ৎটুলীর গলি ছেড়ে
পা বাড়ালো বড় রাস্তায়। এই চিঠি তাকে
পৌঁছে দিতে হবে আজই। ঠিকানা খুঁজে খুঁজে
সে হয়রান-পেরেশান হলো,
কিন্তু শেষ অব্দি কিছুতেই শনাক্ত করতে পারলো না বাড়িটাকে।

একটা বাড়ি মাস্তানের মতো চুল ঝাঁকিয়ে
মস্করা করলো তার সঙ্গে,
অন্য এক বাড়ি বৃদ্ধের মতো মাথা নেড়ে নেড়ে
বলেন, ‘এতকাল আছেই এখানে, কই এই ঠিকানার
কথা তো শুনিনি কখনো!’
অট্রহাসি হেসে আমার উৎসাহকে ঝরাপাতার মতো
উড়িয়ে দিলো অহংকারী এক বাড়ি।
কাল অবশ্যই বিলি করবো এই চিঠি, নিজেকে আশ্বস্ত ক’রে
সেদিনের মতো সে ফিরে গেল নিজের ডেরায়।

পরদিন ভোরবেলা সে গেরো অভীষ্ট ঠিকানার
খোঁজে। কী অবাক কাণ্ড, সেখানে
কোনো বাড়ির চিহ্নমাত্র নেই, শুধু প্রকাণ্ড এক মাঠ
ধু-ধু করছে। মাঠে সে প্রেতাত্মার ধরনে ঘুরলো অনেকক্ষণ,
ঠিকানা ভালো ক’রে পড়ার জন্যে আবার সে চোখ বুলালো
খামের ওপর। খাম সেই মাঠের মতোই ফাঁকা,
ওতে কালি একটি আঁচড়ও নেই। তারপর
বছরের পর বছর
এক ঠিকানাবিহীন ঠিকানায়
চিঠি বিলি করা’র উদ্দেশে ক্রমাগত তার আসা-যাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *