Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সবজান্তা দাদা || Sobjanta Dada by Sukumar Ray

সবজান্তা দাদা || Sobjanta Dada by Sukumar Ray

“এই দ্যাখ্‌‌ টেঁপি, দ্যাখ্‌‌ কি রকম করে হাউই ছাড়তে হয়। বড় যে রাজুমামাকে ডাকতে চাচ্ছিলি? কেন, রাজুমামা না হলে বুঝি হাউই ছোটানো যায় না? এই দ্যাখ্‌‌।”
দাদার বয়স প্রায় বছর দশেক হবে, টেঁপির বয়স মোটে আট, অন্য অন্য ভাইবোনেরা আরো ছোট। সুতরাং দাদার দাদাগিরির অন্ত নেই। দাদাকে হাউই ছাড়তে দেখে টেঁপির বেশ একটু ভয় হয়েছিল, পাছে দাদা হাউইয়ের তেজে উড়ে যায়, কি পুড়ে যায়, কিম্বা সাংঘাতিক একটা কিছু ঘটে যায়। কিন্তু দাদার ভরসা দেখে তারও একটু ভরসা হল।
দাদা হাউইটিকে হাতে নিয়ে, একটুখানি বাঁকিয়ে ধরে বিজ্ঞের মতো বলতে লাগল, “এই সল্‌‌তের মতো দেখছিস্‌‌ এইখানে আগুন ধরাতে হয়। সল্‌‌তেটা জ্বলতে জ্বলতে যেই হাউই ভস্‌‌ করে ওঠে অমনি ঠিক সময়টি বুঝে— এই এম্নি করে হাউইটিকে ছেড়ে দিতে হয়। এইখানেই হচ্ছে আসল বাহাদুরি। কাল দেখলি তো, প্রকাশটা কি রকম আনাড়ীর মতো করেছিল। হাউই জ্বলতে না জ্বলতে ফস করে ছেড়ে দিচ্ছিল। সেইজন্য‌‌ই হাউইগুলো আকাশের দিকে না উঠে নিচু হতে এদিক ওদিক বেঁকে যাচ্ছিল।”
ফ্যাঁস—ফোঁস্‌‌—ছররর! এত শিগ্‌‌গির হাউইয়ে আগুন ধরে যায় সেটা দাদার খেয়ালেই ছিল না, দাদা তখনো ঘাড় বাঁকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে নিজের বাহাদুরির কথা ভাবছেন। কিন্তু হাসিটি না ফুরাতেই হাউই যখন ফ্যাঁস্‌‌ করে উঠল তখন সেই সঙ্গে দাদার মুখ থেকেও হাঁউ-মাউ গোছের একটা বিকট শব্দ আপনা থেকেই বেরিয়ে এল। আর তার পরেই দাদা যে একটা লম্ফ দিলেন, তার ফলে দেখা গেল মাঝখানে চিৎ‌পাত হয়ে অত্যন্ত আনাড়ীর মতো তিনি হাত পা ছুঁড়ছেন। কিন্তু তা দেখবার অবসর টেঁপিদের হয়নি। কারণ দাদার চিৎ‌কার আর লম্ফভঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গে তারাও কান্নার সুর চড়িয়ে বাড়ির ভিতরদিকে রওনা হয়েছিল।
কান্না-টান্না থামলে পর রাজুমামা যখন দাদার কান ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে এলেন, তখন দেখা গেল যে, দাদার হাতের কাছে ফোস্‌‌কা পড়ে গেছে আর গায়ের দু-তিন জায়গায় পোড়ার দাগ লেগেছে। কিন্তু তার জন্য দাদার দুঃখ নেই, তার আসল দুঃখ এই যে টেঁপির কাছে তার বিদ্যেটা এমন ভাবে ফাঁস হয়ে গেল। রাজুমামা চলে যেতেই সে হাতে মলম মাখতে মাখতে বলতে লাগল, কোথাকার কোন দোকান থেকে হাউই কিনে এনেছে— ভালো কতে মশলা মেশাতেও জানে না। বিষ্টু পাঠকের দোকান থেকে হাউই আনলেই হত। বার বার বলেছি— রাজু মামা হাউই চেনে না, তবু তাকেই দেবে হাউই কিনতে।
তারপর সে টেঁপিকে আর ভোলা, ময়না আর খুক্‌‌নুকে বেশ করে বুঝিয়ে দিল যে, সে যে চেঁচিয়েছিল আর লাফ দিয়েছিল, সেটা ভয়ে নয়, হঠাৎ‌ ফুর্তির চোটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *