সম্পর্কের বন্ধন
নবনীতা শৌভিকের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী। সকালে স্নান সেরে শাশুড়িকে প্রণাম করতেই শাশুড়ি বললেন, এসবের কি প্রয়োজন? এখনো পর্যন্ত নাতি নাতনীর মুখ দেখা ভাগ্যে জুটলো না।সংসার করতে এসেছো, সন্তান না থাকলে সেই সংসারে বাঁধন থাকে?
শৌভিকেরও ভাগ্য, কপালে জুটেছে বাঁজা বউ।
নবনীতার খারাপ লাগে।
চুপচাপ রান্নাঘরে চলে আসে
কিছুক্ষণ পর শৌভিক এসে বললো, আজকে কি স্পেশাল রান্না হবে ?
নবনীতা বললো ফ্রিজে মাছ আছে তাই করে দিচ্ছি ; তোমার তো অফিসে যেতে হবে। ফিরবার সময় মিষ্টি কিনে কোনো মন্দিরে পুজো দিও, তাতেই হবে।
শৌভিক বলে, কিন্তু সোমা তো আসবেই, বলবে দাদা বিবাহবার্ষিকীতে কিছু খাওয়ালি না! নবনীতা বললো, এসব কথা মা’কে গিয়ে বলো। সকালে প্রণাম করতে গেলাম, সন্তান হচ্ছেনা কেন ব’লে দুকথা শুনিয়ে দিলেন। আমার আর ভালো লাগেনা, মনে হয় বাপের বাড়ি চলে যাই।
শৌভিক হঠাৎ রেগে বলে তাই যাওনা! মা’তো ঠিকই বলেছেন, এতোদিন বাচ্চা না হলে সব শাশুড়িই বলবে।
নবনীতা অবাক! এ শৌভিক কী বলছে? আমাদের তো ভালোবাসার বিয়ে। সন্তান না হলে ভালোবাসা ঠুনকো হয়ে যায়!
সোমা আসবে বলে, মাংস,দই, মিষ্টি কিনে দিয়ে শৌভিক অফিসে চলে যায়।
রাত্রিরে ফিরে নবনীতার কাছে ক্ষমা চেয়ে হাতে সোনার দুল দিয়ে বললো আজকের দিনে মুখভার করে থেকোনা, আমি তোমায় ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।
রাত্রে কথপোকথনের সময় শৌভিক বলে, দেখো একদম ভুলে গেছি আমরা তো সবরকম টেষ্ট করিয়েছি, রিপোর্টটা আনাই হয়নি। তুমি কালকে গিয়ে নিয়ে এসো।
নবনীতা পরদিন রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন, আপনার স্বামীর প্রবলেম আছে, ওনার স্পার্মের মান দুর্বল।
নবনীতা হতাশ। কি করে শৌভিককে বলবে! শৌভিক ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে পড়বে, মাকেইবা কি বলবে! তার থেকে দোষ আমারই নেওয়া ভালো।
সেদিন অফিস থেকে ফিরে সৌভিক রিপোর্টের কথা ভুলে যায়। দিন আপন গতিতে চলে। নবনীতাও এখন শাশুড়ির গঞ্জনায় অভ্যস্ত।
একদিন শৌভিকের সামনে শাশুড়ি বলেন, শোনো তোমার সন্তান হবেনা, তুমি বাঁজা। আমি শৌভিকের আবার বিয়ে দেবো। পাত্রী আমাদের জানাশোনা। কি করবো বলো, বংশরক্ষা তো চাই।
এইসময় শৌভিকের মনে পড়ে রিপোর্টের কথা। নবনীতাকে জিজ্ঞাসা করলে নবনীতা বলে আমার গাইনি প্রবলেম আছে, কোনোদিনও মা হতে পারবোনা। তাই তোমায় জানায়নি, রিপোর্টটা ছিঁড়ে ফেলেছি।
শৌভিক সহানুভূতির সুরে সান্ত্বনা দেয়। মনে ভাবে বংশরক্ষার জন্য এবং মায়ের ইচ্ছাপূরণে সে বিয়ে করবে।
কথাটা নবনীতাকে জানিয়ে বলে, শুধু সন্তানের কারণে সে বিয়ে করবে, নবনীতার অমর্যাদা করবে না। পরদিন নবনীতা বাপের বাড়ি চলে আসে।
যেদিন বিয়ে তার আগের দিন নবনীতা শৌভিকের ওয়াটসঅ্যাপে রিপোর্টটা পোস্ট করে। শৌভিক দেখে অবাক ! চলে আসে নবনীতার কাছে। কেঁদে বলে,” তুমি আমার মান বাঁচানোর জন্য সব দায় কাঁধে নিয়ে কত গঞ্জনা সহ্য করেছো! আমাকে জানতে পর্যন্ত দাওনি!”
চলো। তোমাকে নিতে এসেছি। আমাদের সম্পর্কের বন্ধন কেউ কোনোদিনও ভাঙতে পারবে না।