“সরু সামাজিক পথে চ’লে
একটু-আধটু কঁচা জায়গা তবুও মনের মধ্যে রাখা :
আগাছায় ছায়া-দেয়া আদিমতা ।
শোনো, বন্ধু, অলিগলি আঁকাবাঁকা তাতে ঘুরি।
চমক পাথরে মোড়া উজল মনন সভ্যতায়
অতিথি, তবুও ফিরে গিয়ে
ব’সে থাকি ভাঙা ঘাটে, সেই শিবতলা পুলে
গঙ্গার ওপারে, দেখি, কিছু নয়, মাছটা, পাখিটা,
কানাই ঘোরায় লাঠি, ছোটো ছেলেমেয়ে ভিড় করে,
হাঁ ক’রে তখুনি মানে জাদুবিদ্যে, ভেঁপু কেনে।
দামী রাজ্যে স্বনির্বাসী গরিব বাঙালি
তারি যে নিতান্ত সার্থী, ছেড়া চটি প’রে চলে যাই
আত্মীয় যুগের মধ্যগ্রামে,
একেবারে প্রাথমিক প্ৰণতির ।
আহা, ঐ বোষ্টমী ভিখারি
কিছু না জেনেও গায় কত সে পুরোনো ধ্বনিভরা
গান,
ছন্দ তার যেন নান্দী পাঠ, একতারা বাজা
ভাঙা ব্যাকরণে মেশা পার্থিব যোগের সংসারতা
হাটের বাটের, ছোঁয়া রাধা-কৃষ্ণ প্ৰেমধ্যানে,
শিব-পার্বতীর কথা, শৈল স্নিগ্ধ নীল হিমাচল
হাওয়ায় পুজোর ঠাণ্ডা আনে কলকাতায়,
বাংলা ঘরে-ঘরে ;
এ সব বলবারই নয়, হয়তো, কী জানি
প্রামাণ্যই নয়, তবু এতেও সূক্ষ্ম ধন
নরহরি বার্তা আছে তোমাদেরও ।
আশ্বিনে সানাই বাজে শোনো দূর শ্রুতি।
আজ আমার বুক ভরা, সবাইকে শ্ৰদ্ধা ক’রে বলি
সুন্দর স্বাগত দিলে, দেখো ছুটি অর্জেছি
দুই তীরে,
আন্তর্জাতিক মন শিকড়ে মাটিকে আঁকড়ে থাকে
যে-মাটি এ-বুকে আজো বাংলা পার্থিব,
যদি ফোটে মেঠো ফুল, তাই নাও সেই মাটি থেকে
যাত্রী-অৰ্ঘ্য নব বৎসরের ॥”