পথিক ওগো পথিক , যাবে তুমি ,
এখন এ যে গভীর ঘোর নিশা ।
নদীর পারে তমালবনভূমি
গহন ঘন অন্ধকারে মিশা ।
মোদের ঘরে হয়েছে দীপ জ্বালা ,
বাঁশির ধ্বনি হৃদয়ে এসে লাগে ,
নবীন আছে এখনো ফুলমালা ,
তরুণ আঁখি এখনো দেখো জাগে ।
বিদায়বেলা এখনি কি গো হবে ,
পথিক ওগো পথিক , যাবে তবে ?
তোমারে মোরা বাঁধি নি কোনো ডোরে ,
রুধিয়া মোরা রাখি নে তব পথ ।
তোমার ঘোড়া রয়েছে সাজ পরে ,
বাহিরে দেখো দাঁড়ায়ে তব রথ ।
বিদায়পথে দিয়েছি বটে বাধা
কেবল শুধু করুণ কলগীতে ।
চেয়েছি বটে রাখিতে হেথা বাঁধা
কেবল শুধু চোখের চাহনিতে ।
পথিক ওগো , মোদের নাহি বল ,
রয়েছে শুধু আকুল আঁখিজল ।
নয়নে তব কিসের এই গ্লানি ,
রক্তে তব কিসের তরলতা ।
আঁধার হতে এসেছে নাহি জানি
তোমার প্রাণে কাহার কী বারতা ।
সপ্তঋষি গগনসীমা হতে
কখন কী যে মন্ত্র দিল পড়ি—
তিমির – রাতি শব্দহীন স্রোতে
হৃদয়ে তব আসিল অবতরি ।
বচনহারা অচেনা অদ্ভুত
তোমার কাছে পাঠালো কোন্ দূত ।
এ মেলা যদি না লাগে তব ভালো ,
শান্তি যদি না মানে তব প্রাণ ,
সভার তবে নিবায়ে দিব আলো ,
বাঁশির তবে থামায়ে দিব তান ।
স্তব্ধ মোরা আঁধারে রব বসি ,
ঝিল্লিরব উঠিবে জেগে বনে ,
কৃষ্ণরাতে প্রাচীন ক্ষীণ শশী
চক্ষে তব চাহিবে বাতায়নে ।
পথপাগল পথিক , রাখো কথা ,
নিশীথে তব কেন এ অধীরতা ।