Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মনের অসুখ || Kajal Mukherjee

মনের অসুখ || Kajal Mukherjee

লোকে বলে পাগলের বাড়ি!

চার ছেলে, মেয়ে নেই ,বাবা-মা অনেকদিন হল গত হয়েছেন।

চার ছেলেই কমবেশি মানসিক ব্যধিগ্রস্ত।

দুই ছেলে মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থাতেই মারা গেছে। একজন বাড়িতে আর একজন মানসিক হাসপাতালে। কলকাতা শহরের বুকে পাঁচ কাঠা জমির উপরে বাড়ি। বাড়ি না বলে ,এখন অবশ্য জঙ্গল বলাই ভালো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একতলা বাড়িটা আর বাড়িটার চারিদিক ভরে গেছে বট ,অশ্বত্থ আর বুনো গাছে ভরে গেছে। বাড়ির মালিক দুই ভাইয়ের গালেও দাড়ি গোঁফের জঙ্গল হয়ে আছে । অত্যন্ত নোংরা দুর্গন্ধময় জামাকাপড় করে থাকে তারা, পাড়ার বাচ্চারা ঢিল ছোড়ে,তাতে তাদের বিশেষ ভ্রুক্ষেপ নেই অবশ্য ,মাঝে মাঝে তেড়ে যায় তাদের দিকে এই পর্যন্ত। এই এলাকা এবং এলাকার বাইরের প্রোমোটার দের অনেকদিন ধরেই বিশেষ নজর বাড়িটার দিকে, নানাভাবে বুঝিয়েছে, অনেক অফার দিয়েছে কিন্তু ওই দুই ভাই বিশেষ করে ছোটো ভাইটার এক কথা গাছপালার মধ্যে থাকবে তারা ,ফ্ল্যাট করবে না। ওই গাছপালার জন্য বাড়িতে দিনের বেলাতেও আলো ঢোকেনা, কিন্তু কে শোনে কার কথা? বাবা সরকারি চাকরি করতেন, ফ্যামিলি পেনশনের টাকা আর কিছু জমানো টাকার সুদে চলে তাদের , এটাই অনুমান কারণ তারা বিশেষ কারুর সাথে কথা বলে না আর তাদের বাড়ির কাছাকাছি কারোকে ঘেঁষতেও দেয় না। ওরকম নোংরা পুতিগন্ধময় পরিবেশের জন্য কেউ ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতেও চায়না।

তবুও পাড়ার লোকেরা অনেকেই অনেক চেষ্টা করেছিল, তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে,সবার চেষ্টাই বিফলে গেছে। ওদের আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ কেউ আছে বলে মনে হয় না।

এর মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় ওই বাড়ি থেকে ভীষণ কান্নার রোল শুনে আশেপাশের লোকেরা গিয়ে জানল যে ওই বাড়ির ছোট ছেলেটা মারা গেছে। তার ওপরের ভাইটার বুকফাটা আর্তনাদে আর কান্নায় মানসিক রোগগ্রস্ত মানুষটার মৃত্যুতেও অনেকেই চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারল না। এলাকার ক্লাবের শববাহী গাড়িতে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। শেষ যাত্রায় সামিল হল মৃতের দাদা আর পাড়ার দুই একজন লোক।

একমাত্র জীবিত ছোটো ভাইয়ের মৃত্যুশোকেই হোক আর সম্পূর্ণ একলা হয়ে যাওয়ার জন্যই হোক ,এরপর ওই বাড়ির একমাত্র জীবিত ছেলেটার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেল। কিছুটা স্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ্য করা গেল, যদিও এতদিনের মানসিক অসুস্থতা এত সহজে সারার নয়, তবুও এটাই তো ভালো লক্ষণ, যে ছেলেটা আবার সমাজের ,জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে চাইছে। শারীরিক অসুস্থতাকে আমরা বুঝতে পারলেও, অনেকেই মানসিক অসুস্থতাকে বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না । কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার যদিও বা পুরোপুরি বা অনেকাংশেই উপশম হয় মানসিক অসুস্থতা বোধ হয় সেইভাবে উপশম হয় না। এর জন্য দরকার দীর্ঘস্থায়ী সঠিক চিকিৎসা মনোভাব মমত্ববোধ আর সেবা, কিন্তু এতকিছু তো নানা কারণে সব মানুষই ব্যতিগ্রস্থ মানুষের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। মানসিক অসুস্থতার সঠিক রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা শুরু করতেই অনেক সময় লেগে যায়, এছাড়াও আমাদের সমাজে মানসিক ব্যাধিগ্রস্থদের অনেকেই পাগল বলে চিহ্নিত করে তাদের অবহেলা করে, এটি মানসিক রোগ তো সারেই না বরং পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ে। পাড়ার ক্লাবের মধ্যস্থতায় এই এলাকার নাম করা প্রোমোটারের প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত রাজি হল ছেলেটা। ওই জমিতে ফ্ল্যাট হবে, ভালো ফ্ল্যাট পাবে ,বেশ কিছু টাকা পাবে । অন্তত সুস্থ স্বাভাবিকভাবে আর ভালোভাবে বাঁচতে পারবে এই ছেলেটা,এটা জেনে আর এলাকার পরিবেশের সুস্থতার কথা ভেবে পাড়ার লোকজন একটু স্বস্তি পেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *