স্কুটার চালানো কাজ। মিটারের ওঠা-নামা খিস্তি-
খেউড়, বচসা, দৌড় ইত্যাদি নিয়েই বেলা যায়।
নিত্য ওঠে কতজন আমার স্কুটারে, ক্ষণিকের
অতিথি সবাই। ভাড়া চুকিয়ে যে যার ঠিকানায়
নেমে পড়ে-পার্কে, মাঠে, সিনেমায়, রাস্তায়, দপ্তরে
কেউবা পাড়ায় কেউ বেপাড়ায়। কারুর গন্তব্য
নিয়ে মাথা ঘামাই না কোনো দিন। পকেট উজ্জ্বল
হলেই আমার দিন আহ্লাদিত, রাত্রি উছ্বসিত।
কখনোবা একেকটি মুখ খুব মনে গেঁথে যায়,
কিছুতেই পারি না ভুলতে। রগরগে ফিল্মে হর-
হামেশা যেসব মেয়ে নাচে গায় বাগানে পাহাড়ে
রুপালি ঝর্নার ধারে, এমনকি গোরস্থানে-যেন
তাদের মতোই কেউ আমার স্কুটারে ফিসফিস
কথা বলে উদ্বেল সঙ্গীর কাঁধে ঢ’লে। হাবুডুবু
খাচ্ছে প্রেমে হয়তো দুজন। সত্যি প্রেম? নাকি শুধু
বিছানায় একসাথে ঘুমোনোর জন্যই এমন
ঢলাঢলি, এত খুনসুটি? বাদ দিন, আমি ছাই
কী বুঝি প্রেমের? ইতরামি, খচরামি, মাজাকির
সমাহার এ জীবন। কখনো বিবির পান-রাঙা
ঠোঁট রক্তে জাগায় বলক, ছোট্র মেয়েটার হাসি
আমার ক্লান্তির কালি করে সাফ, দোস্তের দরাজ
দিল বুকে কেমন ভরসা দেয়, ফিল্মি গান গাই।
স্কুটার চালানো কাজ। শালা, দুনিয়াটা নাট আর
বল্টুর সংযুক্ত কেরামতি। কোনো দিন একজন
বুড়ো-সুড়ো যাত্রী, দেখি, ভীষণ চিন্তিত, জীর্ণ-প্রায়
জুতোর সোলের মতো গালের খোঁচা খোঁচা পাকা দাঁড়ি,
চশমাটা নাকের ডগায়, তার ছোঁড়া পাঞ্জাবিটা
চোখে পড়তেই ফের ঘরের বেড়ার কথা মনে
হল; বিড়বিড় করে লাঠি হাতে নামলেন তিনি
কেমন অন্যমনস্ক। একদিন একটি মহিলা,
কান্না-ভেজা চোখ তার, হাত নেড়ে ডেকেও স্কুটারে
ওঠেননি; বিরক্তিতে পাড়লাম গাল। বুঝি তার
কনস্কামনার ভীরু হরিণ হারিয়ে গেছে এই
শহরের ভিড়ে; মাঝে-মাঝে বিছানায় শুয়ে ভাবি-
নানা মুখ ভিড় করে আসে চোখের সম্মুখে, যেন
মেলায় ঘুরছি আমি। ওরাও ঘুরছে সর্বক্ষণ
ক্ষণিক অতিথি সব, যদি পারতাম সবাইকে
সব সমাধানের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কোনো দিন।