শহরের মনের কথা
এই একবিংশ শতাব্দীর যুগে শহর কলকাতায় অসংখ্য মানুষ বসবাস করেন। রাজপথে বহু মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে কল্লোলিনী কলকাতা ! কিন্তু বহু শতাব্দী আগে প্রাচীন এই কলকাতায় কিন্তু তেমন একটা জনবসতি গড়ে ওঠে নি , যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন ছিল না। বস্তুতঃ এখানকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে কলকাতা তখন পরিচিত ছিল না। আর এখন তো প্রচার মাধ্যমের যাবতীয় আলো শুষে নিয়ে খবরে ভেসে থাকে বেহালা ! হ্যাঁ, এই বেহালাতেই বহু কৃতী ও গুণীজন আজও সসম্মানে বসবাস করেন। কিন্তু এই বেহালার নামকরণ কিভাবে হয়েছিল ? তা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কয়েক শতাব্দী আগে! দ্বাদশ শতাব্দীতে বাংলায় তখন পাল – সেন যুগ চলছে। আর তারপরেই বাংলায় মনসামঙ্গল কাব্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে উত্তোরত্তর। বিষাক্ত সাপের ছোবলে লখিন্দরের মৃত্যু ঘটে ! আর বেহুলা সেই মৃতদেহ নিয়ে আদিগঙ্গা দিয়ে একটি নৌকায় চড়ে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রসঙ্গত, তদানীন্তন সময়ে কিন্তু বর্তমানের হুগলী নদী খুবই সঙ্কীর্ণ ছিল। বরং সেইসময় আদিগঙ্গা দুকূল প্লাবিত করে আপন বেগে বয়ে চলতো ! যাইহোক বেহুলা নদীপথে যেতে যেতে সুন্দরবনের একটি ঘাটে থামেন। যার নাম বেহুলার ঘাট নামে পরিচিতি লাভ করে । পরবর্তী সময়ে সেই বেহুলা থেকেই বেহালার নামকরণ হয়েছে । তবে তদানীন্তন সময়ে কিন্তু সেই বেহালা সুন্দরবনের একটি অংশ ছিল। আর বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গ্রাম নিয়ে সেই বেহালার অস্তিত্ব বজায় ছিল, যেমন ধরুন, বাজারবেহালা, বোড়শে বেহালা এবং সরশুনোবেহালা ! তবে আর যাই হোক, সেই সময়ে বেহালা কিন্তু শ্বাপদসঙ্কুল এলাকা ছিল। তবে অপর একটি মতে তদানীন্তন সময়ে বেহালার শাসক ছিলেন ধনঞ্জয় মিত্র। তিনি আবার দেবী চন্ডীর উপাসক ছিলেন। আর দেবী চন্ডীর অপর নাম বহুলা । সেই থেকেই নাকি বেহালার নামকরণ হয়েছে ! অবাক পৃথিবী ! তবে গ্রিক ভূতত্ত্ববিদ টলেমির লেখায় ভারতের মানচিত্রে সলসুনো উপত্যকার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সলসুনো থেকেই নাকি আজকের এই ব্যস্ত সরশুনা ।।।