Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গান্ধর্বী || Bani Basu

গান্ধর্বী || Bani Basu

সে যখন রবীন্দ্রসদনের গেট দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরোচ্ছিল তখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পরীর ওপর একটা প্রকাণ্ড লালচে কালো মেঘ। মাত্র একটাই। বাকি আকাশটা ধূসর। অনেকটা যেন সেই প্রতিচ্ছায়াহীন মানব মনের মতো। কিন্তু ওই একটা লালচে কালো ছোপই ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো। গুহা মানবদের আঁকা বাইসন ছুটতে ছুটতে আসছে। ওইরকম মহাকায়, ওইরকম বেগবান। কিম্বা বলা যেতে পারে ফৈয়জ খাঁ সাহেবের হলক তানের হুঙ্কার। চোখে মুখে ধুলোর ঝাপটা লাগবার আগেই যেমন করে হোক বাসে উঠে পড়তে হবে। নইলে বিপদ। পেছন থেকে দীপালিদি ডেকেছিল— ‘অপু, আমার গানের আগেই চলে যাচ্ছিস যে বড়?’ তার স্বরে অভিমান। অপালা এগোতে এগোতেই বলেছিল—‘না গেলেই নয় রে দীপুদি, তুই তো সবই জানিস।’

তার তানপুরো রয়ে গেল মাস্টারমশাইয়ের জিম্মায়। তানপুরো অবশ্যই তাঁরই। এ কদিন রেওয়াজের জন্য ছিল তার কাছে। যতদিন থাকে সে তটস্থ হয়ে থাকে। মস্ত বড় তুম্বিঅলা তানপুররা। ইন্দোরের কোন বিখ্যাত কারিগরের হাতের তৈরি, ঐতিহ্যবাহী জিনিস। সে অনেকবার বারণ করেছিল মাস্টারমশাইকে। ছোট তানপুরোটাতেও তো তার অনায়াসেই চলে যেত। অন্যান্য প্রতিযোগিতার আগে মাস্টারমশাই সেটাই দিয়েছেন। কিন্তু এবার ওটাই দিলেন। সে কিন্তু কিন্তু করতে এক ধমক খেল। সোহমের গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিলেন তার বাড়ি। পণ্ডিত চন্দ্রকান্ত ছিলেন বিচারকদের মধ্যে। একদম অভাবিত। অপালা কেন, আর কোনও প্রতিযোগীই এ আশঙ্কা করেনি। পুনে থেকে এস. এস্‌ জয়কার, লক্ষ্ণৌ থেকে আহম্‌দ হোসেন আসছেন জানা ছিল। কিন্তু এঁরা যদি গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলে গোবাঘা হন তো পণ্ডিত চন্দ্রকান্ত আসল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এতোটাই তফাত। সত্যিকারের নায়ক লোক। যেমন জ্ঞান সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় তেমনি ওস্তাদ গাইয়ে। তেমনি আবার শিক্ষক। সেই সঙ্গে লোকে বলে চন্দ্রকান্তজী সাধক মানুষ। সবই মাস্টারমশাইয়ের কাছে শোনা। তারা শুধু রেকর্ড শুনেছে। একবার মাত্র একবার, সদারঙ্গ সঙ্গীতসম্মেলনে শোনবার সৌভাগ্য হয়েছিল। দাপট কী! বাপ রে। ওঁর আসবার কথা মাস্টারমশাই যদি জেনেও থাকেন, গোপন করে গেছেন ওরা ভয় পাবে বলে।

পনের মিনিট সময়, তার মধ্যে সবগুলি অঙ্গ দেখাতে হবে। মিনিট তিনেকের মতো আলাপ করে নিয়ে সে সবে ‘জিউ মোরা চা আ এ-এ-এ’ বলে টানটা দিয়েছে থামিয়ে দিলেন চন্দ্রকান্তজী।

—‘তোড়ি কখনকার রাগ?’

—‘দিবা দ্বিতীয় প্রহর।’

—‘এখন সময়?’

—‘ঘড়ি দেখে মনে হয় সবে সন্ধ্যা। ইমন, ভূপালিই প্রশস্ত।’

—‘তাহলে?’

