পিকনিকে সেদিন
শীতের বেলা মানেই পিকনিকের ঘনঘটা। মিঠেল রোদ্দুরে আনন্দের চড়ুইভাতি।সঙ্গে নানান খেলা আর মনের মতো খাওয়া দাওয়া। এবার আমরা পানাগড়ের অদূরে দামোদর ব্যারেজেরই একটা শাখা লগ গেটের কাছে রনডিহা অঞ্চলে পিকনিক করতে যাই।
কতিপয় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা।
ছোট্ট টিলার উপর আমাদের পিকনিক স্পট।
নীচে পাথুরে জমির উপর দিয়ে জলের স্রোত বয়ে চলেছে। খুবই মনোরম দৃশ্য চারিদিকে। দুজন স্থানীয় মহিলাকে রাখা হলো কাজে সাহায্যের জন্য।
আরও দুটো ফ্যামিলি এসেছে পিকনিকে। পরস্পর আলাপে জমজমাট সৌহার্দ্য। ক্ষণিকের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নিচে জলে নেমে সকলের মজা শুরু।ছোট বড় প্রচুর মাছ জলের স্রোতে লাফাতে লাফাতে ভেসে যাচ্ছে। সবাই ধরবার খুশিতে মেতে। কেউ আবার দূরে গভীর জলে জেলে নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একপাশে বনানী, বড় গাছের ঘন জঙ্গল। অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরা পিকনিক স্পট। প্রাতরাশ সেরে যে যার মত খেলছে, ঘুরছে, মজা করছে।
বেশিরভাগ মানুষই জলে মাছ ধরছে, টাটকা মাছ ভাজা খাবে বলে।
আমরা স্বামী -স্ত্রী দুজন জঙ্গলের ধারের রাস্তায় হেঁটে দূরে অপর একটি জলাধারের এসে দাঁড়ালাম।
হঠাৎ জঙ্গলে শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে দুজনেই অবাক। এই নির্জনে কোন্ শিশু কাঁদছে! আমার আবার ভূতের ভয়। বলি ফিরে চলো, ভূত পেত্নির জায়গায় এসেছি মনে হয়। ভীষণ ভয় করছে।ও বললো মামদাবাজি! দিনের বেলায় ভূত! চলো দেখি আজ ভূত বাবাজিকে দেখব। বলেই রাস্তা থেকে জঙ্গলে নেমে পড়লো। অগত্যা আমিও হাত ধরে সঙ্গে চললাম কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে । কিছুদূর যেতেই দেখি স্থানীয় একটি ছেলের কোলে বাচ্চা কাঁদছে। তাড়াতাড়ি কাছে গেলাম। আরে! এ তো আমাদের পাশে যারা পিকনিকে এসেছে তাদের বাচ্চা মেয়েটা!
মুহূর্তে খপ করে ছেলেটির হাত ধরলাম। এই তুমি একে এখানে নিয়ে এসেছো কেন? আমার হাসব্যান্ড বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে নিল। ছেলেটি থতমত খেয়ে বলল ,” আমাকে ওরা দেখতে বলেছে। ও কাঁদছে বলে ওকে নিয়ে ঘুরছি।”
কি বলছো তুমি, ইয়ার্কি ! বলো কি উদ্দেশ্য তোমার? চলো ওর বাবা মায়ের কাছে। যেইনা বলেছি ছেলেটি এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে উধাও। বাচ্চাটাকে নিয়ে এলাম পিকনিক স্পটে।
এসে দেখি বাবা মা মাছ ধরায় ব্যস্ত। মেয়েকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে নেমেছে জলে। যদিও রান্নার জায়গার কাছাকাছি গাড়িটি রাখা, দরজাও খোলা। বিপদের ভাবনা আসেনি ওদের।
আমরা ঘটনার কথা বললে , সকলের চক্ষু চড়কগাছ। আদিবাসী কাজের দুই মহিলা বললো “ইরকম তো কোনদিন ঘটে নাই। কতই লোকই তো যায়, ছেলেটোকে না দিখলে বইলবো কি কইরে”।
সবার মুখে এক কথা, ভগবান বাঁচিয়েছেন, নাহলে কি ঘটনাই ঘটে যেত! বাচ্চটির মা- বাবা পরস্পরকে দোষারোপ করে রীতিমত ঝগড়া, প্রকাশ্য মনোমালিন্যের অবস্থা। মা সন্তানকে আদর করছে আর অঝোরে কাঁদছে।
নিমেষে পিকনিকের মজা পন্ড। এলোমেলো পরিবেশ। বেলা শেষের মুখে। কোনোরকমে খাওয়া দাওয়া সেরে , বাড়তি জিনিস আদিবাসীদের দান করে রান্নার সরঞ্জাম ধুয়ে গাড়ি বন্দী করে ফিরে এলাম।