এটা হলো বোয়াল মাছের দেশ।
কালি বোয়াল, ধলি বোয়াল, সোনা বোয়াল ও সাদা বোয়ালের অব্যাহত বিচরণভূমি।
খাল-বিল, ডোবা-নালা ও হাওড়ে একচ্ছত্র বোয়ালেরই রাজত্ব।
আমরা বোয়ালরা আমাদের চেয়ে নরম চোয়ালের
মাছেদের আইনসঙ্গতভাবে খেয়ে বাঁচি।
আমাদের চেয়ে একটু গায়ে গতরে ছোট মাছদের
মোটামুটি গিলে ফেলি।
আমরা যাদের গিলি, তারা আবার তাদের চেয়ে নরম চোয়ালের
কৈ, মাগুর, ভেটকি, খৈলশা কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না।
এ হলো নদীগুলোর আদি গিলে খাওয়ার নিয়ম।
পদ্মা, যমুনা, মেঘনার শিরা-উপশিরার পানি
যতই মিষ্টি হোক গিলে খাওয়ার নিয়ম চলছেই।
আমরা ঐ আদি বাঙালীর মহারাজাধিরাজ
গোপালের আগের একশ’ বছরের কাহিনী থেকে এসব পেয়েছি।
গোপাল থেকে মহীপাল পর্যন্ত মানুষের রাজত্ব।
তারপরে আবার বোয়াল।
আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান আছে। আমরা একে বলি বোয়ালসংহিতা।
অপেক্ষাকৃত ছোটদের নির্দ্বিধায় খেয়ে বাঁচো।
আমাদের সংহিতা বলে, শকুন্তলার আংটিচোর
বাইচ্যান্স ধরা পড়ে গেলে তার নির্ঘাত দণ্ড হলো ছয় মাস।
ঘানি টানতে হবে–তার নাম হবে তস্কর।
আর যদি কোন রাঘব বোয়াল এসে পুরো বাংলাদেশটাকেই
আংটির মত গিলে ফেলে তবে তাকে বলতে হবে—
মহারাজাধিরাজ। সেলাম কর তাকে—এরই নাম বোয়ালসংহিতা।
তবে রাঘব বোয়ালরা নানা রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচে পড়ে
ভাটির দিকে আসতে পারে না।
তারা গঙ্গা ভাগিরথিতে হা করে ঘুরে বেড়ায়।
তারা আমাদের মিষ্টি জলে সৃষ্টি ছাড়া দৌড় করার জন্য
লালা ঝরিয়ে গঙ্গা ভাগিরথিকে পর্যন্ত বিষাক্ত করে ফেলেছে।
শক্ত চোয়ালওয়ালা রাঘবরা চায়
পদ্মা-যমুনার ভিতর দিয়ে হিমালয় পর্যন্ত একটা নিশ্চিত ট্রানজিট।
কিন্তু আমরা কালা-ধলা, সাদা ও সোনালীদের
হজম না করে তা কি করে সম্ভব?
আমরা যদিও গোপালের আগের একশ’ বছরকে
নিজেদের নদী-নালায়, হাওড়ে-বিলে ফিরিয়ে আনার
চেষ্টায় রাতে ঘুমাই না।
কিন্তু রাঘব বোয়ালদের শক্ত চোয়াল ছিদ্র করার মতো কাঁটাওয়ালা মাছের ঝাঁক
আমরা যে আগেই খেয়ে বসে আছি।