পৈড়ান…. সীমান্ত বাংলার হারিয়ে যাওয়া কৃষিভিত্তিক লোক উৎসব
আমাদের সীমান্ত বাংলা সুবর্ণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলের প্রায় অবলুপ্ত লোকও উৎসব হলো পৈড়ান।পৈড়ান কথার অর্থ বেণী বা বিনুনি।এই বেণী তৈরি করা হয় পাট ,বাঁশের কনচি,কাশ জাতীয় এক প্রকার ঘাসের সাহায্যে।কালীপুজার পরদিন সাড়ম্বরে পালিত হয় এই লোক উৎসবের।
জঙ্গলমহলে সুবর্ণ রৈখিক অববাহিকার একটি প্রাচীন লো উৎসব হল এই পৈড়ান গাড়া।
বাড়ির সামনে সকালে একটি গভীর গর্ত খুঁড়ে ওই পৈড়ান বা বেণীটিকে শক্তপোক্তভাবে পোতা বা গাড়া হত।গর্তকে ভালোভাবে বোজানো হতো।পোতার আগে পৈড়ানকে পিটুলি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
বিকেলে গ্রামের যুবকেরা ও ক্ষেতমজুররা শাল বল্লি বা শক্ত বাশের সাহায্যে ওই পাটের বিনুনিকে মাটির তলা থেকে তুলতেন ।এই সময় কাড়া নাকাড়া মাদল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হতো আর কান ফাটানো কুয়াকুলি বা উলুধ্বনি করা হতো।
যারা পৈড়ান তুলতেন তাদের জন্য পুরস্কার থাকতো।সাধারণত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য হতো এই পুরস্কার!পইড়ান তোলার সময় বেনী ছিড়ে গেলে যিনি বেণী পুতেছেন তাকে জরিমানা হিসাবে পৈড়ান তোলার দলকে খাওয়াতে হতো।
আধুনিকতার আবিল ছোঁয়ায় এই কৃষি সংস্কৃতিক আন্তরিক লোক উৎসব গুলি প্রায় অবলুপ্তির দোর গড়ায়!সুবর্ণরেখার অববাহিকায় জুন শোলা পাইক আম্বি নয়াগ্রামের উপর পাতিনা ইত্যাদি গ্রামে কিছু উৎসাহী যুবকের উদ্যোগে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ক্ষেত্র সমীক্ষায় জানলাম আগে এই অঞ্চলের প্রায় সব সম্পন্ন কৃষক পরিবারে এই পৈড়ান গাড়া উৎসব হতো।অনেক পরিবারের পুরস্কার হিসেবে খাসি বাধা থাকতো ঘরের সামনে!
জুন শোলা গ্রামেরএই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বজিৎ পাল সুব্রত পাল সুদীপ্ত দে সুমন পাল সঞ্জয় দন্ডপাঠ অমর পাল এর মতো কিছু উৎসাহী যুবকের উদ্যোগে।কিছু কিছু লোক গবেষকদের মতে পৈড়ান বলিদৈত্য রাজ পূজার অঙ্গ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই কৃষি সংস্কৃতি সঙ্গে জড়িত লোক উৎসব গুলি হারিয়ে যেতে বসেছে!এগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে!
তথ্য ঋণ…..বিশ্বজিৎ পাল
সুদীপ কুমার খাড়া
ক্ষেত্রসমীক্ষা
লোক ভাষ