নিরুদ্দেশে পাড়ি
সকালে খবরের কাগজ দিতে এসে দীপক’দা বললো গৌরী কাকিমা মারা গেছে, পাড়ায় পুলিশ এসেছে। আমি বললাম পুলিশ কেন? দীপক’দা বললো, শুনছি খুন করা হয়েছে। সেকি, ছুটলাম ঐ বাড়ি।
দেখি কাকিমা’র বাবা-মা, ভাই চেঁচিয়ে বলছে , “রোজ রাত্রে জামাই নেশা করে এসে মেয়েটাকে মারতো। সংসারে টাকা পয়সা দেয়না। অর্ধেক দিন ছেলেমেয়ে নিয়ে উপোসী থাকতো মেয়ে। বাধ্য হয়ে রান্নার কাজ ধরে। কাল রাতে মেরেই ফেললো মেয়েটাকে স্যার ওকে ছাড়বেন না। কঠিন শাস্তি দেবেন”।
পুলিশ পাড়ার লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে,কেউ কিছু জানে কিনা!
সকলেরই এক কথা ; গৌরী কাকিমা ভীষণ ভালো। পাড়ার তিন বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার টিকিয়ে রেখেছে। ঝন্টু কাকু নেশা করেই পড়ে থাকে, কাকিমা’কে মারতো।
যদিও কাল রাতে কোনো ঝগড়ার আওয়াজ শুনিনি।
শাশুড়ি বলে, খুন করবার প্ল্যান ছিল তাই অশান্তি করেনি।
ছেলেমেয়ের কাছে পুলিশ জানতে চায় আগের দিন রাত্রে বাবা – মায়ের ঝামেলা হয়েছে কিনা! গতকাল রাতে বাবা কখন মা’কে খুন করেছে তোমরা দেখেছো? তারা উত্তর দেয়,” বাবা অনেক রাতে আসে। কোনো অশান্তি করেনি, চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
মা’তো আমাদের সঙ্গেই শুয়েছিল, অন্যদিন যেমন ভোর অন্ধকারে উঠে বাড়ির কাজ করে আজও তেমন উঠেছিল! তারপর জানিনা।
পুলিশ ঝন্টুকে থানায় নিয়ে যায় আর গৌরীর লাশ পোস্টমর্টেম-এ পাঠায়। ঝন্টুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য মামলা রুজু হয়।
এদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায় বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছে।
ঝন্টু বেকসুর খালাস পায়।
বাড়ি ফিরে দেখে তালা বন্ধ। লাশ দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভাবে ছেলেমেয়ে নিশ্চয় মামার বাড়ি আছে। পরদিন তাদের আনতে শ্বশুর বাড়ি যায়। কিন্তু শাশুড়ি দরজা খুললো না। ছেলেমেয়েও দেখা করতে এলোনা।
ঝন্টু বুঝলো সংসারে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। মনকষ্টে দিলো তাই নিরুদ্দেশে পাড়ি।