—‘সব গানের আসরই যদি সন্ধ্যায় বসে তো ভোরের, সকালের প্রিয় রাগগুলি আমরা গাইব কখন, ওস্তাদজী?’ তানপুরোর খরজে আঙুল রেখে দ্বিধাকম্প্র স্বরে বলেছিল অপালা। আসল কথা, অন্যান্য যেসব উপাধি-পরীক্ষায় তারা এত দিন বসেছে তাতে রাগ-পরিচয় এবং অন্যান্য থিয়োরি জানা আবশ্যক ছিল। কিন্তু চয়েস রাগ বলে যে বস্তুটা থাকত, সেটা তারা যেটা ইচ্ছে সিলেবাসের মধ্য থেকে বাছতে পারত। সময় যাই হোক, সেটি গাইতে কোনও বাধা হয়নি। এ প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী যে আলাদা তাদের সে-কথা কেউ বলেনি। তারা জানবে কি করে? কিন্তু মঞ্চে বসে আয়োজকদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা বললে সুর কেটে যাবে। হঠাৎ সে আরেকটু সাহস করে বলল— ‘তা ছাড়া এই বদ্ধ ঘরে দিন রাত সবই তো সৃষ্টি হতে পারে রাগের আশ্রয়ে, বাইরের প্রকৃতি কি এখানে ঢুকতে পারছে?’

পণ্ডিতজীর মুখে সামান্য হাসি। বললেন— ‘তোড়ির মতো ভালো আর কোনটাই কি তৈয়ার নেই! নাকি সেই দীপক-মেঘমল্লারের কহানী তুমি সত্যি-সত্যি বিশ্বাস করো বেটি?’

অপালা মুখ তুলে বলেছিল —‘পণ্ডিতজী যদি আদেশ করেন আমি সন্ধ্যার রাগই গাইব। তবে আমার আগে, তিনজন ভূপালি, ইমন ও পূরবী গেয়ে গেলেন। আমি পুনরাবৃত্তি করলে শ্রোতাদের ধৈৰ্য্যচ্যুতি হতে পারে। এখন পণ্ডিতজী আদেশ করুন।’

চন্দ্রকান্ত স্মিতমুখে বললেন— ‘পুরিয়া তৈয়ার আছে?’ অপালার ভেতরটা চলকে উঠল। হার্মোনিয়মে বসেছেন তার মাস্টারমশাই রামেশ্বর ঠাকুর। তাঁর মুখে হাসি আসা-যাওয়া করছে বিদ্যুতের মতো। পুরিয়া অপালার বড় প্রিয় রাগ। পণ্ডিতজীর লং প্লেয়িং সে বারবার শুনেছে, তুলেছে, আপন আনন্দে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে সে রাগের প্রকাশ মহিমায়। পণ্ডিতজীরই প্রিয় গান, প্রিয় বন্দিশ সে ধরল ময়ূরের মতো আনন্দে। সেই ‘সুপ্‌নোমে আবে পিয়া।’ সামান্য একটু সুর ধরেই আরম্ভ করে দিল গান। অনেক সময় গেছে, আলাপাঙ্গ তো এঁরা শুনেই নিয়েছেন। হলই বা ভিন্ন রাগের। এইটুকু সময়ের মধ্যে যথাসম্ভব বিস্তার, স্বরন্যাস, বোলতান, সরগম, তারপর তার সপাট বড় বড় কূট তান সব করে দেখাতে হবে তো। অন্তত গাইতে গাইতে তার যা করতে ইচ্ছে করবে তাকে তো ইমান তাকে দিতেই হবে। তার সরগমগুলি সারেঙ্গিতে নিখুঁত তুলে বড় তৃপ্তিতে মাথা নাড়লেন ওস্তাদ ছোটেলাল। তর্কে-বিতর্কে সময় গেছে বলে পণ্ডিত চন্দ্রকান্ত তাকে পাঁচ মিনিট সময় বেশি দিলেন। গান শেষে সভাস্থ সবাইকে নমস্কার করে তানপুরাটিকে ‘লহো লহো তুলে লহো’র ভঙ্গিতে মাথায় ঠেকিয়ে অপালা বেরিয়ে গেছে, যবনিকার আড়াল দিয়ে বাইরে। সে জানে তার আর কোনও চান্স নেই, অত তর্কাতর্কি! অত দেরি! পুরিয়া বড় রাগ, কঠিন রাগ। একটু অসতর্ক হলেই মারোয়া কিম্বা সোহিনীর ছোঁয়া এসে যাবে। দ্রুত গানটি, ‘ম্যাঁয় তো পিয়া সঙ্গে রঙ্গরলিয়া’র সময়ে সে মারোয়ায় চলে যাওয়া এবং ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। কিন্তু অত অল্প সময়ে এসব মেটানো যায় না। অন্তত সে পারে না। এখনও। সময় বেশি দিলেও সে তার তৈরি তেহাই দিয়ে গান শেষ করতে পারেনি। অথচ আশ্চর্যের কথা, তার সমস্ত মনটা আশ্চর্য প্রসন্নতায় দ্যুতিময় হয়ে আছে। অত কথা কাটাকাটির পরও কী মন্ত্রে যেন গান গেয়ে সে বড় আনন্দ পেয়েছে। তোড়ির সাজেশনটা মাস্টারমশাইয়েরই। একবার মনে হয়েছিল সন্ধ্যার গান গাওয়াই ভালো। যদিও নিয়মের কথা কেউই জানতেন না, সম্ভবত নিয়ম কেউ করেনওনি। চন্দ্রকান্তজী তাঁর দীর্ঘদিনের সংস্কারে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি কখনও প্রয়াগ, চণ্ডীগড় এ সবের পরীক্ষা তো নেন না! মাস্টারমশাই বলেছিলেন—‘লড়ে যা মেয়ে, তোড়ি কঠিন রাগ, সবাই এর সৌন্দর্য ফোটাতে পারে না। বড় বড় কনফারেন্সে বড় বড় কলাবন্তরা ছাড়া এসব গাইবার সুযোগই কমে যাচ্ছে। এতটা রক্ষণশীলতা আমার ভালো লাগে না। তা ছাড়া প্রতিভা কোনও নিয়ম মেনে চলে না।’ শেষের কথাগুলো মাস্টারমশাই বলেছিলেন আত্মগত। যদিও অপালার কানে সেগুলো পৌঁছেছিল। তার প্রতিভা আছে কিনা সে এখনও জানে না, কিন্তু তার একটা জিনিস আছে সেটা হলো মাস্টারমশাইয়ের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা এবং বাধ্যতা। তিনি না থাকলে তো তার এতদূর পৌঁছনো হতো না! তা সেই লড়ে যেতেই হল।

সোহমের জন্য মনটা খুঁতখুঁত করছে খুব। ওরা দুজনেই মাস্টারমশাইয়ের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী। এরা সময় আগে থেকে জানাচ্ছে না, যেমন অপালাকে ডাকল চতুর্থ। তার রোল নাম্বার হিসেব করলে সে আসে অনেক পরে। তার বাড়ির অসুবিধের কথা ভেবে হয়ত মাস্টারমশাইই ঘটিয়েছেন কাণ্ডটা। রোল নং ধরলে, বোঝাই যাচ্ছে সোহম পড়েছে শেষের দিকে। ও গাইবে খুব সম্ভব শংকরা। ভালো, বড় ভালো গায় সোহম। মাস্টামশাইয়ের পুরুষালি তেজ, বিক্রম, তাঁর বিখ্যাত গমক, গিটকিরি, টপ্পার কাজ—এ সবই সোহমের গলায় অবিকল উঠে আসে। মানায়ও। বেশ পাল্লাদার গলা। মাস্টারমশাইয়ের গলা এই বয়সেই ভেঙে গেছে। স্বরভঙ্গ হয় মাঝে মাঝে। কণ্ঠ নামক শারীরিক যন্ত্রটির ওপর তো মানুষের হাত নেই। কিন্তু সুরের ওপর আছে। মাস্টারমশাই মাত্র পনের বছর বয়সে প্রডিজি হিসেবে ভারতজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন। রামপুরে আর বরোদায় কাটিয়েছেন বহুদিন। তখন ভারতবর্ষের গুণিসমাজ এক ডাকে চিনত রামেশ্বর ঠাকুরকে। গায়ক-জীবন আরম্ভও করেছিলেন অল্প বয়সে, নিভেও গেলেন অল্পবয়সেই। পঞ্চাশেই আর গলা অতি-তারে যেতে চায় না। সি শার্প থেকে জিতে নেমে এসেছেন। খাদের দিকের রেঞ্জটা একই রকম আছে। মন্দ্রসপ্তকে একটা ভারী সুন্দর জোয়ারি আসে গলায়, জর্জেট কাপড়ের মতো। যেটা অপালার বিশেষ শ্রদ্ধার জিনিস। কিন্তু গায়ক হিসেবে রামেশ্বর আর প্রথম কেন দ্বিতীয় সারিতেও নেই। তবে তিনি শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষক। যার ভেতরে গানের গ আছে তার ভেতরে আ কার আর দন্ত্য ন না ঢুকিয়ে তিনি ছাড়বেন না, আর যে কষ্ঠে গান নিয়েই জন্মেছে অপালা অথবা সোহমের মতো তারা যে তাঁর কাছ থেকে কী পায়, হার্মোনিয়মের মারফত, এসরাজের মারফত, সেতারের মারফত, সে অনির্বচনীয়কে তারা শুধু নিজেদের গভীরতম সত্তাতেই জানে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না।

সবচেয়ে বড় কথা রামেশ্বরের কোনও অভিমান নেই। এবং সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর একটা সামগ্রিক সুসম্বদ্ধ কল্পনা আছে। বলেন ‘দেখো আগেকার দিনে ঘরানা ব্যাপারটা গড়ে উঠেছিল কিছুটা পারস্পরিক যোগাযোগের অভাবে, কিছুটা আবার কোনও ওস্তাদের শুদ্ধি-বাতিক বা কৃপণতার জন্যে। পাতিয়ালার তানের স্পীড, কি আগ্রা ঘরানার বোল তান, কিরানার রাগের বাঢ়ত। এসব খুব শ্রদ্ধেয় বৈশিষ্ট্য নিশ্চয়ই। কিন্তু আজকে স্পেস-টেকনলজির যুগে বসে আমরা এগুলোকে যথাসাধ্য একত্র করতে পারবো না কেন? তিনি তাঁর সেরা ছাত্র-ছাত্রীদের তারিক আলি, মুমতাজ খান, ঘনশ্যাম গাঙ্গুলি এঁদের কাছে পাঠিয়েছেন তাদের তান-অঙ্গ আরও চোস্ত করতে। ঠুমরির তালিম নিতে। অপালা যা পেয়েছে, হাত ভরে পেয়েছে। আশাতীত পেয়েছে। যদিও গুরু রামেশ্বর তাঁর স্বাভাবিক বিনয়ে বলেন—‘তুমি আমাকে যা দিয়েছো তা তো জানো না মা, তোমরা-দুজনে আমার বসন্তকে ফিরিয়ে এনেছে। নিজের গলায় যৌবনের সে জিনিস তো আর ঈশ্বরের অভিশাপে করতে পারি না। তোমাদের কণ্ঠে তাকে ফিরে ফিরে পাই।’

—‘ঈশ্বরের অভিশাপ কেন বলছেন মাস্টারমশাই?’ অপালা ব্যথিত বিস্ময়ে বলেছে।

—‘ঈশ্বর অহংকার দেখতে পারেন না। চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন অহংকারী মানুষকে।’ “তুমি যদি সুখ হতে দম্ভ করই দূর। প্রতিদিন তব গাথা গাবো আমি সুমধুর···” তানপুরায় ঝংকার তুলে রামেশ্বর গেয়ে ওঠেন। ভাঙা-ভাঙা গলা। তার মধ্যে কী গম্ভীর বিষাদ মাখা আকুতি।

—‘ঈশ্বর যদি ঈশ্বরই হন তবে তিনি এই সামান্য ত্রুটিতে মানুষকে এতো শাস্তি দিতে পারেন না মাস্টারমশাই।’

—‘ঠিক বলেছো। ঠিকই বলেছো মা,’ তানপুরাটি সযত্নে নামিয়ে রাখেন রামেশ্বর, অপালাকে লজ্জা দিয়ে বলে ওঠেন ‘তোমরা আধুনিককালের মেয়ে, ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা তোমাদের অনেক পরিণত, আমরা তো শুধু যা শুনেছি, তা আউড়ে যাই। রাস্তার ভিখারিও এদেশে দেখবে ‘খুদা কি মরজি’ কি ‘সবই মঙ্গলময়ের ইচ্ছা’ বলে মরছে। রিয়ালাইজ করে বলছে কি! মোটেই না। দীর্ঘদিনের মানসিক অভ্যাস। আজকালকার ভাষায় মগজধোলাই। হ্যাঁ যে কথা বলছিলুম। ঈশ্বরের অভিশাপ নয়। বলতে পারো সুরদেবতা কিম্বা গন্ধর্বের অভিশাপ। মানুষের যা কিছু নান্দনিক ক্ষমতা এবং বাসনা তার জন্য একটি আলাদা জগৎ আছে মা। সেই হলো গন্ধর্বলোক। সেখানে দেব গন্ধর্ব বিশ্বাবসু দেখেন সঙ্গীতামৃত সুরক্ষিত আছে কিনা, সেখানে সৃষ্টি হয় মনের আনন্দে। আর আনন্দে সৃষ্টি হয় বলেই সেখানে বেসুর-বেতাল বলে কিছু নেই। সে লোক যেমন তালভঙ্গ সয় না, তেমন তালগর্বও সয় না। ‘কথাটা মনে রেখো মা।’

