Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নগরসংগীত || Nagarsangeet by Rabindranath Tagore

নগরসংগীত || Nagarsangeet by Rabindranath Tagore

কোথা গেল সেই মহান শান্ত
নব নির্মল শ্যামলকান্ত
উজ্জ্বলনীলবসনপ্রান্ত
সুন্দর শুভ ধরণী ।
আকাশ আলোকপুলকপুঞ্জ ,
ছায়াসুশীতল নিভৃত কুঞ্জ ,
কোথা সে গভীর ভ্রমরগুঞ্জ ,
কোথা নিয়ে এল তরণী ।
ওই রে নগরী — জনতারণ্য ,
শত রাজপথ , গৃহ অগণ্য ,
কতই বিপণি , কতই পণ্য
কত কোলাহলকাকলি ।
কত-না অর্থ কত অনর্থ
আবিল করিছে স্বর্গমর্ত ,
তপনতপ্ত ধূলি-আবর্ত
উঠিছে শূন্য আকুলি ।
সকলি ক্ষণিক , খণ্ড , ছিন্ন —
পশ্চাতে কিছু রাখে না চিহ্ন ,
পলকে মিলিছে পলকে ভিন্ন
ছুটিছে মৃত্যু-পাথারে ।
করুণ রোদন কঠিন হাস্য ,
প্রভূত দম্ভ বিনীত দাস্য ,
ব্যাকুল প্রয়াস , নিষ্ঠুর ভাষ্য ,
চলিছে কাতারে কাতারে ।
স্থির নহে কিছু নিমেষমাত্র ,
চাহে নাকো কিছু প্রবাসযাত্র ,
বিরামবিহীন দিবসরাত্র
চলিছে আঁধারে আলোকে ।
কোন্‌ মায়ামৃগ কোথায় নিত্য
স্বর্ণঝলকে করিছে নৃত্য
তাহারে বাঁধিতে লোলুপচিত্ত
ছুটিছে বৃদ্ধবালকে ।
এ যেন বিপুল যজ্ঞকুণ্ড ,
আকাশে আলোড়ি শিখার শুণ্ড
হোমের অগ্নি মেলিছে তুণ্ড
ক্ষুধার দহন জ্বালিয়া ।
নরনারী সবে আনিয়া তূর্ণ
প্রাণের পাত্র করিয়া চূর্ণ
বহ্নির মুখে দিতেছে পূর্ণ
জীবন-আহুতি ঢালিয়া ।
চারি দিকে ঘিরি যতেক ভক্ত
স্বর্ণবরনমরণাসক্ত
দিতেছে অস্থি , দিতেছে রক্ত ,
সকল শক্তিসাধনা ।
জ্বলি উঠে শিখা ভীষণ মন্দ্রে ,
ধূমায়ে শূন্য রন্ধ্রে রন্ধ্রে
লুপ্ত করিছে সূর্যচন্দ্রে
বিশ্বব্যাপিনী দাহনা ।
বায়ুদলবল হইয়া ক্ষিপ্ত
ঘিরি ঘিরি সেই অনল দীপ্ত
কাঁদিয়া ফিরিছে অপরিতৃপ্ত ,
ফুঁসিয়া উষ্ণ শ্বসনে ।
যেন প্রসারিয়া কাতর পক্ষ
কেঁদে উড়ে আসে লক্ষ লক্ষ
পক্ষীজননী , করিয়া লক্ষ্য
খাণ্ডব-হুত-অশনে ।
বিপ্র ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র
মিলিয়া সকলে মহৎ ক্ষুদ্র
খুলেছে জীবনযজ্ঞ রুদ্র
আবালবৃদ্ধরমণী ।
হেরি এ বিপুল দহনরঙ্গ
আকুল হৃদয় যেন পতঙ্গ
ঢালিবারে চাহে আপন অঙ্গ ,
কাটিবারে চাহে ধমনী ।
হে নগরী , তব ফেনিল মদ্য
উছসি উছলি পড়িছে সদ্য ,
আমি তাহা পান করিব অদ্য ,
বিস্মৃত হব আপনা ।
অয়ি মানবের পাষাণী ধাত্রী ,
আমি হব তব মেলার যাত্রী
সুপ্তিবিহীন মত্ত রাত্রি
জাগরণে করি যাপনা ।
ঘূর্ণচক্র জনতাসংঘ ,
বন্ধনহীন মহা- আসঙ্গ ,
তারি মাঝে আমি করিব ভঙ্গ
আপন গোপন স্বপনে ।
ক্ষুদ্র শান্তি করিব তুচ্ছ ,
পড়িব নিম্নে , চড়িব উচ্চ ,
ধরিব ধূম্রকেতুর পুচ্ছ ,
বাহু বাড়াইব তপনে ।
নব নব খেলা খেলে অদৃষ্ট
কখনো ইষ্ট কভু অনিষ্ট ,
কখনো তিক্ত কখনো মিষ্ট ,
যখন যা দেয় তুলিয়া —
সুখের দুখের চক্রমধ্যে
কখনো উঠিব উধাও পদ্যে ,
কখনো লুটিব গভীর গদ্যে ,
নাগরদোলায় দুলিয়া ।
হাতে তুলি লব বিজয়বাদ্য
আমি অশান্ত , আমি অবাধ্য
যাহা-কিছু আছে অতি অসাধ্য
তাহারে ধরিব সবলে ।
আমি নির্মম আমি নৃশংস
সবেতে বসাব নিজের অংশ ,
পরমুখ হতে করিয়া ভ্রংশ
তুলিব আপন কবলে ।
মনেতে জানিব সকল পৃথ্বী
আমারি চরণ-আসনভিত্তি ,
রাজার রাজ্য দস্যুবৃত্তি
কোনো ভেদ নাহি উভয়ে ।
ধনসম্পদ করিব নস্য ,
লুণ্ঠন করি আনিব শস্য ,
অশ্বমেধের মুক্ত অশ্ব
ছুটাব বিশ্বে অভয়ে ।
নব নব ক্ষুধা , নূতন তৃষ্ণা ,
নিত্যনূতন কর্মনিষ্ঠা ,
জীবনগ্রন্থে নূতন পৃষ্ঠা
উলটিয়া যাব ত্বরিতে ।
জটিল কুটিল চলেছে পন্থ
নাহি তার আদি নাহিকো অন্ত ,
উদ্দামবেগে ধাই তুরন্ত
সিন্ধু-শৈল-সরিতে ।
শুধু সম্মুখে চলেছি লক্ষি
আমি নীড়হারা নিশার পক্ষী ,
তুমিও ছুটিছ চপলা লক্ষ্মী ,
আলেয়া-হাস্যে ধাঁধিয়া ।
পূজা দিয়া পদে করি না ভিক্ষা ,
বসিয়া করি না তব প্রতীক্ষা ,
কে কারে জিনিবে হবে পরীক্ষা —
আনিব তোমারে বাঁধিয়া ।
মানবজন্ম নহে তো নিত্য ,
ধনজনমান খ্যাতি ও বিত্ত
নহে তারা কারো অধীন ভৃত্য —
কাল-নদী ধায় অধীরা ।
তবে দাও ঢালি — কেবলমাত্র
দু-চারি দিবস , দু-চারি রাত্র ,
পূর্ণ করিয়া জীবনপাত্র
জনসংঘাতমদিরা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress