Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রাত্যহিক || Shamsur Rahman

প্রাত্যহিক || Shamsur Rahman

যথারীতি বিষম নিয়মপরায়ণ
কাক চেরে ঘুম ভোরে। শয্যাত্যাগী আমি
দাঁত মাজি, করি পায়চারি, মাঝে-মধ্যে
আওড়াই তর্জমায় এলিয়টি পঙ্‌ক্তি-
এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস। প্রাতরাশ
যৎসামান্য, চা আর বাকরখানির গন্ধে
অভ্যস্ত গার্হস্থ্য দিন। সংবাদপত্রের মিথ্যা গেলি
একরাশ, তাকাই কখনো
আকাশের দিকে। অকস্মাৎ জঙ্গি জেট
ছিঁড়ে খুঁড়ে যায় নীলিমাকে।

নিরানন্দ ডালভাত নাকে মুখে গুঁজে
মন দিই আপিস যাত্রায়
বেলা দশটায়।
মুখের প্রতিটি খাঁজে সন্ত্রাস কাঁকড়া হয়ে আছে।
পথে দেখি,
ধাঁ করে একটি ট্রাক যাচ্ছে ছুটে, আরোহী ক’জন
চোখ-বাঁধা, হাত-বাঁধা আবছা মানুষ,
পাশে রাইফেলধারী পাঞ্জাবি সৈনিক।

ছাত্র নই, মুক্তিসেনা নই কোনো, তবু
হঠাৎ হ্যান্ডস আপ বলে
পশ্চিমা জোয়ান আসে তেড়ে
স্টেনগান হাতে আর প্রশ্ন দেয় ছুড়ে ঘাড় ধরে-
বাঙালি হো তুমি। আমি রুদ্ধবাক, কি দেব জবাব?

জ্যোতির্ময় রৌদ্রালোকে বীরদর্পী সেনা
নিমেষেই হয়ে যায় লুটেরা, তস্কর।
খুইয়ে সামান্য টাকা কড়ি,
শ্বশুর প্রদত্ত হাতঘড়ি কোনোমতে
প্রাণপক্ষী নিয়ে ফিরি আপিস-কন্দরে।

এদিকে বিষম
পানাসক্ত প্রেসিডেন্ট-ইনিও সৈনিক-
দিচ্ছেন ভাষণ
বেতার টেলিভিশনে, ঢুলু ঢুলু গলায় কেমন

গাইছেন গণ-
হত্যার সাফাই।
বিদেশী সংবাদদাতাগণ মিছেমিছি করছেন বাড়াবাড়ি
অর্থাৎ তিলকে তাল। লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র লোককে
নাকি তাঁর বীর সৈনিকেরা
কখনো করেনি হত্যা, পোড়ায়নি শহর ও গ্রাম।
সব ঝুট হ্যায়, সব ফালতু গুজব।
সত্যের মৌরসীপাট্রা একা তাঁরই। একেই তো বলে
কসাইখানার হেকমত। মাইরি হুজুর বটে
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির।

দুনিয়ার সব শৃঙ্খলিত কৃষক মজুর শোনো,
সর্বহারা নিধনের জন্যে অবিরাম
আসছে বারুদ বোমা স্বৈরাচারী শাসকের
হাতে,
কখনো-বা, বলিহারি যাই, গুঁড়া দুধ।
খাসা কূটনীতি,
চীনা ও মার্কিন কালোরাতি।
বড় আটপৌরে এ জীবন,
প্রশংসা অথবা নিন্দা কিছুই জোটে না
এ পোড়া কপালে।
সত্যের বলাৎকার দেখে, নিরপরাধের হত্যা
দেখেও কিছুতে মুখ পারি না খুলতে।
বুটের তলায় পিষ্ট সারাদেশ, বেয়নেটবিদ্ধ
যাচ্ছে বয়ে রক্তস্রোতে, কত যে মায়ের অশ্রুধারা।

পাড়ায় পাড়ায় খাল কেটে
কুমির আনছে কেউ কেউ। রাত হলে,
এমনকি দিনদুপুরেই
কেবলি দৌরাত্ম্য বাড়ে রাজাকার, পুলিশ এবং
সৈনিকের। ধরপাকড়ের নেই শেষ। মাঝে-মাঝে
মধ্য রাতে নারীর চিৎকারে ভাঙে ঘুম,
তাকাই বিহ্বলা গৃহিণীর দিকে। ভাবি,
জান দিয়ে মান রাখা যাবে তা আখের?
তুমুল গাইছে গুণ কেউ কেউ কুণ্ঠাহীন খুনি
সরকারের, কেউ কেউ ইসলামী বুলি ঝেড়ে তোফা
বুলবুল হতে চায় মৃতের বাগানে।
কেউবা জমায় দোস্তি নিবিড় মস্তিতে
ভ্রাতৃঘাতকের সাথে। গদগদে দালাল,
বখাটে যুবক আর ভাড়াটে গুণ্ডারা
রটাচ্ছে শান্তির বাণী লাঠিসোটা নিয়ে।
অলিতে গলিতে দলে দলে
মোহাম্মদী বেগ ঘোরে, ঝলসিত নাঙা তলোয়ার।

নেপথ্যে মীরজাফর বঙ্কিম গোঁফের নিচে মুচকি হাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *