স্বপ্ন অভিভাবকের মতো আমার জীবনে তার
নিয়ন্ত্রণ রাখে প্রায় সকল ঋতুতে। হেঁটে যাই
অন্ধকারে, আদিম জলের গান শুনি, স্তব্ধতার
বুক-চেরা, পাথরের নানান গড়ন দেখে চোখ
শিল্পী হয় এবং পাথরে বসে গাঢ় স্পর্শ পাই
আত্মীয়ের, মনে পড়ে দূর কথা, ভুলি শত শোক।
স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে এসে কে আমাকে ডাকে
ছায়াচ্ছন্ন কণ্ঠস্বরে? সুপ্রাচীন লতাগুল্ম ঢাকা
অবয়ব তার, ধু-ধু মাঠে, পাহাড়ে নদীর বাঁকে
কিংবা কোনো লোকালয়ে কখনো দেখিনি তাকে। মনে
হয়, ছিল বুঝি তার পরনে বিবর্ণ আংরাখা,
হয়তো তার সঙ্গে হয়েছিল দেখা অখ্যাত স্টেশনে।
এমনও তো হয় বসে আছি দপ্তরের কামরায়
বড় একা, স্মৃতিক্লান্ত-হঠাৎ কে একজন এসে
ঢুকে পড়ে এত্তেলাবিহীন আর দু’হাত বাড়ায়
সোজাসুজি আমার দিকেই, কী-যে বলে অনুরাগে
বুঝি না কিছুই, চেয়ে থাকি অপলক, স্বপ্নাবেশে
ভাবি, গনিষ্ঠতা ছিল বুঝি অনেক শতাব্দি আগে।
আমি কি নিদ্রার আকর্ষণে দপ্তরের ভেতরে দপ্তরে
নিভৃতে গিয়েছি চলে? স্বপ্নের গহন পথ বেয়ে
এসেছিল সে কি তবে এ ধূসর ঘরে স্তরে স্তরে
পদচ্ছাপ রেখে, প্রাণে জাগিয়ে অতীত শিহরণ?
প্রত্যহ যা দেখি তাতে কী সুদূর মায়া আসে ছেয়ে
আজও জানি না তো নিদ্রা কাকে বলে, কাকে জাগরণ?