সামনে ঘ্যাঁচ করে একটা গাড়ি ব্রেক কষলো।

—‘প্রাণটা বেঘোরেই একদিন যাবে দেখছি। ধ্যান করতে করতে পথ-চলা হয় নাকি?’ গাড়ির স্টিয়ারিং-এ সুবেশ ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বললেন। তখন ভয় বা লজ্জা পাবার সময় নেই, চারিদিকে শুকনো পাতা উড়ছে। ধুলো উড়ছে, চোখে মুখে এসে লাগছে চোখ জ্বালানো ধুলোর ঝাপট। অপালা দেখল আকাশের বাইসনটা খেপে গেছে। মাটিতে ক্ষুর ঠুকছে প্রবল বিক্রমে এবং সামনে থেকে গজলা হরিণের দল মেঘগুলো তাদের ছোট ছোট করুণ পায়ে তুড়ুক দৌড় মারছে। গাড়িটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। তারপরই বিষ্টি বিষ্টি বিষ্টি। ক্যাথিড্রাল রোড়ের কালো পিচ রাস্তা ধরে কেন যে সে আসছিল! ভালো লাগে বলে! বিশাল-বিশাল বনস্পতির সঙ্গ, নিম্নে, মধ্যে, ঊর্ধ্বে সবুজ, তাম্রাভ, কচি, পরিপক্ক প্রায় কৃষ্ণবর্ণ, কত রকমের সবুজ। এবার সেই অবচেতন ভালো-লাগার মূল্য দিতেই হয়। সোঁদা সোঁদা মহুলগন্ধ তুলে, একদিকের দৃশ্যপট আরেকদিকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, ক্যাথিড্রালের চূড়াটাকে ঐঁকিয়ে-বেঁকিয়ে আবার সোজা তীক্ষ্ণ করে দেওয়া তুমুল বৃষ্টি। কোথাও কোনও আশ্রয় নেই। অপালা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। একেবারে এক ঝাপটায় তার মাথা, তার হলুদ বেগমবাহার শাড়ি, তার অন্তর্বাস সব ভিজে ভারী হয়ে গেল, এত ভারী যে সে আর নিজেকে নাড়াতে পারে না। হাড়ের মজ্জায় পর্যন্ত যেন জল ঢুকে গেল। এ বৈশাখের এই প্রথম বৃষ্টি। অপালা ভুলে গেছে সে কিছুক্ষণ আগে জবরদস্ত বিচারকমণ্ডলীর সামনে থরো থরো তানপুরো নিয়ে বেপথুমান সওয়াল-জবাব চালাচ্ছিল, যা শ্ৰোতৃমণ্ডলীর কাছে সুন্দর অথচ সপ্রতিভ মনে হয়েছে, সে ভুলে গেছে তার বাড়ি যাওয়ার প্রচণ্ড ভ্রূকুটিময় তাড়া, যা তাকে সোহমের শংকরা শোনার লোভ সম্বরণ করতে বাধ্য করিয়েছে। মল্লার এখন তার শিরায় শিরায় বাজছে। ধমনীতে ধমনীতে বইছে। সে এখন আপাদমস্তক মল্লারে স্নাত;! সুরদাসী মল্লার, রামদাসী মল্লার; নটমল্লার, গৌড়মল্লার, মিঞা কি মল্লার⋯অবশেষে এক তীব্র কেয়াগন্ধী মেঘবর্ণ পুরুষ, তাঁর গলায় নীপ ফুলের মালা··সেই বিশাল ক্রোড়ে সে পুতুলের মতো দুলছে। ‘দোলাও আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে⋯’

কীর্তি মিত্র লেনের মোড়ে নদী বইছে। আধো অন্ধকারে ছপছপ করতে করতে লোকজনের আসা-যাওয়া। শাড়ি-পেটিকোটকে সর্বাঙ্গে ভারী আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছে। বারবার কুঁচির কাছে শাড়ির তলাটা জড়ো করে নিংড়ে নিতে নিতে আসছে অপালা। কিন্তু নিংড়ে নিলে কি হবে? কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের ওপর তেমন জল না থাকলেও অলিগলিগুলো এখন সব খাল। হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে হাঁটুর গোছ-ডোবানো উঠোন-জলে যখন সে এসে দাঁড়াল তখন আকাশ-বাতাস এবং গলিভর রং ওঠা মধ্যবিত্ত বাড়িগুলোর চেহারা দেখে মনে হয় এ বুঝি কোনও ছোটখাটো প্রলয়ের মাঝরাত। গলির মোড়ের আলোটা না জ্বলায় জমা জলের চেহারা একেবারে কালির মতো। পেছন দিকে ছপ্‌ছপ্‌। দাদার গলা—‘আজ তোর হবে।’ কলতলায় ঢুকে বেশ করে চৌবাচ্চার জলে চান করে, গামছায় চুল নিংড়ে, শুকনো ডুরে শাড়িটার আঁচল বুকের ওপর টেনে দাওয়ার ওপর এসে অপরাধীর মতো দাঁড়াল অপালা। বৃষ্টির কনকনে ঠাণ্ডা জলের তুলনায় বাড়ির চৌবাচ্চার জলটা রীতিমতো গরম। এখন বেশ একটা আরাম লাগছে। কিন্তু গলা গরম করে গান করার পর ওই কনকনে জলে ভেজার ফল গলার ওপর খুব ভালো হবার কথা নয়। সে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে বলল— ‘মা একটু আদা চা হবে? একটা তেজপাতা আর একটা লবঙ্গ ফেলে দিও, তাতেই দু কাপ হয়ে যাবে।’ পেছন থেকে জেঠুর গলা শুনে সে চমকে উঠল— ‘প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রীটে মানে অত্যন্ত কুখ্যাত অঞ্চলে গান শিখতে যাও। ভগবানদত্ত গলা আছে মানছি। কিন্তু এই রাত্তির নটায় সেসব অঞ্চলে ঘোরাফেরা করার যে কী বিপদ, তুমি ছেলেমানুষ হয়ত পুরোপুরি বোঝাতে পারবো না। কিন্তু আমি বুড়ো মানুষ তো স্ট্রোক হয়ে যাবার মতো হয়েছি। আমি বা বউমা যদি স্ট্রোক-ফোক হয়ে অদড় হয়ে পড়ে থাকি তো এই সংসারের হাল কী হবে সেটুকু বোঝবার মতো বুদ্ধি তোমার হবার কথা। একটি সুতোর ব্যবধান অপু⋯একটি মাত্র সুতো। তার এদিকে স্বর্গ ওদিকে নরক। যাকে বলে জাহান্নম।’ জেঠু পায়ের বেশ আওয়াজ তুলে চলে গেলেন। বিশেষ কাজ না থাকলে তিনি এ সময়ে নীচে নামেন না। অনায়াসেই অপালা এই বিপদটা কাটাতে পারত। কিন্তু জেঠু খুব সতর্ক মানুষ। তিনি সারাক্ষণ খোঁজ রেখেছেন। অপেক্ষা করেছেন এবং কথাগুলিকে শানিয়েছেন। অভিমানে অপুর চোখের কূল ছাপিয়ে উঠছে। সে বলল— ‘মা, তুমি কি জানো না আমি রবীন্দ্রসদনে গিয়েছিলুম? কি কম্পিটিশনে তা-ও বলেছি। আমারটা হবামাত্র চলে এসেছি। আর কারও গান শুনিনি। দীপালিদির না, সোহমের না। আচমকা ঝড়-বৃষ্টি হলে কী করব? বাস পাই না, কিছু না, কতটা রাস্তা এইরকম ভিজে গোবর হয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসেছি তা জানো?’

—‘আমি বটঠাকুরকে বলেছিলুম। উনি বুঝতে চান না। বোধহয় ভুলেও গেছেন কোথায় গেছিস। ওঁর বউবাজার ভীতি আমি কিছুতেই কাটাতে পারছি না। ভয় যে আমারও নেই তা অবশ্য মনে করো না অপু।’

দাদা বলল—‘তোর জন্যে ছাতা নিয়ে আমি একঘণ্টা ট্রাম রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। কি করে মিস করে গেলুম বল তো?’

দুজনেই আদা চা-এ চুমুক দিচ্ছে, মা মস্ত বড় কাঁসার বগি থালার ওপর জেঠুর রুটি-তরকারি বেগুন ভাজা দুধ সাজাচ্ছেন, অপালা বলল— ‘অন্ধকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তো ঝাঁকে ঝাঁকে ভেজা কাক, কার থেকে কাকে তুই আলাদা করবি? আজকের বৃষ্টির জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিল না কি? এক জনের হাতেও ছাতা দেখলুম না। যখন ঝড় শুরু হল, আমিও তো ভেবেছিলাম, পরশু দিনের মতো আজও ঝড়ের ওপর দিয়েই যাবে।’

দাদা বলল— ‘তোর ওস্তাদজী বোধহয় নিজস্ব ঘরানার একখানা বে-নজির মেঘমল্লার ছেড়েছিলেন। —ব্যাস, ফোঁ ফ্যাঁচ ফোঁত, আকাশ হেঁচে কেশে একেবারে ভ্যাঁক করে কেঁদে ফেলল।’

অপালা চায়ের কাপ ঠকাস করে নামিয়ে রেখে হাতে এক চড় তুলল— ‘দাদা ভালো হবে না বলছি!’ প্রদ্যোৎ সুযোগ পেলেই রামেশ্বর ঠাকুরের ভাঙা মাঝে মাঝে বেসুর হয়ে যাওয়া গলা নিয়ে এমনি তামাশা করে। ক্লাসিক্যাল গান তেমন পছন্দও করে না। আবদুল করিমের বিখ্যাত ভৈরবী ঠুমরি ‘যমুনাকী তীর’ ওর কাছে বেড়ালের কান্না। ফৈয়াজ খাঁর নটবেহাগের রেকর্ডটা শুনে বলেছিল তোর ওই ফৈয়াজ খাঁ সাহেব আর আবদুল করিম খাঁকে লড়িয়ে দে, পার্ফেক্ট হুলো-মেনির ঝগড়া হবে।

গান যে বাড়ির সবার কাছে একেবারে অপাংক্তেয় তা অবশ্য নয়। জেঠু পছন্দ করেন কীর্তন। ছোটতে কচি গলায় কীর্তন আর শ্যামাসঙ্গীত দিয়েই অপালার সঙ্গীত-জীবন শুরু হয়। কচি গলায় সে যখন পাকার মতো গেয়ে উঠত ‘আমি মথুরানগরে প্রতি ঘরে ঘরে যাইব যোগিনী হয়ে⋯দে দে আমায় সাজায়ে দে গো’ কিম্বা ‘আমি স্বখাতসলিলে ডুবে মরি শ্যামা, দোষ কারো নয় গো মা।’ তখন পাকা পাকা বৃদ্ধরাও আহা আহা করে উঠতেন। বুড়িদের মজলিশেও তাকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো—চোখের জল বার করবার জন্যে। মা এসব ছাড়াও ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, এঁদের গান। কাছাকাছির স্কুল ফাংশন, পাড়া-জলসা ইত্যাদি ঘটনায় ছোট্ট অপুর আসন ছিল পাকা। আর এই রকম একটা রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসবে তার ছোট্ট কণ্ঠে ‘বাসন্তী হে ভুবনমোহিনী’ গানটি শুনে অবাক হয়ে রামেশ্বর ঠাকুর তাকে যাকে বলে একেবারে পাকড়াও করে ধরেন।

বৃষ্টি অনেকক্ষণ থেমে গেছে। ভেজা হাওয়ার সঙ্গে জুঁইয়ের গন্ধ ঢুকছে তেতলার ছাতের ঘরে। এ ঘরটা দাদার। কিন্তু অপু ঘরটাতে সমানেই ভাগ বসায়। এখন দাদা সিগারেট খেতে খেতে ছাতে ঘুরছে, অনেকক্ষণ ঘুরবে এইভাবে। এটা ওর রাতের বিলাস। ছাত থেকে হাওয়ায় সিগারেটের গন্ধ ওপরে উড়ে যাবে, মা বা জেঠু টের পাবে না। দাদার এই ধারণা। অথচ আজকাল দাদার জামা কাপড় মুখ সব কিছু থেকে সিগারেটের গন্ধ বেরোচ্ছে। বললে বিশ্বাস করবে না। বারণ করলে বলে—‘তোর যেমন গানের নেশা, আমার তেমনি ধোঁয়ার নেশা।’ —‘দুটোতে কোনও তুলনা চলে?’ অবাক হয়ে অপালা বলে, ‘আমি গানের জন্যে কত সাধনা করি, কত কষ্ট করি, আনন্দ পাই, আনন্দ দিই, তোরটা তোর ক্ষতি করছে, আমারটা কি তাই?’

—‘বাঃ আমি সাধনা করি না? গলায় ধোঁয়া নেওয়া রীতিমতো সাধনাসাপেক্ষ তা জানিস। এই দ্যাখ আমি রিং ছাড়ছি একটার পর একটা, তুই যেমন কতকগুলো সুরের চক্কর ছাড়িস। আর তুই ভাবছিস তোর নেশাটা ইনোসেন্ট, ক্ষতি করবে না? অফ কোর্স তোর ক্ষতি করবে। বদ্‌সংসর্গে পড়বি, সংসারে অশান্তি হবে গাইয়ে মেয়ে নিয়ে, রেজাল্ট খারাপ হবে⋯’

দাদার কথার অবশ্য কোনও মানেই হয় না। সিগারেটের নেশার সঙ্গে গানের নেশার তুলনা সে-ই করতে পারে যে আবদুল করিমের গানে বেড়ালের কান্না শোনে। তবু কথাগুলো বুকের মধ্যে বিঁধে থাকে। তার রেজাল্ট খারাপ হবে⋯সে বদসংসর্গে পড়বে⋯ সংসারে অশান্তি হবে। হাঁটুর ওপর থুতনি দিয়ে তক্তপোশের ওপর সে বসে থাকে। বসে থাকতে থাকতে কখন ভুলে যায় চিলেকোঠার ঘর, কীর্তি মিত্র লেন। চলে যায়, রবীন্দ্রসদন। জমজমাট হল। গমগম করছে। আলো নিভে গেল অডিটোরিয়ামে। মঞ্চের একধারে বিচারকদের আসন। তানপুরার আড়ালে অর্ধেক মুখ লুকিয়ে সে গাইছে, গেয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ যেন তার সঙ্গে অনেকে গেয়ে ওঠে, আরো অনেক স্বর মিশে যাচ্ছে তার স্বরে। মুখটা কে আরম্ভ করলেন? কেসরবাই কেরকার? কিরকম একটা অদ্ভুত কূট কাজ দিয়ে আরম্ভ করলেন। আহা আহা করে উঠল কারা হল থেকে। বিলম্বিত একতালে বিস্তার শুরু করেছেন মঘুবাই। ধীরে ধীরে বাড়ছেন। সঙ্গে কণ্ঠ দিচ্ছেন কোকিলের গলায় রোশেনারা বেগম। ঝরনার মতো তান ঝরে পড়ছে হীরাবাঈয়ের গলা থেকে। ছোট ছোট টুকরা লড়ি পেশ করছেন সরস্বতী। নিজের কণ্ঠও শুনতে পেলো অপালা—সুনি ম্যঁয় হরি আওন কী আবাজ। কখনও এমন হবে কিনা। এই সমস্ত ভারতবর্ষীয় কোকিল-দোয়েল-শ্যামা-বুলবুলদের উত্তরাধিকার কণ্ঠে নিয়ে সে গেয়ে যেতে পারবে কিনা—এ প্রশ্ন তার এই সুরেলা, কালবৈশাখী-অন্তের সিক্ত দিবাস্বপ্নে আদৌ প্রবেশ করে না। এ প্রশ্ন যে উঠতে পারে এ ধারণাই তার এখন নেই। বসে বসেই অপালা ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিনের উত্তেজনায়, প্রত্যাশায়, ক্লান্তিতে, তৃপ্তিতে। অনেক তৃপ্তিতে। অনেক রাতে মা যখন ডাকতে এলেন, তখন তার দাদাও তার পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দাদা শুয়ে, বোন হাঁটুতে মুখ গুঁজে। জুঁইয়ের গন্ধের সঙ্গে মিশে আছে সিগারেটের মৃদু গন্ধ। মা ডাকলেন—‘অপু, এই অপু নীচে চ’। রাত সাড়ে এগারটা বাজল।’ ঘুমে অসাড় হাত-পা চলে না, কোনমতে দেয়ালে ভর দিয়ে নেমে আসতে আসতে অপালা ভারী গলায় বলল— ‘ছাতের ঘরটা আমায় দাও না মা!’

—‘তুই একা ছাতের ঘরে শুবি? মাথা খারাপ নাকি?’

—‘আমার রেওয়াজের সুবিধে হয়। দাদাটা বড্ড বেলা করে ওঠে।’

—‘তাহলে খোকা কোথায় থাকবে?’

—‘রান্নাঘরের পাশের ঘরটা তো পরিষ্কার করে দিতে পারো। না হয়, তোমার সঙ্গেই থাকল।’

—‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? অতবড় ছেলের একখানা নিজস্ব ঘর না হলে চলে?’

—‘আর এতো বড় মেয়ের বুঝি দরকার হয় না কিছুর?’

সে কথার জবাব না দিয়ে মা বললেন— ‘মাঝরাতে আর জ্বালাসনি অপাই, চল।’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
Pages ( 1 of 28 ): 1 23 ... 28পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress