সমুদ্রে যাব না আর কোনো দিন, সমুদ্রে হাঙর,
ঘূর্ণি গরকি সেই রাক্ষুসীর পেটে আমার ডাঙর
ছেলেমেয়ে; বউ আর জোয়ান ভাইটা গেছে, শুধু
আমি একা প’ড়ে আছি। মাথার ভেতর কী যে ধু-ধু
করছে ক’দিন ধরে। এদিক ওদিক ছুটি, ভিটেমাটি
কোথাও পাই না খুঁজে। চারদিকে শূন্যতার ঘাঁটি।
সেই ছেলেবেলা থেকে জলের দিকেই ছিল মন;
জলে জলে গেছে বেলা, মুগ্ধতায় যখন তখন
ছুঁয়েছি সাগর-জল আর আয় মাছ ধরি আয়
বলে ভাসিয়েছি ডিঙি নদীতে রঙিলা দরিয়ায়।
এই লোনা সমুন্দুর ছেড়ে আমি কোথাও যাইনি,
অথচ আমারই সব নিল কেড়ে মাতাল ডাইনী।
এসব বলছি কী-যে! না, না, ঘর-দোর সবই আছে।
এই তো ছেলেটা দৌড়ে উঠোন পেরুল, লম্বা গাছে
ডাকছে কুটুম পাখি, বউ রাঁধে, মেয়েটা তেঁতুল
খাচ্ছে আর ভাই জাল দিচ্ছে মেলে। হায়, শুধু ভুল
হয়ে যায়, যেন ফের সামুদ্রিক ঘন কুয়াশায়
হারিয়ে ফেলছি সব, মাথা কেমন গুলিয়ে যায়
আচ্ছা, আপনারা কেউ দয়া করে আমার সঠিক
নামটি দেবেন বলে? কেবলি ঘুরছি দিগ্ধিদিক,
পড়ে না নিজেরই নাম মনে। নিজেকে কী নামে ডাকি?
আমি কি রসিক দাস? বিশু? জগদিন্দ্র মালো? নাকি
আলী মৃধা? কতো না বয়স হল? সবদর গাজী
হয়তোবা এই আমি। আসলে সক্কলই ভোজবাজি।
কী যেন লাফিয়ে ওঠে অগোচরে মনের ভেতর-
অত্যন্ত উজ্জ্বল কিছু, কী করে ভাবব তাকে পর?
ত্রাণসামগ্রীর ঝলকানি? সে যে সু-স্বপ্নের মতো,
একটি বিশাল মাছ সামুদ্রিক, শূন্যে কেলিরত,
এখনও মাছের চিন্তা! ভুলি না জালের কীর্তি, মাছ
আমাকে উড়িয়ে নেয় মেঘে, রাঙা গাঙে, দেখি নাচ
একজন মৎস্যরমণীর, আমাকে কোমল ডাকে।
প্রকৃত আহার্য নয় তারা, স্মৃতিবৎ ভেসে থাকে।
আমি তো জলেরই লোক, চুপচাপ থাকা দায় ঘরে,
ডিঙি বেয়ে বার বার যাব আমি সুনীল সাগরে।