Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দুখিনী সাঁথিয়া || Shamsur Rahman

দুখিনী সাঁথিয়া || Shamsur Rahman

মধ্য মার্চ নগরবাড়ির ঘাটে কোকোকোলা, সাদা জিপে চড়ে
পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেলাম দুখিনী সাঁথিয়া।
থানার পাশেই ডাকবাংলো,
মন-মরা, কেমন নিষ্প্রভ,-কিন্তু লহমায়
মানবিক আভা বিচ্ছুরণে, হাসি-গল্পে যেন আমি
একটি উজ্জ্বল দ্বীপে ছুটি পেয়ে যাই গোধূলি বেলায়।

কাজলা দিদির মতো সন্ধ্যা আসে আর
চকিতে ঘোমটা টেনে নিত্যকার লোডশেডিং এবং
হ্যাজাক ছাড়াল আলো মঞ্চে, নিমেষে রবীন্দ্রনাথ
নজরুল ইসলাম ব্যাপ্ত মীড়ে মীড়ে
সাঁথিয়ার ব্যাকুল হৃদয়ে। দীপকের কণ্ঠস্বরে
আধুনিক কবি ঠাঁই পান, চকোর কবিতা পড়ে, সুর
মাটি-ঘাস, আল ছুঁয়ে বিলে পৌঁছে যায়। রাত বাড়ে,
ভাটা পড়ে অলৌকিক কলরবে। স্তব্ধতার
মধ্য দিয়ে হেঁটে ফিরে আসি ডাকবাংলোয়। রাত
দেড়টায় শুতে যাই, কিছুতে আসে না ঘুম, চোখ পুড়ে যায়।

জানালার বাইরে আঁধারে কার চোখ জ্বলে? কোত্থেকে অঙ্গার
এলো এত রাতে? ঝোপ থেকে
মানুষখেকোর গন্ধ ভেসে আসে যেন,
আই ইজিচেয়ারে নিশ্চুপ
গা এলিয়ে দিয়েছেন জিম করবেট। সহচর
রাইফেল পাশে স্তব্ধ প্রহর পোহায়।
বিনিদ্র পাখির ডানা ঝাড়ার শব্দের মতো একটি আওয়াজ
ভেসে আসে, তাকে মনে পড়ে। কাকে? একটি দুপুর
এবং একটি সন্ধ্যা আমার অধীর অঞ্জলিতে
জমা রেখে যে এখন জিম্মি অন্য কোনোখানে, তাকে।
কোকিলের ডাকে ঘুম ভাঙে। কতকাল
শুনিনি কোকিলকণ্ঠ। রোদ এসে শিমুলের রঙে
রাঙিয়ে দিয়েছে ডাকবাংলোকে। বাসি
মুখ ধুই, ফিরে যাব। একটু পরেই
আসবেন ওরা-অধ্যাপক, ছাত্র, সাংবাদিক
কেউ কেউ, সাধারণ মানুষ কজন, সর্বোপরি
কৌতূহলী বালক-বালিকা। ফিরে যাব,
ক্যামেরায় স্নিগ্ধ গাছপালাসহ স্মৃতিময় ছবি, ক্লিক, কবি
এত তাড়া কিসের? বলিনি গাড়ি ঠিক
সময়েই এসে যাবে? কোনো দিন ফের দেখা হবে।

ঈশ্বরদীতে ধরব প্লেন। কিছু উদ্ভিদের স্পর্শ, কিছু
মেঠো ঘ্রাণ কতিপয় মুখ, গল্পে-গানে ঝলমলে,
হৃদয়ের শেকড়ে
থাকবে জড়িয়ে। সাঁথিয়ার প্রতি ওড়াব রুমাল যথারীতি।
আবার শহুরে আড্ডা, টাইপরাইটারের দ্রুত
চটপটে শব্দে মতো অস্থির ব্যস্ততা, অতিকায়
মৌচাকের গুঞ্জরণ, হেনরি মিলার সাক্ষী, এয়ারকুলার
দুঃস্বপ্ন ছড়িয়ে দেবে বহুতল দালানের আনাচে-কানাচে।
কখনোসখনো
হৃদয়ে কোকিল হয়ে ডেকে যাবে দুখিনী সাঁথিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *