গণপ্রহার
আকাশচুম্বী আবাসন। সকাল বেলাতেই ফেরিওয়ালার চিৎকার,”বইখাতা, কাগজ পত্র বিক্রি আছে…..”। কোনো এক মালকিনের তলব। দাড়োয়ান গিয়ে ধরে আনলো তাকে। খানিক দর কষাকষি করে চলছে বিক্রি। বাড়ির কর্তার তখন চলছে অফিস যাবার তোরজোড়। খবরের কাগজটা পড়ে,চললেন স্নানে। গিন্নীর তখন প্রায় বেচা শেষ, পয়সা বুঝে নেবার পালা। ভাতটা উবু দিয়ে আসলেন ফাঁকে। হিসাব বুঝে নিলেন, ফেরিওয়ালা উঠতেই যাবেন, এমনসময় কর্তার চিৎকার, “ফোন কোথায় “? ফোন নেই তো নেই। সন্দেহ ফেরিওয়ালা কে। এই ব্যাটাই চোর। কিছু সময় চিৎকার চেঁচামেচি হলো। ছুটে এলেন আবাসনের আরও কয়েকজন। জটলা দেখে বাইরের কিছু লোকজন এসে জুটলো। শুরু হলো মার। ফেরিওয়ালা যত বলে, “আমি নিইনি “তত প্রহার এসে জোটে। কেউ কেউ বলে ওঠে,”ফোন পাচার হয়ে গেছে”। মারতে মারতে রক্তাক্ত হয়ে পড়লো। তবু নিস্তার নেই। পুলিশ এল, এম্বুলেন্স এল, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো ফেরিওয়ালা কে। যুদ্ধ সেরে বীরপুঙ্গবের মতো কর্তা ঢুকলেন ঘরে। দেখছেন তার বছর তিনেকের শিশুপুত্রের পাশে ফোন, তখনো চলছে কার্টুন, দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। স্বীকার করা যাবে না ফোনটা ঘরে ছিল, থানা থেকে ফোন এসেছে, যেতে হবে। তাড়াতাড়ি টি শার্টটা গলিয়ে নিল। বড়ো বাবু ফেরিওয়ালার স্ত্রীকে ডেকে এনেছেন, তার কোলেও তিন বছরের শিশু, ঠিক তার ছেলের মতো। একদৃষ্টে চেয়ে ছিলেন শিশুটির দিকে। সম্বিত ফিরলো বড়ো বাবুর কথায়। মাল্টি অরগ্যান ফেইলিওর। মারা গেছে ফেরিওয়ালা। অভিযোগ লিখিত দিতে হবে, হয়তো তদন্ত হবে। কিন্তু তার এই মানসিক যন্ত্রণার কি হবে? শিশুটির নিরপরাধ বাবাকে তিনি ফেরাবেন কি করে? দুটি প্রাণ আজ নিরাশ্রয়। ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরলেন। একটু ভুলে কতকিছু তছনছ হয়ে গেল।