Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আরাগঁ তোমার কাছে || Shamsur Rahman

আরাগঁ তোমার কাছে || Shamsur Rahman

আরাগঁ তোমার কাছে কোনোদিন পরিণামহীন
এই পংক্তিমালা
জানিনা পৌঁছবে কিনা, তবু
তোমারই উদ্দেশে এই শব্দাবলী উড়ে যাক পেরিয়ে পাহাড়
অনেক পুরনো হ্রদ বনরাজি এবং প্রান্তর।
আমার এলসা আজ যৌবনের মধ্যদিনে একা
জীবনকে ফুলের একটি তোড়া ভেবে টেবে আর
গানের গুঞ্জনে ভরে কোথায় আয়নার সামনে চুল আঁচড়ায়,
দীর্ঘ কালো চুল, পা দোলায় কোন সে চত্বরে ব’সে অপরাহ্নে
কিংবা পড়ে ম্লান মলাটের কবিতার বই কিংবা কোনো
পাখির বাসার দিকে চোখ রেখে কী-যে দ্যাখে, ভাবে
আমি তা’ জানিনা, শুধু তার স্বপ্নের ফোঁটার মতো
গাঢ় দু’টি আর সুরাইয়ের গ্রীবার মতন
গ্রীবা মনে পড়ে।

আরাগঁ আমার চোখে ইদানীং চালশে
এবং আমার নৌকো নোঙরবিহীন, তবু দেখি কম্পমান
একটি মাস্তুল দূরে, কেমন সোনালি।
অস্থিচর্মসার মাল্লা কবে ভুলে গেছে গান, কারো কারো
মাথায় অসুখ, ওরা বিড় বিড় ক’রে আওড়ায়
একটি অদ্ভুত ভাষা, মাঝে-মধ্যে দূর হ দূর ব’লে ঘুমের ভেতরে
কাদের তাড়ায় যেন, আমি শুধু দেখি
একটি মাস্তুল দূরে, কেমন সোনালি।
তরমুজ ক্ষেতের রৌদ্রে নগ্ন পদ সে থাকে দাঁড়িয়ে-
আমার কবিতা।
কখনো আমাকে ডেকে নিয়ে যায় বনবাদাড়ে যেখানে
সাপের সংগম দ্যাখে স্তম্ভিত হুতোম প্যাঁচা, যেখানে অজস্র
স্বপ্নের রঙের মতো ঘোড়া খুরে খুরে ছিন্ন ভিন্ন করে ঘাস ফুল
কখনো আমাকে ডাকে শহরতলীর বর্ষাগাঢ় বাসস্টপে
কখনো বা সিনেমার জনময়তায়,
আমার স্তিমিত জন্মস্থানে

এবং আমার ঘরে খেলাচ্ছলে আঙুলে ঘোরায়
একটি রুপালি চাবি, বাদামি টেবিল ক্লথ খোঁটে
চকচকে নখ দিয়ে-আমার কবিতা।
আবার কখনো তার সুপ্রাচীন তরবারির মতন বাহু
অত্যন্ত বিষণ্ন মেঘ, তার দুটি চোখ
ভয়ংকর অগ্নিদগ্ধ তৃণভূমি হয়।

যে-বাড়ি আমার নয়, অথচ যেখানে আমি থাকি
তার দরোজায়
কে যেন লিখেছে নাম কৃষ্ণাক্ষরে-অসুস্থ ঈগল।
পাড়াপড়শিরা বলে, মাঝে-মধ্যে মধ্যরাতে জীর্ণ
বাড়িটার ছাদ আর প্রাচীন দেয়াল থেকে তীব্র ভেসে আসে
নিদ্রাছুট রোগা ঈগলের গান, কী বিষণ্ণ-গর্বিত গান।
আরাগঁ তোমার মতো আমিও একদা
শক্রুপরিবৃত শহরের হৃদয়ে স্পন্দিত হ’য়ে
লিখেছি কবিতা রুদ্ধশ্বাস ঘরে মৃত্যুর ছায়ায়
আর স্বাধীনতার রক্তাক্ত পথে দিয়েছি বিছিয়ে কত রক্তিম গোলাপ।

আরাগঁ তোমার কাছে লিখছি সে দেশ থেকে, যেখানে সুর্যের
চুম্বনে ফসল পাকে, রাঙা হয় গুচ্ছ গুচ্ছ ফল,
সজীব মুখের ত্বক রুটির মতোই ঝলসে যায়,
যেখানে বিশদ খরা, কখনো বা ভীষণ নির্দয় বানভাসি,
যেখানে শহুরে লোক, গ্রাম্যজন অনেকেই শাদাসিধে,
প্রায় বেচারাই, বলা যায়; আমাদের হালচাল
সাধারণ, চাল-চুলো অনেকের নেই।
আমাদের মাস ফুরোবার অনেক আগেই হাঁড়ি
মড়ার খুলির মতো ফাঁকা হ’য়ে যায়, দীর্ঘ দূরন্ত বর্ষায়
গর্তময় জুতো পায়ে পথ চলি, অনেকের জুতো নেই।

ধুতামি জানিনা, মোটামুটি
শাদাসিধে লোকজন আশেপাশে চরকি ঘোরে
এবং দু’মুঠো মোটা চালের ডালের জন্যে ক্ষুধার্ত আমরা।
ক্ষুধার্ত সত্তার পূর্ণ সূর্যোদয়, ভালোবাসা নান্মী লাল
গোলাপের জন্যে

আরাগঁ তোমার কাছে লিখছি সে দেশ থেকে আজ,
যেখানে দানেশমন্দ ব’সে থাকে অন্ধকার গৃহকোণে বুরবক সেজে
জরাগ্রস্ত মনে, অবসাদ-কবলিত কখনো তাড়ায় আস্তে
অস্তিত্বের পচা মাংসে উপবিষ্ট মাছি।
আরাগঁ তবুও জ্বলে গ্রীষ্মে কি শীতে
আমাদের স্বপ্ন জ্বলে খনি-শ্রমিকের ল্যাম্পের মতো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *